পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করেই মিয়ানমার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের ওপারে দেড়শ’ গজের মধ্যে ভারী অস্ত্রসহ অতিরিক্ত সেনাসমাবেশ ঘটিয়েছে। এতে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওখানে গুলির শব্দও শোনা যায়। সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করার কারণ জানতে চেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কাছে পতাকা বৈঠকে বসার অনুরোধ জানিয়ে সাড়া পায়নি। এ পরিস্থিতিতে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উকে তলব করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) এম খুরশেদ আলম। রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে অবিলম্বে মিয়ানমারের সেনাদের সীমান্ত থেকে সরিয়ে নিতে। গত মাসে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ এ ধরনের পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য মিয়ানমারকে অনুরোধ করেছিল। এমন এক পরিস্থিতিতে এবং যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তখন মিয়ানমার সীমান্তে ভারী অস্ত্রসহ অতিরিক্ত সেনাসমাবেশ অনভিপ্রেত, অনাকাক্সিক্ষত ও প্ররোচনামূলক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সীমান্তে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে বিজিবি কঠোর হাতে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে। বিজিবি সর্বদা সতর্ক রয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবির শক্তি আরও বাড়ানো হবে।
সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাসমাবেশ ঘটানো নিঃসন্দেহে উস্কানিমূলক এবং উদ্দেশপ্রণোদিত। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজ করছে। এতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে এবং তাদের ফিরে যেতে নিরুৎসাহী করবে। গত বছরের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সেনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও উচ্ছেদ কার্যক্রম চালালে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাংলাদেশ শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাদের আশ্রয় দিয়ে সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আলাপ-আলোচনা অব্যাহত আছে। ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর প্রাক্কালে সীমান্তে এভাবে সেনাসমাবেশের ঘটনা দেশটির অসৎ উদ্দেশ্যের প্রমাণ বহন করে। প্রতীয়মাণ হচ্ছে, দেশটি পায়ে পাড়া দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছে। খবর পাওয়া গেছে, বিগত কয়েক দিন ধরেই মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি রাখাইনে সেনাবাহিনী মোতায়েন শুরু করেছে। তারা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় গাছপালা কাটছে, বাংকার বানাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসবই করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে। একদিকে আলোচনা অন্যদিকে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে দেয়ার কূটকৌশল অবলম্বন করছে মিয়ানমার। এর আগেও দেশটি বিভিন্ন সময়ে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধের পায়তারা করেছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চলাকালীন সীমান্তে সৈন্যসমাবেশ ঘটিয়ে অসহিষ্ণু আচরণ করেছে। বাংলাদেশ বরাবরই উস্কানির মুখে সংযম প্রদর্শন করে আসছে। বলা বাহুল্য, সীমান্তে বারবার সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে মায়ানমার দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েন সৃষ্টি করে চলেছে। বাংলাদেশের আচরণ বরাবরই পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে। এবারও তাই করা হচ্ছে। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সীমান্তে মিয়ানমার উপর্যুপরি যে উস্কানিমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে, তা বিজিবি অত্যন্ত ধৈর্য্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে মোকাবেলা করছে। পাশাপাশি এ কথাও বলা প্রয়োজন, সীমান্তে বিজিবির শক্তি ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে আরও মনোযোগী হতে হবে। আমরা কারো সাথে যুদ্ধ চাই না, তবে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী যে কোনো পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করতে পারে, এই বার্তাটি তাকে দিতে হবে। আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবিকে ত্বরিৎ রাস্তায় নামতে দেখা যায়। রাজপথে তাদের টহল সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিজিবির প্রথম ও প্রধান কাজ সীমান্তে তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা ও সক্ষমতার মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সবার আগে এ কাজ সম্পাদন করে দেশের আভ্যন্তরীণ যে কোনো কাজে তাদের ব্যবহার করা যেতে পারে। সীমান্তে মিয়ানমার সেনাসমাবেশ ঘটিয়ে যে উস্কানি প্রদর্শন করছে, তাতে শান্তি ভঙ্গের আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা আশা করব, মিয়ানমার কোনো বিশৃঙ্খলা ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটাবে না। অন্যদিকে বিজিবিকেও সর্বদা সক্রিয় ও তৎপর থাকতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।