Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চন্দনাইশে লেবু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত : চাষিরা হতাশ

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) থেকে মোহাম্মদ আবু মোহসীন : চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনগর ও হাসিমপুর ও জামিরজুরী তথা লর্ড এলাহাবাদ গ্রামের পাহাড়ি লেবুর বাগানের লেবু উৎপাদন দেশ খ্যাত। চন্দনাইশ উপজেলার হাসিমপুর লড এলাহাবাদের চাষি নুরুল আলম নুরু জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা ফলন না হওয়ায় লেবু চাষিদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। ফলে তারা চলতি বছরে আয়-ব্যয় পুষিয়ে আসতে হিমশিম খাচ্ছেন। চাষিরা জানান, গত বছরের শেষের দিকে দফায় দফায় বন্যার ফলে পাহাড় ধসে লেবু বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া লেবু বাগানের গাছে গাছে ফুল আসার মুহূর্তে অবিরাম বৃষ্টির ফলে লেবুগাছের ফুল ঝরে গেছে। এতে করে ক্ষয়ক্ষতিতে আয়-ব্যয় পুষিয়ে আসতে সন্দীহান। পেয়ারা বেপারী শফিকুল ইসলাম ও নুরুল হাকিম, শফিউল আলম জানান, তারা সারা বছর লেবু মৌসুমে বাগানের মালিকদের কাছ থেকে লেবু কিনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার শহরে লেবু বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে পরিবারের চাহিদা মেটান। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে আগেকার তুলনায় চাষিদের উৎপাদন আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় মালিকদের কাছ থেকে আগেকার মতো লেবু বিক্রি করতে পারছেন না। লেবু উৎপাদন কম হওয়ায় লেবু দামও এখন চড়া। প্রতি ১০০ লেবু তাদের ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত কেনা পড়ে।
এ ব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) লুৎফর রহমান বলেন, চন্দনাইশের পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়াও সর্বত্রে মৌসুমী ফল ও রবি শস্য উৎপাদনের জন্য উল্লেখযোগ্য এলাকা। ফলে কৃষকদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা আমরা সবারই কর্তব্য। কারণ কৃষক বাঁচলে দেশের জনগণ বাঁচবে।
চন্দনাইশ কৃষি সম্প্রাসরণ অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার সুমন কুমার শাহা জানান, গত বছরে চন্দনাইশ উপজেলায় এক থেকে দেড়শত হেকটর পাহাড়ি অঞ্চলে লেবু চাষ করা হয়েছে। এসব লেবু উৎপাদনের জন্য বিশেষ করে এলাকা হচ্ছে হাসিমপুর, জামিজুরী, কাঞ্চানাবাদ ও দোহাজারী পাহাড়ি অঞ্চলে। তারা চাষিদের কাছে দুই হাজার ৪০০ চারাও বিতরণ করেছেন বলে জানান। লেবু বাগানের মালিক নুরু ও লেবু বেপারী শফিকুল ইসলাম আরোও বলেন, বর্তমানে লেবুর আকাল হওয়ায় দাম আরো বৃদ্ধি। এখন হালকা মৌসুম হলে ও অন্যান্য বছরের তুলনায় লেবুর ফলন কম হয়েছে। চন্দনাইশের লেবু চন্দনাইশ ছাড়া ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় রফতানি হয়। শত শত লেবুচাষি আর্থিক সঙ্কটের কারণে তাদের বাগানে লেবু চাষের উৎসাহ হারিয়ে এখন ঝিমিয়ে পড়েছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে বাগানের বিভিন্ন মালিকের সাথে আলাপ করে আরোও জানা যায়, আর্থিক সঙ্কটের সময়মতো অনেকেই সার প্রয়োগে ব্যর্থতার দরুণ কয়েক বছর ধরে ভ‚মির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পেয়েছে। ফলে সময়মত লেবু গাছে ফুল আসে না বিধায় আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না। প্রতি একর বাগানে লেবু চাষ করতে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। যার আয়-ব্যয় পুষিতে আসতে লাভ হওয়া তো দূরের কথা, আরোও ঋণের বোঝায় মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। এসব চাষি অভিযোগ করেন, এ পেশায় তারা আর্থিক যোগান দিতে সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন অনেক চাষি এ পেশায় তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। প্রসঙ্গত তারা গর্ব করে জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের এ অঞ্চলের লেবু দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য ও প্রসিদ্ধ এবং প্রিয়। চন্দনাইশ রৌশন হাট, বাদামতল, খানহাট, থেকে বাগিচা হাট পর্যন্ত বাজারগুলো মৌসুমে প্রতিনিয়ত একাধিক হাট বাজার বসে। প্রতি মৌসুমে এসব হাটবাজারে লাখ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হতো। বর্তমানে এ পেশা ক্রমেই হ্রাস পেতে শুরু করেছে। এ পেশায় অতিমাত্রার ফলনে ও লাভের কারণে এ পেশা ছিল তাদের জন্য জমিদারি পেশা। বর্তমানে অনেক কষ্টে তাদের লেবু চাষাবাদে উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শীঘ্রই দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশস্থ এ অঞ্চলের লেবুবাগান বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলেই অনেকের আশঙ্কা। এসব ফসল উৎপাদনে ও বৃদ্ধিকল্পে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ যার ব্যবহার ও উন্নত ব্যবস্থাপনায় সরকারি উদ্যোগে বাজারজাতকরণ উৎপাদিত লেবুর যথাযথ মূল্য নিশ্চিতকরণ সমবায়ভিত্তিক চাষ ও বিক্রির ব্যবস্থাকরণ সহজশর্তে ঋণদানের ব্যবস্থা করলে লেবুচাষিরা আবার সুখের সুদিন ও উজ্জ্বল মুখ দেখবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লক্ষ্যমাত্রা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ