পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতিসংঘ বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। সেই সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দন্ডিত হয়ে জেলে যাওয়ার পর সৃষ্ট পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গত শুক্রবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিয়ে এই ‘প্রত্যাশা’ ও ‘নজর রাখার’ বিষয়টি অবহিত করেন। সাংবাদিকদের তরফে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল : আপনি জানেন, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন জেলে। বার্তা সংস্থা এএফপি ও অন্যান্য মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ তার মুক্তি দাবি করছেন। মিডিয়ার রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে অযোগ্য করতেই খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। এরই মধ্যে খালেদা জিয়া সম্পর্কে আপডেট জানতে তার দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেটরা, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কূটনীতিকরা। যেহেতু খালেদা জিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা মোকাবিলা করছেন, এর প্রেক্ষিতে তার মুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব কি পদক্ষেপ নিয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন : আপনারা জানেন, আমরা পরিস্থিতির দিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখছি। আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমাদের মূলনীতি হলো, এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে। এটাই আমাদের চাওয়া। বলা বাহুল্য, একথা কারো অজানা নেই, এদেশের তাবৎ মানুষ এবং জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাকিদ দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এই তাকিদের পটভূমিতে রয়েছে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, যে নির্বাচন না ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ, না ছিল অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য। ওই নির্বাচন দেশের মানুষের কাছে যেমন গ্রহণযোগ্য হয়নি, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলও তাকে সমর্থন করেনি। সেই থেকেই আন্তর্জাতিক মহল এমন একটা নির্বাচনের তাকিদ ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আসছে, যা একইসঙ্গে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য। স্টিফেন ডুজারিকের বক্তব্যে জাতিসংঘের পূর্ব অবস্থান ও অভিমতই প্রতিফলিত হয়েছে। খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার পর উদ্ভুত পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখার বিষয়টি ওই অবস্থান ও অভিমতের সঙ্গে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সংগতিপূর্ণ।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে কী না তা নিয়ে ঘোরতর সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা ও জেলে যাওয়ার ঘটনায়। সরকারী দল জোরেসোরে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছে। অথচ বিএনপি নির্বাচনী প্রচারণনায় নেই। নির্বাচনবাদী দল হিসাবে তার নির্বাচনে যাওয়া স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হলেও দলটি নির্বাচনে যাওয়ার কোনো স্পষ্ট ঘোষণা এখনো দেয়নি। নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে তার কিছু শর্ত রয়েছে, যা ওয়াকিবহাল মহলের মোটেই অজানা নেই। বিএনপি নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক বা সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। নির্বাচনের আগে সংসদ বিলোপ, নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন, সকল দলের জন্য নির্বাচনের মাঠ সমতল করার দাবিসহ আরো কতিপয় দাবি তার রয়েছে। এসব দাবির প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও ঐকমত্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথাও দলটির তরফে বারবার বলা হয়েছে। এসব দাবির ব্যাপারে সরকারীদল বা সরকারের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমন কি এনিয়ে সংলাপ-আলোচনা করতেও তারা নারাজ। এমতাবস্থায়, বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া যখন অনেকটাই অনিশ্চিত তখন দলের চেয়ারপারসনের সাজা ও জেলে যাওযার ঘটনায় সেই অনিশ্চয়তা বহু গুণে বেড়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপির অভিমত ইতোমধ্যেই সকলের জানা হয়ে গেছে। বিএনপি মনে করে, বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য এই সাজা দেয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাকে নির্বাচনের বাইরে রেখে দলটি নির্বাচনে যাবে কিনা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
দেশী-বিদেশী সকল মহলই একমত, বিএনপির মতো বড় দলকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না, হতে পারেনা। এক্ষেত্রে তারা সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে চান অংশগ্রহণমূলকতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে। বিএনপি নির্বাচনে এলেই কেবল নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বলে প্রতিভাত হতে পারে। একইভাবে আওয়ামী লীগের মত বড় দল কখনো, কোনো কারণে নির্বাচনের বাইরে থাকলে সে নির্বাচনও অংশগ্রহণমূলক বলে বিবেচিত হবে না। আর কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তার গ্রহণযোগ্যতাও থাকে না। এই বাস্তবতা ও বিবেচনা সামনে রাখলে বলতেই হবে, নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সরকারী দলের তরফ থেকেও বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে, দলটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন, তিনি কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চান না। দলের নেতা ও মন্ত্রীদেরও অনেকে বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কিন্তুু বাস্তবতা তাদের অভিপ্রায় ও আশাবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দেশী-বিদেশী অনেকেই আশংকা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা এবং অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সমঝোতা না হলে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে। এই আশংকা অমূলক নয় এবং এমন পরিস্থিতি কারো কামও হতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা ও ইতিবাচক ভূমিকা সঙ্গতকারণেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাইলে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে হতে পারে। সেটা নিশ্চিত করতে হলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হামলা, মামলা, গ্রেফতার, সাজা ইত্যাদি জারি রেখে সেটা হবে না। জাতিসংঘের অভিমতের মধ্যে নিশ্চিত একটি বার্তা আছে। আমরা আশা করি, যাদের বুঝার কথা তারা, সেটা বোঝার চেষ্টা করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।