Inqilab Logo

বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০ ভাদ্র ১৪৩১, ২৯ সফর ১৪৪৬ হিজরী

কুড়িগ্রামের চিকিৎসকের অবহেলায় যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ

লাশ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাক্তারসহ কর্মচারীদের ওপর হামলা

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামের খান ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে পায়ের অপারেশন করার সময় চিকিৎসকের অবহেলায় মঞ্জরুল ইসলাম (১৯) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ক্লিনিকের মালিক, কর্তব্যরত ডাক্তার ও কর্মচারীদের মাপপিট করার ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেলে অর্থোপেডিক্স সার্জন ডাঃ শহিদুল আলম রানার হক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের চেম্বারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়া পা দেখাতে যায় কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার কাঠালবাড়ী ইউনিয়নের জোতগবরধন গ্রামের চাঁদ মিয়ার ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম। এসময় ডাঃ শহিদুল আলম রানা আহত পায়ে অপারেশন করে প্লেট লাগাতে হবে বলে রোগীকে খান ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের কথামত শুক্রবার সন্ধ্যায় খান ক্লিনিকে ভর্তি হয় মঞ্জুরুল ইসলাম। পরে ডাঃ শহিদুল আলম রানা হক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের চেম্বারে রোগী দেখা শেষ করে গতকাল রাত ১টার দিকে খান ক্লিনিকে রোগীর অপারেশন করতে আসেন। রাত ২টার পর এ্যানেস্থেশিয়া সার্জন ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম রোগী মঞ্জুরুল ইসলামকে অবশের ইনজেকশন পুশ করার পর ডাঃ শহিদুল আলম রানা রোগীর পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে পায়ে প্লেট লাগানোর প্রস্তুতি নেন। কিন্তু রোগীর পা পুরোপুরি অবশ না হওয়ায় রোগী চিৎকার করতে করতে নিস্তেজ হয়ে মারা যায়। এসময় রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি ডাক্তার নিশ্চিত হতে পেরে রোগীর বাবা চাদ মিয়াসহ স্বজনদের পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে ঔষধ আনতে পাঠিয়ে ডাক্তার ও কর্মচারীরা পালানোর চেষ্টা করে। ঔষধ নিয়ে ফিরে স্বজনরা অপারেশন থিয়েটারের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে ঔষধ দেয়ার জন্য ডাকাডাকি শুরু করে। কিন্তু ভিতর থেকে কোন সাড়া না মেলায় রোগীর স্বজনদের সন্দেহ হয় এবং এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে মঞ্জুরুল ইসলামকে অপারেশন থিয়েটারে মৃত অবস্থায় দেখতে পায় এবং চিকিৎসকসহ কর্মচারীদের অপারেশন থিয়েটারের পিছনের জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখে। এসময় ক্ষিপ্ত স্বজনরা চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ধরে মারপিট করে। এক পর্যায়ে ক্লিনিকের মালিক ক্লিনিকে আসলে নিহতের বাবা লোহার রড নিয়ে তাকে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডাঃ শহিদুল আলম রানার সাথে নিহতের পরিবারের সমঝোতা হওয়ায় পুলিশি পাহাড়ায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ক্লিনিক থেকে ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহতের বাড়িতে লাশ পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর খান ক্লিনিকের চিকিৎসক ডাঃ শহিদুল আলম রানা, ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম, ক্লিনিকের মালিক জুননুরাইন শামীম, ওটি বয় হাফিজসহ ক্লিনিকের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মোবাইল বন্ধ রেখে গা ঢাকা দেয়। ডাঃ শহিদুল আলম রানা ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। তিনি প্রতি শুক্রবার এবং শনিবার কুড়িগ্রামে এসে প্রাইভেট প্রাকটিস করেন। খান ক্লিনিকের ম্যানেজার মোঃ ফারুক আহমেদ জানান, রোগীর পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল বলেই ডাক্তার ব্যান্ডেজ খুলে এ্যানেস্থেশিয়ার পর পায়ে প্লেট না লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং ক্লিনিক থেকে নেমে আসে। এরপর হঠাৎ করে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে আবারো অপারেশন থিয়েটারে যায়। কিন্তু এর মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর থানার এসআই মো: মিন্টু মিয়া জানান, রোগী কখন মারা গেছে সেটা জানা নেই। তবে রাত আড়াইটার দিকে থানা থেকে সেখানে ফোর্সসহ আমাকে পাঠানো হয়। আমরা রোগী মঞ্জুরুল ইসলামকে মৃত দেখতে পাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনার শোনার পরপরই আমি ক্লিনিকে যাই। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক, নার্স কাউকে দেখতে পাই না। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করে রোগীর মৃত্যুর আসল কারণ বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হামলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ