পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি এমনকি খুনের ঘটনা ঘটছে। গত বৃহস্পতিবার এক রাতেই রাজধানীর তিনটি বাসায় হানা দিয়েছে মটরসাইকেল ডাকাতেরা। বেপরোয়া এই ডাকাতরা এক নিরাপত্তারক্ষীকে খুন করেছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত করেছে আরও তিন নিরাপত্তাকর্মীকে। ঘটনাগুলো ঘটেছে মিরপুর ও খিলগাঁওয়ে রাত তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে। ঐ দিন দুপুরে পশ্চিম নাখালপাড়ায় বাসাভাড়া নেয়ার কথা বলে এক মহিলাকে খুন করা হয়েছে। গত বুধবার দারুসসালাম থানার বসুপাড়ায়র ডি-ব্লকের এক বাড়ির পেছনের খাল থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মহানগর পুলিশ স্বীকার করেছে, এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়েছে। অবৈধ অস্ত্রের মজুদও বাড়ছে। এছাড়া আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকান্ড বেশি বেড়েছে। কিশোর অপরাধী গ্যাংও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পুলিশের এই স্বীকারোক্তিতে বোঝা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলার শোচনীয় অবনতিে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা কতটা নাজুক হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা অবনতি হয়েছে, তা গত দেড় মাসে ৪৫টি খুনের ঘটনা থেকে বোঝা যায়। এ হিসেবে প্রায় প্রতিদিন একটি করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনের পাশাপাশি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। সব খবর যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, তা নয়। অনেক ঘটনাই আড়ালে থেকে যায়। পুলিশি ঝামেলার কারণে অনেকে ঘটনার শিকার হয়ে নিশ্চুপ থেকে যান। এখন দেখা যাচ্ছে, বাসা-বাড়িতে নিরাপত্তা রক্ষীকে খুন ও জখম করে মটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তারক্ষী রেখেও মানুষ নিরাপত্তা পাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? এলাকার আধিপত্য বিস্তারের কথাও বলা হচ্ছে। সাধারণত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই যুক্ত থাকে। সঙ্গত কারণে ধরে নেয়া যায়, এসব ক্ষেত্রে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠাবোধ করে। কথা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের এলাকাভিত্তিক দাপটের কারণে কি সাধারণ মানুষকে তটস্থ ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় থাকতে হবে? এ থেকে কি পরিত্রাণের উপায় নেই? আমরা দেখেছি, গত ৭ মার্চ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা কতটা বেপরোয়া হয়ে প্রকাশ্যে নারীদের যৌনহয়রানি ও শ্লীলতাহানি করেছে। এ নিয়ে তদন্তের কথা শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এ তদন্ত কাজও ঝুলে যাবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশকে বরাবরই অনীহ দেখা যায়। অন্যদিকে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভন্ডুল ও নেতা-কর্মীদের টেনেহিঁচড়ে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে পুলিশ খুবই তৎপর। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতির অন্যতম কারণও এটি। পুলিশকে যদি বিরোধী রাজনীতি দমনে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়, তাহলে এ সুযোগে অন্যান্য অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীদের ধরার চেয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় হানা দিয়ে তাদের ধরার ক্ষেত্রে পুলিশের আগ্রহ এবং উৎসাহ বেশি। এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অপরাধের ক্ষেত্রে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালালেও এসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। পুলিশের এই দ্বিমুখী আচরণের কারণে অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, টানাপার্টি-মলমপার্টির উৎপাত অনেকটা লাগামছাড়া হয়ে গেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, জাতীয় নির্বাচন ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ বৃদ্ধির যে কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত ও চলমান অপরাধ যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে তাদের স্বাভাবিক চলাফেরাও নিয়ন্ত্রিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জনমনে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি অধিক কার্যকর ভূমিকা পালন না করে, তবে সাধারণ মানুষের অসহায় হয়ে পড়া ছাড়া কোনো গতি থাকবে না। এটা সবারই জানা, কোন এলাকায় কারা অপরাধে জড়িত তা পুলিশের ভাল করেই জানা। পুলিশের উচিত হবে, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে এলাকাভিত্তিক অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনানুগ শাস্তি বিধান করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান চালানো। কেবল বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে বিরোধী রাজনীতি দমন করার নীতি অবলম্বন না করে, অপরাধীদের গ্রেফতার করে অপরাধ দমন করা পুলিশের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।