পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
xx সংঘর্ষে জড়ানোর উস্কানি দিচ্ছে মিয়ানমার। হঠাৎ করে ১ মার্চ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রæ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনা ও সামরিক সরঞ্জামসহ শক্তি বৃদ্ধি এবং ফাঁকা গুলি ছোড়া নেহায়েতই উদ্দেশ্যমূলক। এ ধরনের আচরণ মোটেই সৎ প্রতিবেশীসুলভ নয়। এ বিষয়ে মিয়ানমার বলেছে, বাংলাদেশের বিরোধিতা করা তাদের লক্ষ্য নয়। সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
আসলে কী চায় মিয়ানমার? সম্ভবত তারা যুদ্ধ নয় বরং বাংলাদেশকে উসকানি দিয়ে সীমান্তে ঝামেলার সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমের আড়াল করতে চায়। ভয় দেখিয়ে রোহিঙ্গা ফেরতের বিষয়টি পেছনে ফেলতে চায়। মিয়ানমারের কাছ থেকে আমরা এমন আচরণ প্রত্যাশা করি না। কোনো ধরনের উসকানিমূলক বা উত্তেজনা সৃষ্টিকারী আচরণ তাদের কাছ থেকে কাম্যও নয়।
বস্তুত গত কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি, উসকানি প্রদান ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। কয়েকবার দেশটির হেলিকপ্টারের বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন, সীমান্ত ঘেঁষে টহল এবং মাইন স্থাপন, সেই সাথে ড্রোন ইত্যাদিকে বিরোধে জড়ানোর উসকানি হিসেবেই দেখছে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। বিপরীতে বাংলাদেশ সবসময় সংযত আচরণ প্রদর্শন করে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে এবং আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যা সমাধানের নীতিতে অটল থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ অটুট রেখে বিজিবি বরাবরই সংযত আচরণ করে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের বারবার উসকানির বিষয়টিতে বহিবিশ্বের (অপশক্তির) ইন্ধন থাকাটা অমূলক নয়। গায়ে পড়ে কেন তাঁরা ঝগড়া করতে চায়? যুদ্ধ বাঁধলেই ফায়দা লুটবে কারা, তা দুই সরকারেরই মাথায় রাখতে হবে। যুদ্ধ কোনো দেশের জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া এবং উন্নয়ন অনেকেই কিন্তু ভালো দৃষ্টিতে নেয় না। অনেক রাষ্ট্র বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে চায়, তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়ে রেখে করুণা করতে চায় বাংলাদেশকে, তারা মিশকিনের দেশের তালিকায় রাখতে চাায়। আমাদের তাই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। এখন ঝগড়া করলে চলবে না। যুদ্ধে না জড়িয়ে কৌশলী হতে হবে বাংলাদেশকে। মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করতে হবে।
মিয়ানমার উসকানি দিচ্ছে কাদের ইশারায়? দেশটি সীমালঙ্ঘন করছে কাদের নির্দেশে? দেশটি কেন আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি মানছে না? রোহিঙ্গাদের এদেশে চাপিয়ে দিয়ে উল্টো গায়ে পড়ে বাংলাদেশের সাথে ঝগড়া করতে চাইছে দেশটি। এর অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বিশ্ব মোড়লদের ইশারা তো আছেই। তা নাহলে কোন শক্তিতে মিয়ানমারের মতো দেশ বার বার সীমা লঙ্ঘন করছে।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি কেবল প্রতিবাদ করবে? যুদ্ধ করবে? নাকি কৌশলী হবে? কী করবে বাংলাদেশ? অনেকে বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করেন। দেশের কথা ভাবেন না। যুদ্ধ করার কথাও কেউ কেউ বলেন। হয়তো তাঁরা ভেবে বলেন না। নয়তো দূরদর্শিতা নেই তাঁদের। এখানে সরকারকে দোষারোপ করলে হবে না। বিরোধী দলকে এ নিয়ে রাজনীতি করলে হবে না। গোটা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বিষয় এটি। জানমালের বিষয় এটি। দেশের স্বার্থেই সরকারের এই ইস্যুতে যুদ্ধে জড়ানো ঠিক হবে না। আমরা লক্ষ করছি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব মোড়লরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বে আজ নানা কারণে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। বিভিন্ন দেশের সাথে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে। এমন সময় কে কাকে সমর্থন করে, আর কে কার বিরোধিতা করে এনিয়ে সংশয় রয়েছে। কঠিন কোন সিদ্ধান্তের আগে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
যে যাই বলি, যেভাবেই বলি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই একমাত্র সমাধান। এ জন্য আন্তর্জাতিক সহয়তা জরুরি। নতুন করে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, শুধু তাদের নিয়ে ভাবলেই চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, বহু বছর ধরে রোহিঙ্গা নাগরিকরা এখানে এসেছে। তাদেরও এদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। কাজটি অনেক কঠিন। এ ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই একমাত্র সমাধান। এসব মানুষদের শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে পাঠানোই হতে পারে একমাত্র সমাধান। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বিবৃতি দিয়েছেন। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। এমন আলোচনা বহু বছর ধরেই হচ্ছে কিন্তু রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য বেদনাদায়ক এবং কষ্টের। এক বৃহৎ বাড়তি জনগোষ্ঠি লালন-পালন মোটেও সহজ নয়। বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। কারো পাতা ফাঁদে পড়ে যুদ্ধে জড়ানো সমীচীন হবে না। সমঝোতার মাধ্যমে এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।