পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
করোনার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে এখনও। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর মিলে মোট ১ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ হয়। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪৬ শতাংশ। অর্থবছরের অর্ধেকর বেশি সময় পার হয়ে গেলেও অবশিষ্ট সময়ে বেশিরভাগ রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা অসম্ভব বলে অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এ বছর বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এমন অবস্থায় এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধনী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে ৩ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী মাসে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে হতে যাওয়া সম্পদ কমিটির বৈঠকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হবে। সেই সঙ্গে চূড়ন্ত করা হবে সংশোধিত বাজেট।
অবশ্য এনবিআর কোনো বছরেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না। প্রতিবছরই সংশোধন করে কমাতে হয়। শেষ পর্যন্ত সেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হয় না। গত অর্থবছরে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছিল। আর আদায় হয় প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনার ধাক্কা ও বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে অস্থিরতার কারণে কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা ছাড়া বিকল্প নেই।
রাজস্ব বোর্ডের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সব মিলিয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে বা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ১২ শতাংশ।
অর্থবছরের শুরুর দিকে রাজস্ব আদায়ে গতি না থাকলেও এখন বাড়ছে। জুলাইয়ে মাত্র ১৫ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়। সর্বশেষ জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখীর কারণেই রাজস্ব আদায়ে গতি বেড়েছে। বাংলাদেশ মূলত আমদানি নির্ভর। বিশ্ববাজারে এখন সব কিছুর দাম চড়া। ফলে বাংলাদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পণ্যের দাম বেশি হলে শুল্ক আহরণ বেশি হয়। পরিসংখ্যান বলছে, আলোচ্য অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি মাসে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ২৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমদানি পর্যায়ে এত বেশি রাজস্ব আদায় আর কখনই দেখা যায়নি। এই সময়ে আমদানি শুল্ক খাতে আহরণ হয় ৪৮ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের অন্য দুটি উৎস হচ্ছে মূল্যসংযোজন কর-ভ্যাট এবং আয়কর। এই দুটি খাতেও আলোচ্য অর্থবছরের সাত মাসে ভালো আদায় হয়েছে। এই সময়ে ভ্যাটে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ এবং আয়করে সাড়ে ১৪ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত সাত মাসে স্থানীয় পর্যায় থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫৭ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। আয়কর ও ভ্রমণ খাত মিলে আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। এদিকে ভ্রমণ কর আদায় বাড়ছে। করোনা বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি স্থলপথেও ভারত-ভ্রমণ বেড়েছে।
৭ মাসের হিসাবে ভ্রমণ করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫৬ শতাংশ। এই খাতে গত জুলাই-জানুয়ারিতে ভ্রমণ কর আদায় হয়েছে ৩৪১ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। এ বছরের শুধু জানুয়ারিতে আদায় হয়েছে ৯৭ কোটি টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।