পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের প্রায় সব নদীর মূল প্রবাহে নাব্য সংকট এবং অধিকাংশ শাখানদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। ইতিমধ্যেই বহু নদী পলিজমে শুকিয়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার পর তিস্তা দেশের অন্যতম বড় নদী। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি ও লোকজীবনের সাথে এ নদীর নিবিড় সম্পর্ক হাজার বছরের।অনুরূপভাবে পদ্মার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের জীবন ও জীবীকা। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সাথে চুক্তি বা সমঝোতা ছাড়াই পরীক্ষামূলকভাবে গঙ্গার উপর ফারাক্কা ব্যারাজ চালুর মধ্য দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে যে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করতে শুরু করে যতই দিন যাচ্ছে তার প্রভাব ও বিস্তৃতি ততই বেড়েই চলেছে। অনেক দেনদরবারের পর ১৯৯৬ সালে নাম কা ওয়াস্তে গঙ্গার পানিচুক্তি সম্পাদিত হলেও বাংলাদেশ কখনো চুক্তি অনুসারে পানি পায়নি। একটি অসম পানিচুক্তি এবং চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ণে ভারতের অনীহার কারণে দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মার এখন মরণদশা। গত বুধবার ইনকিলাবে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে একই নদীর দুই অংশ গঙ্গা এবং পদ্মার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। একদিকে ফারাক্কা ব্যারাজের উজানে গঙ্গায় থৈ থৈ পানি অন্যদিকে ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে পানির অভাবে বিশুস্ক ও মরুময় পদ্মা। একটি আন্তর্জাতিক নদীর উপর ভারতের বাঁধ নির্মানের ফলে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা, কৃষি এবং পরিবেশের উপর যে চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তা বিশ্বের যে কোন স্থানে পানি আগ্রাসনের এক বড় উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট চুক্তি ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে তিস্তার পানিচুক্তি গত চারদশক ধরেই অন্যতম আলোচ্য ইস্যু। গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সর্বোচ্চ অগ্রগতি হয়েছে বলে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষত বাংলাদেশের তরফ থেকে ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের প্রমান দিতে নিজেদের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অনেক স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার পরও বাংলাদেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির দাবী পুরণ হয়নি। যদিও যৌথনদীর পানি বন্টন কোন দেশের একক ইচ্ছাধীন বিষয় নয়। আন্তজার্তিক নদী আইন ও কনভেনশন অনুসারে নদীর অববাহিকা ও ভাটির দেশকে পানি বঞ্চিত করার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ভারতকে বিনা মাশুলে ট্রানজিট সুবিধা, বন্দর সুবিধাসহ বেশ কিছু কৌশলগত বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরও বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত করে দেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ পানি সংকট ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। একদিকে ফারাক্কা অন্যদিকে গজলডোবায় ব্যারাজ দিয়ে দুই প্রধান নদীর পানি আটকেই ক্ষান্ত হয়নি ভারত, অভিন্ন প্রায় সকল নদীতে বাঁধ ও পানি প্রত্যাহারের জন্য সংযোগ খাল নির্মানের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশকে মরুভূমি হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে।
যেনতেন প্রকারে সাময়িকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামই উন্নয়ন নয়। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে যে টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে তার সাথে জড়িত আছে নদনদী ও পরিবেশগত নিরাপত্তার প্রশ্ন। উজানের পানি আগ্রাসনে দেশের নদনদীগুলো মরে যাচ্ছে, চুক্তি অনুসারে গঙ্গার পানি অথবা দশকের পর দশক ধরে দেনদরবার করেও যখন তিস্তার পানি পাওয়া যাচ্ছেনা, তখনো সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা জাতিকে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের মাইলফলক দেখাচ্ছেন। নদনদীতে পানির অভাবে দেশের অধিকাংশ সেচ প্রকল্প অকেজো হয়ে পড়েছে। পরিবেশগত ভারসাম্য ও পূর্বাপর বিবেচনা না করেই সেচকাজে ব্যাপক হারে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে এখন নানা ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। আর্সেনিক সমস্যা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ‚-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে গিয়ে হাজার হাজার নলক‚প অকেজো হয়ে পড়েছে। ভ‚-গর্ভস্থ পানির উপর ভর করে এখনো ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রেখে দেশের মানুষের খাদ্যের যোগান ঠিক রাখা সম্ভব হলেও ভ‚-গর্ভস্থ পানিনির্ভর সেচব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আাসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। দেশের নদনদী, বনভ‚মি ও পরিবেশ সুরক্ষার মত ইস্যুগুলোকে অগ্রাহ্য করে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা উন্নয়নের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতাকেন্দ্রিক স্বার্থে ক্ষমতাসীনরা প্রতিবেশি দেশের সাথে সুসম্পর্কের জিগির তুললেও ভারতের টিপাইমুখ ড্যাম ও আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের মত প্রকল্পগুলো দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য পারমানবিক বোমার চেয়েও ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। এ ধারণা যেন আমাদের মন্ত্রী-আমলাদের নেই। গঙ্গা-তিস্তাসহ সব যৌথনদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এবং নদনদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা ছাড়া বাংলাদেশের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তাসহ টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।