পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড:
যে জাতির মেরুদন্ডের ভিত যত বেশি মজবুত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষা মানুষের নৈতিক ও আত্মিক শক্তি জোগায়। শিক্ষা মানুষকে নৈতিক, মানবিক ও অসা¤প্রদায়িক হওয়ার শিক্ষা দেয়।
শিক্ষিত মানুষই দেশ-জাতির নেতৃত্ব দেয়। অথচ শিক্ষার মতো একটি মৌলিক বিষয় বাংলাদেশে বিপর্যস্ত। প্রশ্ন ফাঁস, ভর্তিবাণিজ্য, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থা। আকাশ-সংস্কৃতির কল্যাণে এসএসসি-এইচএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন আজ ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় জীবনে গভীর অন্ধকার বয়ে আনছে। এটা বাংলাদেশের জন্য এক অশানিসংকেত। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্রের সমাধান করে পরীক্ষা দেয়া- এ কেমন সংস্কৃতি শুরু হল দেশে? মন্ত্রী-এমপি-দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাই প্রশ্ন ফাঁস সম্পর্কে অবগত আছেন। যদিও শিক্ষামন্ত্রী আগে অস্বীকার করে আসছিলেন বিষয়টি। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কোনো পদক্ষেপই বাস্তবায়ন হয়ে ওঠেনি এখনও।
আসলে ফেসবুক-টুইটারসহ সব যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা সম্ভব নয়। পরীক্ষায় ২০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল ফোন পেলে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শতাধিক মোবাইল নম্বর শনাক্ত করে জড়িতদের ধরার চেষ্টা করছে। পরীক্ষা চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে বাধা দিতে পরীক্ষা শুরুর ২.৩০ ঘণ্টা আগে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। অবশ্য পরে তা বাতিল করা হয়। এছাড়াও পরীক্ষা শুরুর মাসে ফেসবুক বন্ধ রাখার প্রস্তাবও করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। একশ্রেণীর প্রতারক ও সুযোগসন্ধানী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করছে। এমনকি ঘোষণা দেয়া হয় কার কার প্রশ্ন লাগবে! এ তো ধৃষ্টতা!
আমরা অবাক হই না, যখন পঞ্চম শ্রেণীর কোনো শিক্ষার্থী বলে, আম্মু ফেসবুকে লগইন করে দেখব আজ গণিত প্রশ্ন পাওয়া যায় কিনা? আমরা ড়েড়মষব-এ কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত খুঁজি। আর নতুন প্রজন্ম ড়েড়মষব সার্চ করে প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় কিনা! আমরা লক্ষ করেছি, চারজন আইনজীবী গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রশ্নপত্র ফাঁসে তদন্ত ও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আইন প্রণয়নে আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেছেন। আশা করি চলমান এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেই প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ফাঁসকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রেখে আইন করা হবে। প্রতিনিয়ত প্রশ্ন ফাঁসে সচেতন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন। আমরা এমনই কয়েকজনের মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম- প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে কী কী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
বাংলাদেশ অযুত সম্ভাবনার এক সোনালি দেশ। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও উন্নতির স্বর্ণশিখরে উঠতে পারিনি আমরা। এর মূল কারণ আমাদের অপরিকল্পিত শিক্ষা কাঠামো ও শিক্ষাব্যবস্থা। এভাবে দেদার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে আরও কয়েক শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি কাক্সিক্ষত মানে উন্নীত হতে পারবে না। সমৃদ্ধ দেশ গঠনে প্রয়োজন দক্ষ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক ও সুশিক্ষিত জনসমষ্টি। এভাবে প্রশ্ন ফাঁস হতে থাকলে সেই জনসমষ্টি আমরা কোথায় পাব?
মহিউদ্দিন রাব্বানি : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।