নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শুরু থেকেই আধিপত্য। মাঝে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেললেও শিরোপা পথে কক্ষ্যচ্যুত হয়নি আবাহনী লিমিটেড। এক মৌসুম পর আবারও ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ঝা চকচকে ট্রফিটা ফিরেছে আকাশী-নীল শিবিরে। কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনতো বটেই, দলটিকে চ্যাম্পিয়ন করার পেছনে মাঠের কারিগর বল হাতে মাশরাফি বিন মুর্তজা আর ব্যাট হাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই প্রভাব পড়েছে আসরের শীর্ষ পাঁচেও। রানের মেলায় সবার উপর শান্ত, উইকেটের টালিতে মাশরাফির ধারে-কাছেও নেই কেউ।
এবারের উইকেট ছিল রান প্রসবা। এসেছে পঞ্চাশটি সেঞ্চুরি। সাতশোর বেশি রান করেছেন চারজন। আরও পাঁচজন করেছেন ছয়শর বেশি রান। তাদের সবাইকে ছাপিয়ে সবচেয়ে বেশি ৭৪৯ রান নাজমুল হোসেন শান্তর। আবাহনীর শিরোপা জেতায় সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ছিল শান্তর ব্যাট। ১৬ ম্যাচের সবগুলোতেই খেলেছেন তিনি। এই বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের গড়টাও বেশ হৃষ্টপুষ্ট। ৫৭.৬১ গড়ে ৭৪৯ রান করতে চারটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। দলের চাহিদা মিটিয়ে বেশ আগ্রাসীও ছিল তার ব্যাট। ৯৭.৫২ স্ট্রাইকরেট দিচ্ছে তারই প্রমাণ। চার সেঞ্চুরির সবচেয়ে বড় ইনিংসটি ১৫০ রানের।
শান্তর পরের জায়গাটিও আবাহনীর আরেকজনের দখলে। চ্যাম্পিয়নদের হয়ে ইনিংস ওপেন করতে নেমে চওড়া ছিল এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট। তিনিও সবগুলো ম্যাচ খেলে শান্তর চেয়ে মাত্র ৫ রান কম করেছেন। ৪৯.৬০ গড়ে ৭৪৪ রান করতে এনামুলের স্ট্রাইকরেট ৮৯.৫৩। ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার নাঈম ইসলাম আছেন তিনে। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের অধিনায়ক ১৬ ম্যাচে ৫৫.৩৮ গড়ে করেছেন ৭২০ রান। থিতু হতে কিছুটা সময় নেন বলে পরিচিতি পাওয়া নাঈমও মোটামুটি রানে বলে পাপ্লা দিয়েছেন। তার স্ট্রাইকরেট ৮৭.৩৭। এবার সাতশোর বেশি রান করাদের মধ্যে কেবল ফজলে মাহমুদেরই অভিজ্ঞতা নেই জাতীয় দলে খেলার। প্রাইম দোলেশ্বরের এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ১৬ ম্যাচে করেছেন ৭০৮ রান। ৪৭.২০ গড়ে এই রান করতে কিছুটা মন্থর ছিল তার ব্যাট।
মাহমুদের পরের নামটি মোহাম্মদ আশরাফুলের। কলাবাগান ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ১৩ ম্যাচ খেলে ৬৬.৫০ গড়ে ৬৬৫ রান করেছেন তিনি। তবে রান তোলায় আশরাফুলের ব্যাটও ছিল বেশ মন্থর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো নিষিদ্ধ সাবেক এই অধিনায়কের স্ট্রাইকরেট ৭৪.১৩। লিগে সবচেয়ে বেশি ৫টি সেঞ্চুরি অবশ্য এসেছে তার ব্যাট থেকেই।
রান প্রসবা উইকেটেও বোলিংয়ে আলো কেড়েছেন মাশরাফি। সবার উপরে থাকবেন তা অনুমিতই ছিল। আগ্রহ ছিল লিগের শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবেন ওয়ানডে অধিনায়ক! লিগের শেষ দিন পর্যন্ত বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে গেছেন। এই বয়সেও সব আলো কেড়ে নিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। এবারের লিগে মাশরাফি অধিনায়কত্ব না করলেও দলের সাফল্যে সবথেকে বড় অবদান তার। বল হাতে নিয়মিত পেয়েছেন উইকেট। ১৬ ম্যাচে ৩৯ উইকেট নিয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। ইকোনমি ৪.৪২ এবং গড় ১৪.৬১। প্রিমিয়ার লিগে ২০টি উইকেট পেয়েছেন এমন বোলারদের গড় বোলিংয়ে তালিকায় মাশরাফির নাম সবার উপরে। ওয়ানডে অধিনায়ক এখনও নিজের জাত চিনিয়ে যাচ্ছেন দেশের ক্রিকেটে।
উইকেট সংখ্যায় মাশরাফির ধারের কাছেও কেউ নেই। মাশরাফির থেকে ১০ উইকেট কম পেয়েছেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের স্পিনার আসিফ হাসান। আসিফের সমান ২৯ উইকেট পেয়েছেন আরও দুজন। পেসার শহীদ দীর্ঘদিন পর লাইমলাইটে এসেছেন। রূপগঞ্জকে রানার্সআপ করাতে বড় ভূমিকা শহীদ ও আসিফের।
এছাড়া প্রাইম দোলেশ্বরের অধিনায়ক ফরহাদ রেজাও পেয়েছেন ২৯ উইকেট। দুই তরুণ কাজী অনিক মোহামেডানের হয়ে ২৮টি এবং শেখ জামালের রবিউল ২৭ উইকেট পেয়েছেন। ২৪টি করে উইকেট পেয়েছেন ব্রাদার্সের সোহরাওয়ার্দী শুভ, অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের শফিউল ইসলাম এবং প্রাইম দোলেশ্বরের আরাফাত সানী।
শান্ত যেমন লিগের সর্বাধিক রান সংগ্রাহক, উইকেট নেওয়ায় তেমনি মাশরাফি। বিপিএলেও রংপুর রাইডার্সে শান্তকে পেয়েছিলেন তিনি। এবার প্রিমিয়ার লিগে দুজনেই খেলেছেন আবাহনীর হয়ে। প্রতিশ্রæতিশীল বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে নিয়ে জাতীয় দলের ভাবনায় তাড়াহুড়ো করতে চান না মাশরাফি ‘শান্তকে জাতীয় দলে চিন্তা করা খুব দ্রæত হয়ে যাবে। ওর কাছ থেকে যেটা প্রত্যাশা সেটা যেন হারায় না যায়।’
ঘটনাচক্রে জাতীয় দলের হয়ে অবশ্য একবার খেলা হয়ে গেছে শান্তর। নিউজিল্যান্ড সফরে অভিজ্ঞতা বাড়াতে দলের সঙ্গেই ছিলেন। স্কোয়াডে ইনজুরির সমস্যা প্রকট হওয়ায় উপায়ান্তর না দেখে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয় টেস্টে। খেলেছেন ওই একটাই টেস্ট। মাশরাফির ধারনা সব ঠিক থাকলে আগামীতে জাতীয় দলের ব্যাটিং কান্ডারি হতে পারেন শান্ত। তবে তার আগে নিজেকে তৈরি করা, পরিচর্যা করার সুযোগ কাজে লাগাবেন বলে বিশ্বাস ওয়ানডে অধিনায়কের, ‘আমি নিশ্চিত শান্ত লম্বা রেসের ঘোড়া। বিপিএলে মোটামুটি পারফরম্যান্স করেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে করছে। এটা ওর জন্য সেরা সময় নিজেকে পরিচর্যা করা এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে তৈরি করার। এখান থেকে যেন আরেক ধাপে নিয়ে টিকে থাকতে পারে, তেমন ভাবে প্রস্তুত হতে হবে। যাতে দীর্ঘদিন দেশকে সার্ভিস দিতে পারে। স্বপ্নটা যেন ছোট না হয়।’
প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটের সেরা ৫
ব্যাটসম্যান
ইনিংস রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
শান্ত (আবাহনী) ১৬ ৭৪৯ ১৫০* ৫৭.৬১ ৯৭.৫২ ৪/২
বিজয় (আবাহনী) ১৬ ৭৪৪ ১২৮ ৪৯.৬০ ৮৯.৫৩ ২/৪
নাঈম (রূপগঞ্জ) ১৫ ৭২০ ১১৬* ৫৫.৩৮ ৮৭.৩৭ ১/৬
ফজলে (দোলেশ্বর) ১৬ ৭০৮ ১২০* ৪৭.২০ ৭৩.৪৪ ২/৩
আশরাফুল (কলাবাগান) ১৩ ৬৬৫ ১২৭ ৬৬.৫০ ৭৪.১৩ ৫/১
বোলার
ইনিংস উইকেট সেরা গড় ইকো. ৪/৫
মাশরাফি (আবাহনী) ১৬ ৩৯ ৬/৪৪ ১৪.৬১ ৪.৪২ ২/২
আসিফ (রূপগঞ্জ) ১৬ ২৯ ৪/২৩ ২২.৬৫ ৪.৪৭ ১/০
শহিদ (রূপগঞ্জ) ১৬ ২৯ ৪/২৬ ২৬.৫৫ ৫.১৬ ২/০
ফরহাদ (দোলেশ্বর) ১৬ ২৯ ৪/৩৭ ২৬.৮৬ ৬.০৬ ২/০
অনিক (মোহামেডান) ১১ ২৮ ৬/৪৯ ১৯.১০ ৫.৪১ ১/২
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।