Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইয়েমেনের বিদ্রহীদের অস্ত্রসস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে ইরানের প্রতি ব্রিটেনের আহবান

| প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সউদী নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর সামরিক হস্তক্ষেপ ৪র্থ বৎসরে পদার্পনের প্রেক্ষাপটে ব্রিটেন গতকাল ইয়েমেনে অস্ত্র না পাঠানোর জন্য ইরানের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছে এর পরিবর্তে সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে নিজেদের প্রভাব খাটানোর। ইরান সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এবং সরকারের সমর্থন সউদী আরব ইয়েমেনে বিমান হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। হুতি উপজাতি গোষ্টিদের ক্ষেপনাস্ত্র ও ড্রোন সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ার জন্য জাতিসংঘ বলেছে তেহরান ইয়েমেনের ওপর অস্ত্র সরবরাহের নিষেধাজ্ঞা লজ্ঞন করেছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী পেনি মরড্যর্›ট এক বিবৃতিতে ইরানকে নীতি পরিবর্তনের আহবান জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, ইরান প্রকাশ্যে যে কথা বলছে তারা ইয়েমেনে রাজনৈতিক সমাধানকে সমর্থন করে। একথা সত্য হলে তাকে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে কেননা এর ফলে সংঘাত দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। তারা আরো বলেন, আমরা প্রশ্ন রাখছি ইরান কেন ইয়েমেনি জনগণের কল্যাণে সংঘাত চিরকালের জন্য বন্ধের লক্ষ্যে তার প্রভাব না খাটিয়ে এমন একটি দেশে তার রাজস্ব যতেষ্ট পরিমান ব্যয় করছে, যে দেশটির সংগে তার ঐতিহাসিক বন্ধন বা স্বার্থ নেই। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হুতিরা রাজধানীর সানা থেকে সরকার সমর্থিত বাহিনীকে বহিস্কার করে। আরব উপদ্বীপ অঞ্চলীয় দরিদ্র দেশটির নিয়ন্ত্রন নিতে অগ্রসর হয়।
তিনবছরের এই লড়াই দুই পক্ষকেই পর্যুদস্ত করে তুলেছে। একটি যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের তিনটি সংস্থার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। লড়াইয়ের পর সরকারপন্থী বাহিনী এবং দক্ষিণাঞ্চলের সুন্নি উপজাতীয় গোত্রগুলো বিদ্রোহীদের এডেনে আসা ঠেকিয়ে দিয়েছে। ২০১৫ সালে অগাস্টে এডেনে সউদী কোয়ালিশন বাহিনী অবতরণ করে এবং হুতিদের তাড়িয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট হাদি নির্বাসনে থাকলেও, তার সরকার অস্থায়ীভাবে এডেনে কার্যক্রম শুরু করে। তবে হুতিরা সানা এবং টিয়াজে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং সেখান থেকেই সউদী আরবে মর্টার আর মিসাইল ছুড়ে মারছে। ২০১৭ সালে নভেম্বরে রিয়াদে ইয়েমেনের মিসাইল পড়ার পর দেশটির চারদিকে অবরোধ জোরালো করে সউদী আরব। তবে জাতিসংঘ বলছে,এর ফলে দেশটিতে কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে । ২০১৭ সালের নভেম্বরে সানার বড় মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে বহু মানুষ হতাহত হয়। মি. সালেহ তখন সউদী আরবকে প্রস্তাব করেন যে, তারা যদি অবরোধ তুলে নেয় আর ইয়েমেনে হামলা বন্ধ করে, তাহলে নতুন সম্পর্ক হতে পারে। হুতিরা পাল্টা জবাবে তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের অভিযোগ আনে যে, তিনি এই জোটে কখনোই বিশ্বাস করতেন না। হুতিরা সানার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য অভিযান শুরু করে।
সংক্ষেপে, ইয়েমেনের পরিস্থিতি হলো, যেমনটা জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব-সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়। গত তিনবছরে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। দেশটির ৭৫ শতাংশ মানুষের জরুরী মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। অন্তত সোয়া কোটি মানুষের বেচে থাকার জন্য জরুরী খাদ্য সহায়তা দরকার। প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের জানা নেই, তাদের পরবর্তী বেলার খাবার জুটবে কিনা। পাঁচ বছরের নীচের ৪ লাখ শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে, যা তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে। দেশটিতে স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়েছে, কলেরা আর ডিপথেরিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। আর দুপক্ষের এই বিরোধে সুযোগ নিচ্ছে আল কায়েদা ইন দি আরব পেনিনসুলা আর ইসলামিক স্টেট গ্রুপ। তারা দক্ষিণে বেশ কিছু স্থান দখল করে নিয়েছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দাবি করে, ১৯৯০ সালে যে উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের যে ইউনিয়ন তৈরি হয়, সেটি ভেঙে আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করা হবে। এ নিয়ে মি. হাদির পক্ষের সৈন্যদের সঙ্গে তাদের বিরোধ তৈরি হয়। এ বছর জানুয়ারিতে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলার পর উত্তেজনা আরো বেড়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী আহমেদ বিন ডাগারের পদত্যাগও দাবি করেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এডেনের সরকারি দপ্তর আর সামরিক ঘাটিগুলোর নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ফলে এই পরিস্থিতি সউদী জোটের মধ্যেও জটিলতার তৈরি করেছে। ইয়েমেনে যা কিছুই ঘটছে, তা যেন আঞ্চলিক দেশগুলোরই ব্যাপার। তবে দেশটি অস্থিরতার মধ্যে থাকলে তা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য হামলার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। ইয়েমেনের আল কায়েদাকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন বলে বলছে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কারণ তাদের প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আছে। তবে ইয়েমেনের এই সংকটকে সউদী আরব আর ইরানের মধ্যে আঞ্চলিক ক্ষমতার লড়াই হিসাবেও দেখা হচ্ছে। কৌশলগত ভাবে ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি বাব আল-মানডাবের ওপর বসে আছে, যা রেড সি আর গালফ অফ এডেনের সংযোগস্থল। এখান থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেলের সরবরাহ হয়ে থাকে। সূত্র : এএফপি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়েমেন


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ