নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইমরান মাহমুদ : আগের দুটো দিন বাঙালির প্রাণে দোলা দিয়ে গেছে উৎসবের আমেজ। বাতাসে ফাল্গুনের রেণুতে ভর করে পরদিনই হাজির ভালোবাসার দিন। একদিন পর মিরপুরের ছিল সেই আবহ। প্রিয়জনের হাতে হাত ধরে বাসন্তি রঙে সেজে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি রাঙিয়েছে প্রথম টি-২০ দেখতে আসা কপত-কপোতিরা। দিনটি আরো রাঙানোর প্রতিধ্বনি উঠেছিল বাংলাদেশ দলের রেকর্ড গড়া ব্যাটিংয়ে। তবে দিন শেষে ¤øান হলো বাজে বোলিংয়ের কষাঘাতে।
শুরুতেই সৌম্য সরকারের ঝড়ো ফিফটি। তাতে ১০ ওভারেই তিন অঙ্ক ছুঁয়ে বাংলাদেশ পায় শক্ত ভিত। এরপর দুই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটেও তাÐব। ফিফটির আগে মাহমুদউল্লাহ ফিরলেও ৬৬ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এটিই নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগের সেরা ছিল ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৫ উইকেটে ১৯০। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৩ সালে পাল্লেকেলেতে করা ৭ উইকেটে ১৮১ রান। তবে সেই সৃতি সুখের ভেলায় চড়তে পারল কেবল কিছু সময়। লক্ষ্য তাড়ায় সিদ্ধহস্ত শ্রীলঙ্কা সেটি পেরিয়ে গেছে ২০ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখেই। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য তাড়া করে জয়। সেই সঙ্গে টানা ৮ টি-২০ হারের রেলওয়ে ট্র্যাক থেকেও বেরিয়ে এল লঙ্কানরা।
সাকিব আল হাসান দলে নেই। চোটের কারণে হঠাৎই একাদশ থেকে ছিটকে গেলেন তামিম ইকবালও। এই ম্যাচেই অভিষেক হয়েছে জাকির হাসান, আরিফুল হক, আফিফ হোসেন ও নাজমুল ইসলাম অপুর। এখানেও হয়েছে এক রেকর্ড। সবশেষ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে একসঙ্গে অভিষেক হয়েছিল চার জনের। খারাপ সময়ের গেরোতে পড়া বাংলাদেশের উপর স্নায়ুচাপ ছিল। টস জিতে অভিষিক্ত জাকিরকে নিয়ে ওপেনিংয়ে নেমে প্রথমেই সে চাপ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন সৌম্য সরকার। উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ৪৯ রান। ওয়ানডে আর টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পর এই কেবল একটাই ফরম্যাটে দলে জায়গা পাকা ছিল সৌম্যর। দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টিতে ছন্দ দেখিয়েছিলেন, তা বহাল রেখেছেন এই ম্যাচেও। ৩০ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করার পরই আউট হয়ে যান। নিজেকে অবশ্য দুর্ভাগা ভাবতে পারেন সৌম্য। লেগ স্পিনার জীবন মেন্ডিসের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন, তাতে পেশিতে টান পড়ে ব্যাটে লাগাতে পারেনি। লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলেও এলবডবিøও দিয়ে দেন আম্পায়ার। সৌম্যর ৩১ বলে ৫১ রানের ইনিংসটা থেমে যায় অনাকাঙ্খিতভাবে। টিভি রিপ্লে বলছে রিভিউ নিলে বাঁচতে পারতেন সৌম্য। রিভিউ না নিয়ে সাপোর্ট স্টাফদের সহায়তায় মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
ওয়ানডাউনে নেমে প্রথমে সৌম্যের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। দ্বিতীয় উইকেটে তাদের ৫১ রানের জুটিতে রানের চাকা ছিল সচল। পরে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৭৩ রানের জুটি। ৪৩ রান করা মাহমুদউল্লাহর আউটের পর শেষটাতেও রান বেড়েছে কেবল মুশফিকের ব্যাটে। ২০১৩ সালের নভেম্বরের পর টি-টোয়েন্টিতে ৩৭ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিও তুলে নেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। মাঝে সব্বির রহমান এলেন আর গেলেন। তবে আগের সেরা ৫০ ছাড়িয়ে মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৬৬ রানে।
ত্রিদেশীয় সিরিজও ও টেস্টের গøানি ভুলতে রেকর্ড গড়া দলীয় স্কোর নিয়ে নির্ভার হয়েই বোধহয় ভুলটা করে বসে বাংলাদেশ। ফিল্ডিংয়ে নতুনদের কেতন উড়েছে ঠিকই তবে নির্বিষ বোলিংয়ে দিতে হয়েছে তারই খেসারত। লক্ষ্য খুব একটা সহজ নয়। অন্তত এই উইকেটেই ক’দিন আগেই ৫ দিনের টেস্ট আড়াই দিনে শেষ হওয়ার নজির সেটিই বলছে। সেই আতঙ্ক বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি লঙ্কান দুই ওপেনার। শুরু থেকেই ব্যাট হাতে অপু, সাইফদের উপড় চড়াও ছিলেন কুশল মেন্ডিস ও গুণাথিলাকা। ফলও পায় হাতে হাতে। মাত্র ৪.২ ওভারেই স্কোর বোর্ডে জমা হয় দলীয় ৫০। আর মাত্র ৩ রান যোগের পরই অভিষিক্ত অপুর হাত ধরে প্রথম সাফল্য ধরা দেয় বাংলাদেশের ঝুলিতে। তার ঘূর্ণিতে ১৫ বলে ৩০ রান করে স্টাম্পড হয়ে ফিরে যান গুনাথিলাকা। বেরিয়ে এসে তার ওপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন দানুশকা গুনাথিলাকা। বলে-ব্যাটে করতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। বল গøাভসে নিয়ে বেলস ফেলে দেন মুশফিক। ভাঙে কুসল মেন্ডিসের সঙ্গে ৫৩ রানের উদ্বোধনী জুটি।
তাতে দমে না গিয়ে মাত্র ২৫ বলে নিজের প্রথম টি-২০ ফিফটি তুলে নেন মেন্ডিস। এর পর অবশ্য বেশিক্ষণ সহ্য করতে হয়নি তার তাÐব। আরেক অভিষিক্ত আফিফ হোসেনর বলে লং অফে সৌম্যর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার। তবে তার আগে ৫৩ রানের ইনিংসে খেলেছেন ৮টি চার ও ২টি ছক্কার মার। মাঝে অপুর দ্বিতীয় শিকার হয়ে থারাঙ্গা এলেন আর গেলেন। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই খুব দ্রæতই রুবেল ফেরান ডিকভেলাকে (১১)। তবে তাকে দীর্ঘায়িত হয়েছে কেবল, জয় বঞ্চিত করা যায়নি শ্রীলঙ্কাকে। বাকি কাজটুকু শানাকাকে নিয়ে অভিজ্ঞা হাতে সারেন থিসারা পেরেরা। ৬৫ রানের জুটিতে দলকে ভেড়ান জয়ের বন্দরে। ১৮ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় পেরেরা অপরাজিত ছিলেন ৩৯ রানে আর ২৪ বলে শানাকার ৪২ রানের ইনিংসটি ৩টি করে চার-ছক্কায় সাজানো।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, ১ম টি-২০
টস : বাংলাদেশ, মিরপুর
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
জাকির বোল্ড গুণাথিলাকা ১০ ৯ ১ ০
সৌম্য এলবি ব মেন্ডিস ৫১ ৩২ ৬ ২
মুশফিক অপরাজিত ৬৬ ৪৪ ৭ ১
আফিফ ক ডিকভেলা ব মেন্ডিস ০ ২ ০ ০
মাহমুদউল্লাহ ক ধনঞ্জয়া ব উদানা ৪৩ ৩১ ২ ২
সাব্বির বোল্ড পেরেরা ১ ২ ০ ০
আরিফুল অপরাজিত ১ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ৩, নো ১, ও ১৬) ২১
মোট (২০ ওভার ৫ উইকেট) ১৯৩
উইকেট পতন : ১-৪৯ (জাকির), ২-১০০ (সৌম্য), ৩-১০০ (আফিফ), ৪-১৭৩ (মাহমুদউল্লাহ), ৫-১৮৬ (সাব্বির)।
বোলিং : মাদুশঙ্কা ৩-০-৩৯-০, গুণাথিলাকা ২-০-১৬-১, উদানা ৪-০-৪৫-১, পেরেরা ৪-০-৩৬-১, ধনঞ্জয়া ৪-০-৩২-০, মেন্ডিস ৩-০-২১-২।
শ্রীলঙ্কা ইনিংস রান বল ৪ ৬
মেন্ডিস ক সৌম্য ব আফিফ ৫৩ ২৭ ৮ ২
গুণাথিলাকা স্ট্যাম্প ব অপু ৩০ ১৫ ৬ ০
থারাঙ্গা ক আফিফ ব অপু ৪ ৭ ০ ০
শানাকা অপরাজিত ৪২ ২৪ ৩ ৩
ডিকভেলা ক সাইফ ব রুবেল ১১ ৯ ২ ০
পেরেরা অপরাজিত ৩৯ ১৮ ৪ ৩
অতিরিক্ত (লেবা ৩, ও ১২) ১৫
মোট (৪ উইকেট, ১৬.৪ ওভার) ১৯৪
উইকেট পতন : ১-৫৩ (গুণাথিলাকা), ২-৯০ (মেন্ডিস), ৩-৯২ (থারাঙ্গা), ৪-১২৯ (ডিকভেলা)।
বোলিং : অপু ৪-০-২৫-২, সাইফউদ্দিন ২-০-৩৩-০, মাহমুদউল্লাহ ২-০-২৩-০, রুবেল ৩.৪-০-৫২-১, মুস্তাফিজ ৩-০-৩২-০, আফিফ ২-০-২৬-১।
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে পরাজিত।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : কুশল মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)।
সিরিজ : ২ ম্যাচে ১-০তে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।