Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চিঠিপত্র

| প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং প্রত্যাবাসন চুক্তি
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে ২৫ আগষ্টের পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে এবং ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা আসে মোট ৭৩ হাজার। ঠিক তার পরের সপ্তাহে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৯০ হাজার জনে। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯ হাজার জনে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর সেটা ৫ লাখ ৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়। উত্তর রাখাইনের তিনটি এলাকা মংডু, রাচিডং ও বুথিডং থেকে ৯০ শতাংশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছে। ২০১৬ সালের এক হিসাব অনুসারে রাখাইনে রোহিঙ্গা ছিল ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮ জন। ২৫ আগষ্টের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা এসেছে ৬ লাখ ৮৮ হাজার জন। বর্তমানে রাখাইনে রোহিঙ্গা আছে ৭৯ হাজার ৩৮ জন। বাংলাদেশে নতুন ও পুরোনো রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখের অধিক। (১৩ ফাগুন ১৪২৪, প্রথম আলো)
বিগত ৬ মাসে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চিএ এটি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ব্যপারে সরব থাকলেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কোন স্থায়ী পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা সম্ভব হয় নি। আশার কথা হচ্ছে, বিগত বছরে অর্থৎ ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের পক্ষে স্টেট কাউন্সিলের দফতরের মন্ত্রী খিও তিন্ত সোয়ে। (২৪ নভেম্বর ২০১৭, যুগান্তর) সামপ্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি অপেক্ষাকৃত ধীরগতির। সমপ্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে ৮ হাজার ৩২ জন রোহঙ্গার তালিকা দেয়। এখন দেখার বিষয় কবে নাগাদ মিয়ামনার তাদের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করবে। (১৩ ফাগুন ১৪২৪, প্রথম আলো) প্রত্যাবাসনের কথা বললেও সামপ্রতিক বিভিন্ন ঘটয়ায় প্রতীয়মান হয় মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের ব্যপারে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতা এখনো বন্ধ হয়নি। সামপ্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সেটাই প্রমাণ করে। গত ১০ দিনে রোহিঙ্গা নতুন করে রোহিঙ্গা এসেছে ১ হাজার ২৩ জন। তাছাড়া শূণ্যরেখায় অবস্থানরত সারে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন যাবৎ করলেও মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নিতে কালবিলম্ব করছে।
বিগত করেক মাসে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশ্রয় গ্রহণ করেছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে। এই দুটি উপজেলায় স্থানীয়দের তুলনার রোহিঙ্গার সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। উখিয়া ও টেকনাফের মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ৭২ হাজার জন এবং নতুন-পুরাতন মিলিয়ে দুটি উপজেলায় অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ। যখন কোন অঞ্চলে স্থানীয় জনগণের তুলনায় শরণার্থী বা বহিরাগত জনগোষ্ঠীর পরমাণ বেশি হয় তাহলে স্থানীয় পর্যায়ের সামাজিক ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক ব্যযস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং পরিবেশ হুমকির সন্মুখীন হতে বাধ্য। কক্সবাজারেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। বিরুপ প্রভাব পড়ছে উখিয়া ও টেকনাফের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং পরিবেশ সহ প্রত্যেকটি ক্ষেএে। ইতোমধ্যেই উখিয়ার কুতুবপালং এলাকায় পাহাড় কেটে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে রোহিঙ্গা বসতি।
বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ভাবে মিয়ানমারের উপর কঠিন কোন চাপ প্রয়োগ করতে পারছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র রাশিয়া এবং চীনের অব্যাহত সমর্থন পাচ্ছে মিয়ানমার। এর ফলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কঠিন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দেশগুলোর আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ান এর গুরুত্বপূর্ণ দুটি সদস্য রাষ্ট্র মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সহানুভূতি মিয়ানমারের পক্ষে। সমপ্রতি কক্সবাজারের নারী ও শিশুদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য নোবেলজয়ী তিন নারী বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। তারা হলেন ইরানের শিরিন এবাদি, নর্দান আয়ারল্যান্ডের ম্যারিড ম্যাগুয়ের এবং ইয়েমেনের তাওয়াক্কল কারমান। ‘নোবেলজয়ী নারীদের উদ্যোগ’ সংগঠন এই সফরের আয়োজন করেছে। পরিদর্শন শেষে তারা কিছু সুপরিশ প্রদান করবে।
চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে পরবর্তী কয়েক মাসে আগত ৮৭ হাজার এবং ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট পর্যন্ত আগত প্রায় ৬ লাখ ৮৮ হাজার সহ মোট ৭ লাখ ৭৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার। বাংলাদেশ সরকার মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল। প্রত্যাবাসনের সময়ও মানবিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। আশা করি, প্রত্যাবাসন চুক্তিটি দ্রæত বাস্তবায়ন করা হবে।
ফাহিম আহমেদ
চতুর্থ বর্ষ, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন