Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুরআনের ক্ষুদে হাফেজরা পাগড়ির বদলে পেল বোমা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

একদল শিশু সুবিশাল কুরআন শরিফ মুখস্থ করেছে। তাদের এ কীর্তিতে খুশি শিক্ষকরা। খুশি গর্বিত বাবা-মায়েরাও। রীতি অনুযায়ী, এ ক্ষুদে হাফেজদের মুখস্থ করার জন্য সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। হাফেজ হওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ মাথায় পাগড়ি পরানো হবে। কিন্তু ১১-১২ বছরের শিশুরা কোনো সংবর্ধনা পায়নি। মাথায় পাগড়ি পরানো হয়নি। বরং সংবর্ধনাস্থলেই তাদের ওপর বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। আফগানিস্তানের কুন্দুজ প্রদেশের একটি মাদ্রাসায় এমন বর্বরোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে প্রায় ১৫০ ক্ষুদে হাফেজ প্রাণ হারিয়েছে। তাদের শিক্ষক ও অভিভাবকরাও রয়েছেন লাশের সারিতে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে- নিহতের সংখ্যা অন্তত ২০০। গত সোমবার এই বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। তবে গত চার দিনেও এ ঘটনার রেশ ছড়িয়ে আছে সাইবার জগতে। দেশে দেশে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ ক্ষুদে হাফেজদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। তাদের মন খারাপ ও বেদনার কথা ব্যক্ত করছেন সামাজিক মাধ্যমে। ঘটনার বিষয়ে আফগান সিনেটর আব্দুল্লাহ কারলক বলেন, আকুন্দাজা গজর মাদ্রাসায় কুরআনে হাফেজদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে। তখন সেখানে কয়েকশ’ লোক উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমি যা শুনেছি, তাতে দুই শতাধিক লোক সেখানে নিহত হয়েছেন। নিহতরা সেখানকার শিক্ষক, ছাত্র ও বেসামরিক লোক ছিল। ওই সিনেটর আরও বলেন, সামরিক সংঘাত থেকে নিরপরাধ লোকজনকে রক্ষায় সব দলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কুন্দুজের প্রাদেশিক কাউন্সিলর সাফিউল্লাহ আমিরি বলেন, বিমান হামলায় বহু বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। আলেম ও শিক্ষার্থীরা সেখানে ছিলেন। নিরপরাধ লোকজনকে কেন হত্যা করা হয়েছে, আমরা তার প্রতিবাদ জানিয়েছি। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনারেল মোহাম্মদ রাদমানিশ বলেন, তারা তালেবানের একটি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছেন। দাস্তি আর্চি জেলার ওই স্থানটিকে তালেবান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান থেকে আসা বিদেশি যোদ্ধারা সেখানে নিহত হয়েছেন। কুন্দুজ শহর ও তাজিকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি দাস্তি আর্চি জেলা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কুরআনে হাফেজদের ওই সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে বেসামরিক লোকজন, শিক্ষার্থী, তাদের পরিবার ও আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী তাদের ওপর ওই ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়েছে। মোহাম্মদ আব্দুল হক নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সেখানে যেসব শিশু শিক্ষার্থী ছিল, তাদের বয়স ১১-১২ বছরের মধ্যে হবে। কুরআন হেফজ করায় তাদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। বোমা হামলার পর হাসপাতালের বাইরে সন্তানহারা মায়েদের আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। তাদের আশপাশে যারা দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের সবাই কাঁদছিলেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হামলায় শতাধিক লোক নিহত হয়েছেন। হাজি গুলাম নামে একজন বলেন, আমি আমার খামারে কাজ করছিলাম। আমি যুদ্ধবিমান দিয়ে মাদ্রাসায় হামলার শব্দ শুনতে পেয়েছি। তালেবান ওই অঞ্চলে সক্রিয় থাকলেও ওই সনদপ্রদান অনুষ্ঠানে কুরআনে হাফেজ শিশুসহ কিশোররা উপস্থিত ছিল। তিনি বলেন, মাদ্রাসার কাছে গিয়ে দেখি বহু কুরআনে হাফেজের লাশ পড়ে আছে। আহতদের দেখতে পেয়েছি। এটি ছিল বিপর্যয়। সব জায়গায় ছিল রক্ত। বহুলোক হামলায় নিহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে ভেসে বেড়ানো অধিকাংশ লাশের ছবি ছিল শিশুদের। ওই ছবির ক্যাপশনে লেখা ছিল- আমি সন্ত্রাসী নই। তালেবান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই বিমান হামলায় ১৫০ শিক্ষার্থী, আলেম ও বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। তখন সেখানে তাদের কোনো যোদ্ধা উপস্থিত ছিল না। জেহাদ আখতার নামে একজন টুইটারে লিখেছেন- শিশুরা কুরআনে হাফেজ হওয়ার পর তাদের সংবর্ধনা ও উপহার নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে আফগান সামরিক বাহিনী তাদের বোমা উপহার দিয়েছে। আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহযোগিতা মিশন (ইউএনএএম) জানিয়েছে, ওই ঘটনার তদন্ত করতে তাদের অনুসন্ধানী দল সেখানে গেছে। আফগান সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ওই হামলায় জড়িত ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে যুদ্ধবিমান ও বোমাভর্তি ছোট বিমান চালাতে আফগান সেনাবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ন্যাটো জোটের উপদেষ্টাদের সহায়তায় আফগান বিমানবাহিনী গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। এতে ব্যাপক বেসামরিক লোকজন হতাহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট বলছে, আফগান বিমানবাহিনী এখন উঠতির দিকে রয়েছে। গত ২২ মার্চ তারা ফরাহপ্রদেশে এ-২৯ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে তালেবান লক্ষ্যবস্তুতে লেজাররশ্মি নিয়ন্ত্রিত বোমা ফেলেছে। পাকিস্তানে নিয়োজিত আফগান রাষ্ট্রদূত ওমার জাকিলওয়াল এ হামলার নিন্দা জানিয়ে টুইটারে বলেছেন, দাস্তি আর্চিতে বিমান হামলায় ৭০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই শিশু। আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ লোক। সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। আল-জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট।



 

Show all comments
  • Mohidul Islam ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:৫৪ এএম says : 0
    কোথায় আজ বিশ্ব মানবতা........??? কোথায় সেই মানবতাবাদী কর্মীরা..???
    Total Reply(0) Reply
  • Kawsar Ahmed Srijan ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:১৪ এএম says : 0
    অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজ বিশ্ব মিডিয়া নিরব ভূমিকা পালন করছে!! অথচ অন্য উপসানালয়/ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হলে বিশ্বে আজ তোলপাড় হয়ে যেত। ওদের'ত পৃথিবীটা বুঝার ভালকরে বয়স হয়নি, ওদের অধিকাংশই শিশু, তাদের উপর এই নৃশংস হামলা!! শিশু হত্যা মহাপাপ এটি'ত সবধর্মেই স্বীকৃত, ও আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। আজ বাংলাদেশের কথিত সমাজ কোথায়? যারা একটি হাতির মূত্যুতে বঙ্গবাহাদুর উপাধি দিয়ে পুরো দেশকে তোলপাড় করে ফেলেছিল। কোথায় মানবঅধিকার নামের পুতুলগুলো? তোমাদের চেতনা কি এখন জাগ্রত হয় না?
    Total Reply(0) Reply
  • Kawsar Alam ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:১৫ এএম says : 0
    আগ্রাসীদের প্রতি তীব্র ঘৃনা এবং নিহত শিশুদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি।আল্লাহ্পাক তাদেরকে প্রকৃত শহীদি মর্যাদা দান করে জান্নাতবাসী করুন। আমীন....
    Total Reply(0) Reply
  • Hm Jamal ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:১৬ এএম says : 0
    হে দয়াময় আল্লা তুমিই মযলুমের একমাত্র সাহায্যকারী । হে আল্লাহ্ তুমি মাসুম বাচ্চাদের রহমত করো ।
    Total Reply(0) Reply
  • মাও: মুঈনুদ্দিন ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:৩৯ পিএম says : 0
    পবিত্র কুরআন শরীফ হেফজ সম্পন্ন কারী ও পূতপবিত্র শিশু দের কী অপরাধ ছিল?? আল্লাহ্ পাকের কালাম কে বুকে ধারণ করা কি তাদের অপরাধ??? আজ বিশ্ব মানবতা কোথায়??? মানব ব‍্যবসায়িরা কোথায়،? যারা একটা কুকুরের জন্য মায়া কান্না করতে করতে মিডিয়ায় তোলপাড় তুলে।আজ শত শত হাফেজ এ কুরআন ও নিরপরাধ মানুষ কে নি্র্মম ও নিষ্ঠুর ভাবে হত‍্যা করার পর ও তাদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। যারা এই নিষ্পাপ শিশুদের রক্তের বন্যা বাহিয়েছে , তাদের এর ফল ভোগ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আনোয়ার হোসেন ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১:০৩ পিএম says : 0
    পৃথিবীর বুক থেকে অসংখ্য কুরআনের হাফেজ বিদায় নিল আল্লাহ তুমি ওদের মা বাবাকে ধৈর্য্যধারন করার শক্তিদাও।
    Total Reply(1) Reply
    • Masud Miah ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ২:৫৪ পিএম says : 4
      All tumi tadar Uttam jaja dan koro.
  • Shakil Hossen ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১:০৪ পিএম says : 0
    Allah Tala tader k jannat dan koron, Amin
    Total Reply(0) Reply
  • abdur rahim ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৭:৩২ পিএম says : 0
    আজ,বিশ্ববাসী বুজতে পেরেছে জঙ্গীকারা, আপনি যদি মায়ানমারে ফলোকরেন তাহলে দেখবেন সেখানে বৌদ্দ দের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, আর আমিরিকার কথাত বলা লাগেনা, তারা সব সময় এদেশ ওদেশ সনত্রাসসৃষ্টিকারী, সবকিছু কি কমেন্টে বলাজায়।
    Total Reply(0) Reply
  • MD JAHIDUL ISLAM ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৮:০১ পিএম says : 0
    HO ALLAH TUMI SOKOL HAFEZDAR K UTTOM JAJA DAN K R . ,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগান


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ