২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
কিডনির অসুখকে নিরব ঘাতক বলা হয়। চুপিসারে এই রোগ আপনার শরীরে বাসা বেঁধে আপনাকে শেষ করে দেয়। সামপ্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মারাত্নক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে কিডনি ড্যামেজ ক্যান্সার ও হার্ট অ্যাটাকের পর অবস্থান করছে। শুধুমাত্র আমেরিকাতে প্রায় ২৬ মিলিয়ন মানুষ কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। আতঙ্কের বিষয় হল এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে তারা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। যার ফলশ্রুতিতে সময়মত চিকিৎসার অভাবে অকাল হারাতে হচ্ছে প্রাণ। কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে পারেন আপনার কিডনিটি ভাল আছে কিনা।
১। প্রস্রাবে সমস্যা : তুলনামূলকভাবে প্রস্রাব কম হওয়া কিডনি রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ। শুধু তাই নয় রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগও কিডনি সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ করে। সাধারণত কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এই ধরণের সমস্যা দেখা দেয়।
২। প্রস্রাবে রক্ত : সুস্থ কিডনি সাধারণত শরীরের ভিতরে রক্তে থাকা বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের সাথে বের করে দেয়। কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হলে প্রস্রাবের সাথে রক্ত কণিকা বের হয়ে যায়। সাধারণত কিডনি পাথর, কিডনি ইনফেকশন হলে এই সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এছাড়া প্রস্রাবে অনেক বেশি ফেনা দেখা দিলে বুঝতে হবে যে, প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বের হয়ে যাচ্ছে। প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নামক প্রোটিনের উপস্থিতির জন্যই এমন হয়।
৩। অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব হওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া : কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে রক্তে দূষিত এবং বিষাক্ত পদার্থ জমতে থাকে। যার কারণে আপনি ক্লান্ত দুর্বল অনুভব করেন। এমনকি কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। এই সময় কিডনিতে উৎপন্ন ইরাথ্রোপয়েটিনের অভাবে রক্ত স্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। দুর্বলতা অনুভব করার এটি আরেও একটি কারণ ।
৪।পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফুলে গেলে : হঠাৎ করে পায়ের পাতা এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়া কিডনি রোগের অন্যতম লক্ষণ। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে দেহে সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যার কারণে পায়ের পাতা, গোড়ালি ফুলে যায়।
৫। খাবারে অরুচি : বিভিন্ন কারণে খাবারে অরুচি হতে পারে। কিন্তু এটি ঘন ঘন খাবারে অরুচি হওয়া, বমি বমি ভাব লাগাকে অবহেলা করবেন না। শরীরে বিষাক্ত পদার্থ উৎপাদন হওয়ার কারণে এই ধরণের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
৬। চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া : যখন কিডনি থেকে বেশি পরিমাণে প্রোটিন প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়, তখন চোখের চারপাশ ফুলে যায়। তাই এই সমস্যাকে অবহেলা না করে দ্রæত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
৭। মাংসপেশিতে টান : আপনি হয়তো শুনে থাকবেন কিডনি সমস্যার কারনে ইলেক্ট্রোলাইট উপাদানের ভারসাম্যহীনতা হয়ে থাকে। ফলে মাংসপেশী টান, খিঁচুনি সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
৮। ত্বকে র্যাশ এবং চুলকানি দেখা দেওয়া : রক্তে মিনারেল এবং পুষ্টি উপাদান ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে ত্বকে র্যাশ এবং চুলকানি দেখা দিয়ে থাকে। মূলত কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে মিনারেল এবং পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়ে থাকে।
সাধারণ এই লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে কিডনি পরীক্ষা অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একটি ছোট অবহেলা কেড়ে নিতে পারে আপনার জীবন।
যেসব অভ্যাস এর কারনে কিডনির ক্ষতি করতে পারে
শরীরের প্রত্যেক অঙ্গই ভিন্ন ভিন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এর মধ্যে কিডনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মানুষের শরীরে দুটো কিডনি রয়েছে। অনেকসময় একটি কিডনি দিয়েও মানুষ বেঁচে থাকে। কিডনি শরীরের দূষিত পদার্থ বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। কিডনি যদি কোনো কারণে কাজ করা বন্ধ করে দেয় বা কাজ করতে না পারে তবে শরীর বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু বাজে অভ্যাস কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফ্যামিলি হেলথ ফ্রিডম নেট ওয়ার্ক জানিয়েছে কয়েকটি অভ্যাসের কথা, যা কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দেখুন আপনার মধ্যে এর কোনো অভ্যাস রয়েছে কি না!
অভ্যাস এক : পানি কম খাওয়া বা শরীরকে আর্দ্র না রাখা।
শরীরের বিষাক্ত পদার্থকে ভালোভাবে ছেঁকে বের করে দেওয়ার জন্য কিডনির পানির প্রয়োজন হয়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা না হয় তবে কিডনি তার কাজ ঠিক মতো করতে পারে না এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অভ্যাস দুই : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে না রাখা
বেশি পরিমাণ চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া তথা ডায়াবেটেসকে অনিয়ন্ত্রিত করে ফেলা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কয়েক বছর পর এই অভ্যাস কিডনিকে দুর্বল করে ফেলে এবং এর কার্যক্ষমতাকে ব্যাহত করে।
অভ্যাস তিন : বেশি লবণ খাওয়া
খাবারে অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে এবং কিডনির ওপর চাপ তৈরি করে। তাই খাবারে কম লবণ ব্যবহার করা ভালো।
অভ্যাস চার : প্রস্রাব চেপে রাখা
অনেকে বিভিন্ন কারণে প্রস্রাব চেপে রাখে। বিশেষ করে আমাদের দেশে রাস্তাঘাটে টয়লেটের সুব্যবস্থা না থাকায় মেয়েদের বেলায় এটি বেশি হতে দেখা যায়। এই অভ্যাস কিডনির ওপর চাপ তৈরি করে। নিয়মিত এ রকম করতে থাকলে কিডনি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রস্রাবের মাধ্যমে নিয়মিত শরীরের বর্জ্য পদার্থগুলো বেরিয়ে যাওয়া কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
অভ্যাস পাঁচ : অতিরিক্ত কফি পান
কয়েকটি অভ্যাসের কথা, যা কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দেখুন আপনার মধ্যে এর কোনো অভ্যাস রয়েছে কি না!
অভ্যাস ছয় : অতিরিক্ত পরিমানে ব্যথানাশক ওষুধ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যথা নাশক ওষুধ বেশি সেবনে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। এসব ওষুধ এমন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় যা দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হলে কিডনি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই কিডনির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে বেশি ব্যথা নাশক ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
অভ্যাস সাত : মদ্যপান
মদ্যপান কিডনির জন্য খুবই খারাপ। কেবল তাই নয় এটি লিভারের জন্যও বাড়তি চাপ তৈরি করে। এটি কিডনির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে।
অভ্যাস আট : বেশি মাংস খাওয়া
অনেকের খাদ্যতালিকায় প্রাণীজ প্রোটিন বা মাংস বেশি থাকে। এই প্রোটিনের উৎস থেকে যে টক্সিন আসে তা সহজে ভাঙতে পারে না কিডনি এবং কিডনির জন্য তা ছাকতেও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কিডনি ভালো রাখতে মাংস খাওয়া কমিয়ে সবজি খান।
অভ্যাস নয় : পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হওয়া
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেকেই ভালো করে ঘুমান না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির কার্যক্রম ভালো রাখতে প্রতিদিন অন্তত ছয় ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরী।
-ফারজানা অমি
লালপুর, ফতুল্লা।
ইমেইল: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।