পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ধাঁধার চর হোক পর্যটন কেন্দ্র:
আমাদের শৈশব-কৈশোরে ভরাবর্ষায় তারুণ্যদীপ্ত যৌবনে ভরপুর ছিল শীতলক্ষ্যা নদী। দীর্ঘতম নদ ব্রহ্মপুত্র কাপাসিয়ার রানীগঞ্জে শীতলক্ষ্যার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদী কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ধলেশ্বরীতে পড়েছে। শীতলক্ষ্যাকে ঘিরে কাপাসিয়ার অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। কখনও সমৃদ্ধ জনপদ, কখনও গভীর অরণ্য, কখনও নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া, কখনওবা নতুন নতুন ভূমির সৃষ্টি। শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্র মিলিত হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ধাঁধার চর। এ চরের একপাশে শীতলক্ষ্যা, অন্য পাশে ব্রহ্মপুত্র।
নদী উপকূলের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং পুরনো নিদর্শন জানান দেয় শীতলক্ষ্যার পাড়ে মোগল, পাঠান ও পাল শাসকদের মতো বাংলার অনেক রাজবংশের শাসক বিচরণ করতেন। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীরে দুর্গাপুর ও তারাগঞ্জ এলাকায় বর্গিদের আস্তানা ছিল। সেখানে ছিল ইতিহাসের বিখ্যাত দুর্গ একডালা, যে দুর্গে আবদ্ধ ছিলেন বাংলার স্বাধীন সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ। দরদরিয়াতে বসবাস করতেন রানী ভবানী। এখনও সেই রানীর ডাকবাংলোর ধ্বংসাবশেষ দৃশ্যমান। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শতবর্ষী লিচুগাছ, যেখানে বেঁধে নির্যাতন করা হতো অবাধ্য নীল চাষীদের। দুর্গাপুরে বাড়িরগাঁও এলাকায় নীলের রস প্রক্রিয়াজাতকরণের চুলা নজরে পড়ে এখনও। নদীর ৫০০ গজের মধ্যে রয়েছে নীলকুঠি, যেখান থেকে বাংলার সাধারণ মানুষকে নীল চাষে বাধ্য করা হতো। পুরনো ইট-কাঠের দোতলা ঘরটি (নীলকুঠি) এখন একটি স্কুলের আওতায় রয়েছে। রয়েছে মোগল-পাঠানদের যুদ্ধের স্মৃতি। বারো ভূঁইয়ার অন্যতম শাসক ফজল গাজীর শাসনামলের স্মৃতিচিহ্নও দৃশ্যমান অনেক স্থানে।
শীতলক্ষ্যা, ধাঁধার চর এবং নদীর অববাহিকার ঐতিহাসিক নিদর্শন যুগে যুগে মানুষকে আকৃষ্ট করে আসছে। বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তি বা নদী পরিব্রাজক শীতলক্ষ্যা, ব্রহ্মপুত্র, বানার নদী এবং নদীগুলোর অববাহিকার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন। রানীগঞ্জ, লাখপুর, চরসিন্দুর এলাকার ঠিক মাঝখান দিয়ে ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা প্রবাহিত হয়েছে।
স¤প্রতি অবৈধ দখল এবং ইটভাটার জন্য মাটি উত্তোলনের ফলে মসৃণ ঢালু নদীর কিনারায় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। নদীতীরবর্তী হাটবাজারের ময়লা ফেলা হচ্ছে নদীতে, ফলে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অথচ মৎস্যসম্পদ আহরণের অপার সম্ভাবনা রয়েছে এই নদীগুলোয়। দুই নদীর মিলিত স্থানে সৃষ্টি হয়েছে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের লীলাভূমি ধাঁধার চর। নৌকা আকৃতির প্রায় ২৫০ একর আয়োতনের এই দ্বীপটি বর্ষা ও শীত মৌসুমে মানুষের বিনোদনের জন্য যেন হাতছানি দেয়। পেয়ারা, বড়ই, কলা আর রকমারি ফল যেন আগ বাড়িয়ে ইশারা করে। আম-কাঁঠালের সবুজ ছায়া, পাখির কিচিরমিচির, ফসলের মাঠ, নদীর হিমেল হাওয়া যেন ক্লান্তি নাশের এক মহৌষধ ধাঁধার চরে। যদিও স্থানীয় লোকজন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক স্থানীয়দের মধ্যে চরের মালিকানা ভাগ-বাটোয়ারা এবং ভাওয়াল রাজাকে খাজনা দেয়ার দাবি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো লোক চরে বসতি স্থাপন করেনি। ধাঁধার চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নদীতীরবর্তী ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষা করা প্রয়োজন। স্থানীয় লোকদের সম্পৃক্ত করে সরকারি উদ্যোগে অবৈধ বালু উত্তোলন এবং অবৈধ দখল নিয়ন্ত্রণ করে চরটির রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে এটি একটি স্বীকৃত গ্রামীণ প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। আর এ জন্য প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ এবং নদীতীরবর্তী মানুষের সচেতনতা।
আবুল কালাম আজাদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।