পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী বাজেটের পর পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হবে বলে জানিয়েছেন মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। তিনি বলেন, শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেছি।
তিনি আমাকে বলেছেন, একসাথে এতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সম্ভব নয়। তবে পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হবে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বাকী রয়েছে তা আগামী বাজেটে চেষ্টা করা হবে। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, বহির্দেশীয় কোন শক্তির সহায়তায় যাতে আমাদের দেশে স্থিতিশীলতা আনার মতো অবস্থা সৃষ্টি না হয়। সেটা না হওয়ার জন্য দেশকে স্থিতিশীল রাখার জন্য জমিয়াতুল মোদার্রেছীন একটি বিশাল ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
সারা দেশের মাদরাসা শিক্ষকরাও সাথে থাকবে। মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় গতকাল (রোববার) রাজধানীর মহাখালিস্থ গাউসুল আযম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের সময়ে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে কাজী কেরামত আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাদরাসা ও ধর্মীয় শিক্ষা যুগোপযোগী করতে তিনি চেষ্টা করছেন। যেসব ক্ষেত্রে জনবল সঙ্কট রয়েছে। সেখানে জনবল কাঠামো খুব দ্রæত করা হবে। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকার ধর্মের কথা বললেও সারাদেশে একটি ভবনও তৈরি করেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মাদরাসার জন্য নতুন নতুন ভবন বানিয়েছে। আরও বেশকিছু অবকাঠামো নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাও অন্তর্ভূক্ত করা হবে জানিয়ে কেরামত আলী বলেন, মাদরাসায় কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে। এতে করে আর কোন শিক্ষিত বেকার থাকবে না। খুব অল্প সংখ্যক ইবতেদায়ী শিক্ষক এখন সামান্য বেতন পাচ্ছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইবতেদায়ীতে বেতনপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমি কথা বলেছি, তিনি বলেছেন সকল শিক্ষকের বেতন শতভাগ বাড়িয়েছি, এমপিওভূক্তও করেছি। বাকী বিষয়গুলোও হয়ে যাবে।
মাদরাসা শিক্ষার অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আবারও নৌকা মার্কাকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এ দেশে আর ধর্ম নিয়ে রাজনীতি দেখতে চাই না। দেশে শান্তি চাইলে, সন্ত্রাস, জঙ্গীমুক্ত বাংলাদেশ চাইলে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
জমিয়াত সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, এ দেশ আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ এবং মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। তবে কোন কারণে বাংলাদেশে যেনো উগ্রবাদ জায়গা না পায়। মধ্যপ্রাচ্যে যেমনটা হয়েছে। আফগানিস্তান-পাকিস্তানে যেটা ঘটেছে। আফ্রিকাসহ অনেক দেশেই যেটা ঘটে গেছে। বাংলাদেশে যাতে এমন অবস্থার সৃষ্টি না হয় এজন্য সচেতন থাকতে হবে। এর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে আলিয়া ধারার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বর্তমান সরকারের সময়ে মাদরাসা শিক্ষার অগ্রগতির কথা স্বীকার করে জমিয়াত সভাপতি বলেন, বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষার জন্য যা করেছে তা বিগত ১০০ বছরেও হয়নি। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের কাজের জন্য। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার সাথে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী আমাদের কাছের মানুষ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফউল্লাহ যোগ্য ব্যক্তি। তিনি মাদরাসা শিক্ষকদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন। এখন যেটির সবচেয়ে বেশি অভাব সেক্ষেত্রে তিনি ব্যতিক্রম। তিনি খুব বেশি সৎ হিসেবে পরিচিত। তাদের সকলের সহযোগিতায় মাদরাসা শিক্ষা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এসবের সাথেও কাজ করতে হলে একজন মন্ত্রীর সাথে ডাইনামিক সচিব প্রয়োজন।
প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে এসেছেন। তৃণমূলের মানুষ হিসেবে পরিচিত। সাধারণ মানুষ ও মানুষের ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। তবে সমাজের অনেক দূর দেখতে হবে, সমাজকে ঠিক রাখতে হবে। সমাজের ধর্মীয় বিশ্বাস-চেতনা যেন আমরা ত্বরীকত পন্থীদের মতো শান্তিপূর্ণ রাখতে না পারি সেভাবে কাজ করতে হবে।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন শুধু শিক্ষকদের একটি দাবি আদায়ের সংগঠন না। এর সাথে হাজার হাজার দরবার, ৮০ লাখ ছাত্র-ছাত্রী, ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান, লাখ লাখ শিক্ষক একত্রে আছে। আমরা শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। বিনিয়োগের আগে প্রয়োজন স্থিতিশীল অবস্থা। আমরা বড় বড় জনপদ, নগরীকে উগ্রবাদের কারণে ধ্বংস হতে দেখছি। এজন্য উগ্রবাদের বীজ শেষ করে দিতে হবে। উইপোকার ঘর আমরা যেভাবে শেষ করি, সাপের গুহা থেকে যেভাবে সাপকে বের করে আনি সেভাবে উগ্রবাদের বীজকে শেষ করে দিতে হবে। সকলে মিলে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে হবে।
উগ্রবাদী ওয়াহাবি-সালাফিদের কারণে মুসলমানদের বদনাম হচ্ছে মন্তব্য করে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য ওয়াহাবি-সালাফিরা একটি উগ্র মতবাদ তৈরি করেছে। যেটার কারণে সারাবিশ্বে মুসলমানদের বদনাম হচ্ছে। ইসলামের কোন বদনাম নাই, মুসলমানদের কোন বদনাম নাই কিন্তু মুসলমানের উগ্র আচরণের একটা বদনাম আছে। এই আচরণের কারণে বাংলাদেশের মুসলমান ছেলে-মেয়েরা বিদেশে পড়াশুনা করতে যেতে চায় না। অপ্রয়োজনে একটা হয়রানির শিকার হচ্ছে।
আগামীদিনে বাংলাদেশ নেতৃত্বের আসনে বসবে এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশ। ইনশাআল্লাহ, ২০২৫-৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের আরও শক্তিশালী নেতৃত্বে আসীন হবে। এরকম একটা অবস্থায় বাংলাদেশ বিশ্ব নেতৃত্বের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রেডিমেট প্রতিষ্ঠান আলিয়া মাদরাসাগুলো। এ দেশের আলেম সমাজ-মসজিদের ইমাম, খতিব, বড় বড় দরবারের প্রধান, সকলে মিলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রাখার কাজ করছে।
মাদরাসা শিক্ষকদের একক ও অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেল্লাল হোসেন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কে এম ছায়েফউল্লাহ, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, রাজবাড়ি জেলা জমিয়ত নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল এরশাদ মোঃ সিরাজুম মুনির। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জৈনপুরী পীর সাহেব সৈয়দ মোঃ মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা শামসুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম আল মারুফ, অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবু বকর সিদ্দিক, অধ্যক্ষ মাওলানা হাসান মাসুদ, অধ্যক্ষ মাওলানা এ কে এম মনোয়ার আলী, অধ্যক্ষ মাওলানা ড. মোঃ ইদ্রীস আলী, অধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা আতিকুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা মোকাদ্দেসুল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ মাওলানা নূরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ আহমদ চৌধুরী, অধ্যক্ষ মাওলানা জাফরুল্লাহ নূরী, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মোঃ সাদেক। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন পীর সাহেব মুর্শিদনগর আব্দুল হাকিম জিহাদী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।