Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোগীর মরণদশা

প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৪ পিএম, ৪ অক্টোবর, ২০১৬

হাসান সোহেল
দেশে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে এখন টেস্ট বাণিজ্য। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগ ও জেলা শহরগুলোর চিকিৎসা কেন্দ্রের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে নানা নামের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। সাইন বোর্ড সর্বস্ব এসব ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ডাক্তারদের চুক্তিবদ্ধ হন। চিকিৎসার জন্য যে কোনো রোগী গেলেই কারণে অকারণে একগাদা টেস্ট প্রেসক্রাইব করেন। বিনিময়ে ডাক্তাররা পান মোটা অংকের মাসোহারা। আবার ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কর্মচারীদের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ‘ফাঁদ পেতে’ রোগী ধরার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। তারা রোগীদের ফাঁদে ফেলে টেস্টের জন্য ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। এনিয়ম চলছে বছরের পর বছর ধরে। অথচ দেখার কেউ নেই।
মাঝে মাঝে মন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা হাঁকডাক দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) প্রফেসর ডা. সামিউল ইসলাম সাদী জানান, এ সব বন্ধে দেশব্যাপী অনুমোদনহীন নিম্নমানের ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি সেন্টার বন্ধের অভিযান চলছে। কিছুটা সফল হলেও প্রভাবশালী কিছু চিকিৎসক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাশীলদের কারণে এই কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মো. কামাল উদ্দিন (৬০) বুকে হালকা ব্যথা অনুভব করায় বরিশাল থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসেন। ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কিডনী ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এম এ সামাদকে দেখান। চিকিৎসক তাকে বিভিন্ন ধরনের ব্লাড, ইউরিন, ইকো, আলট্রাসনোগ্রাফীসহ বিভিন্ন টেস্ট ধরিয়ে দেন। একই সঙ্গে পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে টেস্টগুলো করানোর জন্য বলেন। কামাল উদ্দিন জানান, এই টেস্ট করতে গিয়ে তার প্রায় ৩৫ হাজার টাকা চলে গেছে। অথচ রিপোর্টে তার শরীরে কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। তানিয়া তাজমিন (২৩) নামের অপর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কর্তব্যরত ডাক্তার তার রোগ নির্ণয়ের জন্য তাকে ৬টি টেস্ট করতে বলেন, যার মূল্য ৪ হাজার ৯৯০ টাকা। নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তানিয়া ঠিক তার এক সপ্তাহ আগেই বারডেম থেকে এই একই টেস্ট সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় করিয়েছিলেন অন্য রোগের চিকিৎসকের পরামর্শে। চিকিৎসককে আগের রিপোর্টটি দেখিয়ে জানালেন, আমি তো এই পরীক্ষাগুলো এক সপ্তাহ আগেই করিয়েছি, আবার কেন নতুন করে করবো! চিকিৎসক জানালেন-‘এক ঘণ্টায়ই তো শরীরের অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়, আর আপনি তো এই টেস্টগুলো এক সপ্তাহ আগে করিয়েছেন। ওগুলো দিয়ে হবে না। ভালোভাবে চিকিৎসা করার ইচ্ছা থাকলে নতুন করে আবার টেস্টগুলো এখান থেকেই করতে হবে।’
আর্থিক সচ্ছলতা থাকায় কামাল উদ্দিনের মতো কারো পক্ষে টেস্টের পেছনে টাকা ব্যয় করা সম্ভব হলেও অনেকের পক্ষেই এভাবে একের পর এক টেস্ট করা সহজ নয়। এর জন্য হয় ধার-দেনা, ভিটা-মাটি বিক্রি না হয় অন্যভাবে যোগাড় করতে হচ্ছে। আর এভাবেই মূল রোগ ধরা পড়ার আগেই টেস্টের পেছনেই সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় টেস্টের খরচ যোগাতে গিয়ে মরণদশায় পড়তে হচ্ছে রোগী এবং আত্মীয়দের। আবার অনেক ক্ষেত্রে বেশি টাকা দিয়ে টেস্ট করিয়েও সঠিক রোগ নির্ণয় হচ্ছে না।
আর চিকিৎসার নামে বাণিজ্য মানসিকতার কারণে প্রতিদিনই কামাল উদ্দিন ও তানিয়ার মতো হাজারো মানুষ হাসপাতালে কেবল পরীক্ষা বাণিজ্যের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। কখনো সরাসরি ডাক্তার, কখনো ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের দালাল, হাসপাতালের নার্স এবং কর্মচারী এ কাজে সহযোগিতা করছে। বিনিময়ে টেস্টের টাকার বড় অংকের কমিশন যাচ্ছে তাদের হাতে। যদিও সরকারি হাসপাতালে টেস্ট ফি কম, কিন্তু সময় বেশি লাগবে বা মেশিন নষ্ট ইত্যাদির অযুহাতে চিকিৎসক-নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই সুযোগ নিচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালগুলোর আশপাশে অনুমোদন ছাড়া ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে সাইন বোর্ড সর্বস্ব ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই। হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালানো হয় যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ রোগ নির্ণয়ের কাজ। পরীক্ষায় সঠিক রিপোর্ট না আসলেও রোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় মনগড়া যে কোন তথ্যই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কর্মীরা জানায়, প্রত্যেকটা সরকারি হাসপাতালে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি নিযুক্ত আছে। রোগী আসা থেকে শুরু করে চিকিৎসক দেখা পর্যন্ত পুরো সময়টাই এই প্রতিনিধি বা দালাল ওই রোগীর প্রতি নজর রাখেন। এরপর টেস্ট দেওয়া মাত্রই ওই টেস্ট এখানে হবে না, হলেও দু’দিনে রিপোর্ট আসবে না। তাই আজকের মধ্যেই টেস্ট এবং রিপোর্ট দুটোই মিলবে উল্লেখ করে রোগীকে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। বিনিময়ে ওই চিকিৎসকের নামে থাকা কোড নম্বরে চলে যায় কমিশনের অর্থ। এভাবে রাজধানীর অধিকাংশ ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে সাজানো আছে বিশেষজ্ঞ অধিকাংশ চিকিৎসকের কোড।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিকিৎসকরা হাসপাতালে চেম্বার করার বিনিময়ে অতিরিক্ত টেস্ট দিচ্ছেন রোগীদের। এতে নিজেও যেমন কমিশন পান, ফ্রি চেম্বার করেন আবার প্রতিষ্ঠানও লাভবান হয়। এসবের বিনিময়ে চিকিৎসককে প্রতিমাসে টেস্টের টার্গেট দেওয়াও আছে। তবে অনেক ডাক্তার এই কমিশন বাণিজ্যকে অপছন্দ করছেন এমন নজিরও আছে।
উভয়পক্ষের এই চিকিৎসা-বাণিজ্যের ফাঁদে পড়ে অতিরিক্ত মূল্যে টেস্ট করিয়ে বেশি ঠকছেন গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগী ও তাদের স্বজনরা। অথচ দু-একটি ছাড়া স্বল্পমূল্যে সব ধরনের টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে সরকারি হাসপাতালে। এদিকে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশেরই অবস্থান সরকারি হাসপাতালের পাশে। রোগী বাগাতে সহজ হবে বলেই এটা করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগীর আত্মীয় জানান, দুর্ঘটনায় তার ভাতিজার মেরুদ-- ভেঙে যাওয়ার পর এখানে এসেছেন। ডাক্তার এমআরআই পরীক্ষা প্রেসক্রাইব করার পর একজন দালাল পার্শ্ববর্তী ক্রিসেন্ট ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে ৭ হাজার টাকায় পরীক্ষাটি করান। অথচ পঙ্গু হাসপাতালে মাত্র ৩ হাজার টাকায় এটি হয়। পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে আসা মানিকগঞ্জের আজিুজর রহমান জানান, তার শিশুকন্যা মিনার হার্টের চিকিৎসা চলছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। একটি রক্তের টেস্ট করাতে বলা হয়েছে। তাই এখানে এসেছেন। টেস্টটি সরকারিভাবে হয় কিনা জানেন না তিনি।
সবচেয়ে বেশি কমিশন আসে সিটি স্ক্যান, এমআরআই ও সিটি গাইডেড এফএনএসি পরীক্ষায়। পরীক্ষাগুলো ব্যয়বহুল হওয়ায় শুধু টাকা আর টাকা। এ ক্ষেত্রে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোও অসহায়। বিশেষ করে নতুন ও অখ্যাত ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলো। কমিশন না দিলে রোগী পাঠাতে চান না বলে বাধ্য হয়েই ডাক্তারদের কমিশন অফার করতে হয় ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষকে।
এমআরআই করাতে আসা এক গরীব রোগী রাজধানীর একটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কর্র্মীর কাছে কিছু টাকা কম রাখার কথা বললে ওই কর্মী জানান, কম রাখতে তো আমরাও চাই। কিন্তু কি করব বলুন। সাড়ে ৬ হাজার টাকার এমআরআই পরীক্ষায় ২ হাজার ৫০০ টাকা কমিশন দিতে হয় চিকিৎসককেই।
জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা ২ হাজার টাকা। প্রাইভেট ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। সরকারিতে এমআরআই ৩ হাজার টাকা। প্রাইভেটে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। মাথা ও কোমরের রোগ নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহƒত হচ্ছে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই। অন্যান্য রোগ শনাক্তকরণে রয়েছে রক্ত, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, ইসিজি, এনজিওগ্রাম, ইকোসহ বিভিন্ন পরীক্ষা। কোনো কোনো চিকিৎসক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন নিচ্ছেন। প্রাইভেট হাসপাতালে টেস্টের টার্গেট দেওয়া আছে চিকিৎসককে। বিনিময়ে কমিশন ও ফ্রি চেম্বার দুটিই মিলছে। তবে অনেক ডাক্তার ও প্রাইভেট হাসপাতাল কমিশন লেনদেনকে অপছন্দ করছেন এমন নজিরও আছে।
একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, এটা সত্যি যে, কিছু চিকিৎসক রোগীর সরলতার সুযোগ নিয়েই বিভিন্ন প্যাথলজি, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার কিংবা হাসপাতালগুলোর সাথে যোগসাজশ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অবৈধভাবে নিজের পকেট ভরছেন। তবে একটি নীতিমালা বা আইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করে দিলে এবং ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, প্যাথলজি ল্যাব এবং ক্লিনিকের মান নির্ধারণ করে দেয়া করা দরকার। তাহলে এই বাণিজ্য অনেকটা কমবে বলে মনে করছেন তারা।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) সামিউল ইসলাম সাদী জানান, দেশে রেজিস্টার্ড ক্লিনিক রয়েছে ৪ হাজার ৩৬৫টি। ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি ল্যাব রয়েছে ৯ হাজার ৩৭৬টি। তবে, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের অবৈধ তালিকার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যেক জেলা থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৪টি জেলা থেকে পাঠানো পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩শ’ অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, গত দেড় বছরে ভুয়া, নিম্নমানের এবং রেজিস্টার্ড নয় এমন প্রায় ২ হাজার ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারকে বন্ধ, সাজা ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে টেস্ট বাণিজ্যের ভিন্নতাও রয়েছে। একই রোগ পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে একেক রকম রিপোর্ট দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ আছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, অধিকাংশ ডায়াগনোস্টিক সেন্টারেই টেস্ট করানোর মেশিনগুলো কম দামী। কেউ কেউ আবার একটু বেশি দামী মেশিন ব্যবহার করে এতে টেস্টের রেজাল্ট একেক স্থানে একক ধরনের হয়ে থাকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালের তুলনায় অধিকাংশ ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের টেস্ট মেশিনগুলো নিম্নমানের। যদিও কিছু চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেলসহ সরকারী হাসপাতালে করা টেস্ট ছাড়া রোগীকে দেখেন না। কারণ হিসেবে অনেক চিকিৎসক বলেন, একটি মেশিনের দাম ২ কোটিও আছে আবার ২০ লাখও আছে। ২০ লাখ টাকার মেশিনের টেস্ট এবং কোটি টাকার মেশিনের টেস্ট এক হবে না। কারণ, সব মেশিনের ক্ষমতা এক নয়। এছাড়া পুরুষের পরীক্ষা রিপোর্টে তুলে ধরা হয় মেয়েলি রোগের উদ্বেগজনক বিবরণ। আবার উল্টোটাও হয়। এসব রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা মাঝে মাঝে চরম বিভ্রান্তিতে পড়েন। তা সত্ত্বেও একশ্রেণির কমিশন খেকো ডাক্তারের সহায়তায় ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকদের রমরমা টেস্টবাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর ধরে।
যদিও গত দেড় বছর থেকে এসব মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) প্রফেসর ডা. সামিউল ইসলাম সাদী। দেশব্যাপী অনুমোদনহীন নিম্নমানের ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি সেন্টার বন্ধে অভিযান চালিয়ে আসছেন। কিছুটা সফল হলেও প্রভাবশালী কিছু চিকিৎসক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাশীলদের কারণে এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনেকটা বেগ পাচ্ছেন। তবে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই কার্যক্রম চলবে বলে উল্লেখ করেন ড. সামিউল ইসলাম। একই সঙ্গে অচিরেই একটি কাঠামোয় আসছে এ সব প্রতিষ্ঠানগুলো।
রাজধানীতে একই ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য একেক প্রতিষ্ঠানে ধার্য আছে একেক ধরনের ফি। সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রেট কার্ড মানে না কোনো প্রতিষ্ঠানই। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নিজস্ব রেট চার্ট।
ডা. সামিউল ইসলাম সাদী বলেন, টেস্ট ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ১৯৮২ সালের একটি নীতিমালা থাকলেও ওই সময়ে এমআরইসহ বড় টেস্টগুলো ছিলো না। ব্লাড, ইউরিনসহ কয়েকটি টেস্টের ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে তা যুগোপযোগী নয়। এটা যুগোপযোগী করার কাজ চলছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের ইচ্ছামতো ফি নির্ধারণ করছেন।
বিষয়টি দেখভালের মূল দায়িত্ব বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি)। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, কিছু ডাক্তার ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় টেস্টগুলোর নিচে দাগ দিয়ে রাখেন এবং রোগী পাঠান অখ্যাত কোনো ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে। সেখানে পরীক্ষা না করিয়েই নরমাল রিপোর্ট দিচ্ছেন টেকনোলজিস্ট বা কর্মচারী নিজেই। এসব রিপোর্টে কমিশনের রেট ফিফটি ফিফটি। বিএমডিসির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি চেষ্টা করছেন এসব কমিশনলোভী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোগীর মরণদশা

৫ অক্টোবর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ