পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৃহত্তর চট্টগ্রামে শহর-গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্র ব্যাপক আলোচনায় বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
উচ্চপদস্থ একজন সাবেক সরকারি আমলা চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন বিদেশে। চট্টগ্রামে ফিরে জানতে পারলেন, রাজধানী ঢাকার বুকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারাদেশ থেকে আগত আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের স্মরণকালের সর্ববৃৃহৎ অথচ সুশৃঙ্খল এক মহাসম্মেলন হয়ে গেল সেই ২৭ জানুয়ারি (শনিবার)। এতে তিনি অত্যন্ত খুশী হয়েছেন জানিয়ে নিজের অনুভূতির কথায় বললেন, মহাসম্মেলনে যারা এসেছিলেন তারা দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামা মাদরাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, মসজিদের খতিব-ইমাম। এছাড়া বাইরের কিংবা দলীয় কোনো লোক ছিলেন না। আলেম সমাজ সমগ্র বাংলাদেশকে এবং দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ও চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। তাই এই মহাসম্মেলন ঐতিহাসিক গুরুত্বের দাবি রাখে। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন একটা সফল আয়োজন করলো। সরকারও নিশ্চয়ই তাদের দাবি-দাওয়া ও প্রত্যাশাগুলো অতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এটাই আমার বিশ্বাস। অতিস¤প্রতি ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত পাড়াগাঁয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে রীতিমতো ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ হলো। সেখানে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এগিয়ে এসে হাত মেলাতে মেলাতে বললেন, আপনাদের ইনকিলাব পত্রিকার সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন সাহেবের নেতৃত্বে ঢাকায় আলেম-মাশায়েখদের এতবড় মহাসম্মেলন হলো। সেখানে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-মিনিস্টার, উপদেষ্টা, এমপি বক্তব্য রেখে গেলেন। এই সম্মেলনে দেশের তৌহিদী জনতার ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। আলেমদের এবং ইসলামী আদর্শকে অবহেলা করার দিন শেষ।
কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম নগরীর জনবহুল এলাকা বাকলিয়ায় গিয়েছিলাম একজন প্রবীণ সংবাদপত্রসেবী আলহাজ মোঃ ইসহাকের নামাজে জানাজায় অংশ নিতে। পরিচয় পেয়েই ছুটে এসে আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরলেন সেই জানাজার ইমাম ও স্থানীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ আবদুর রশীদ কাদেরী। তিনি বলেন, সাংবাদিক ভাই- ঢাকায় যে বৃহত্তম আলেম-ওলামা সম্মেলনটি হয়ে গেলো তাতে আমরা খুবই আনন্দিত ও আশাবাদী। মাশাআল্লাহ। আলেমদের সম্মান ও মর্যাদা আগামীতে আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। আমি জানতে চাইলাম, তিনি মহাসম্মেলনে গিয়েছিলেন কিনা। জবাবে বললেন, যাইনি তবে আমার অধ্যক্ষ সাহেব সেখানে ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে ফিরে আসার পরপরই সবাই একত্রিত হয়ে বসে মহাসম্মেলনের সবকিছু জানতে পারলাম। তাছাড়া দৈনিক ইনকিলাব ও ফেইসবুকেও দেখেছি। লাখ লাখ আলেম-ওলামার ঢল। গত শনিবার সকালে বন্দরনগরীর আগ্রাবাদে একটি বেসরকারি শিপিং অফিসে চায়ের আড্ডায় আলাপচারিতায় উঠে আসে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসম্মেলন প্রসঙ্গ। একজন জানতে চাইলেন, আচ্ছা বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসম্মেলনে কত লোক সমাগম ঘটেছিল? অন্যজন বললেন, দুই-আড়াই লাখের তো কম হবে না। তখন অপর একজন মন্তব্য করলেন, বাংলাদেশের আলেম-ওলামা মাদরাসা শিক্ষকরা আমাদের জাতীয় নির্বাচন বলি আর স্থানীয় নির্বাচন বলি সবখানে সবসময়ই একটা বড় ফ্যাক্টর। আলেমরা তো তৃণমূলের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই বাস্তবতাটা সবাইকে বুঝতে হবে। একজন এ সময় স্মরণ করছিলেন, সাবেক ধর্মমন্ত্রী মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ)-এর বিচক্ষণ নেতৃত্বের ফলেই এদেশে মাদরাসা শিক্ষক ও আলেমদের মান-মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। এর আগে আলেমরা ছিলেন চরম অবহেলিত। আলাপচারিতায় একজন মেরিন প্রকৌশলী জানালেন, আমার আব্বার প্রিয় পত্রিকা ছিল ইনকিলাব। তাও তো মাওলানা এম এ মান্নান প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
এদিকে সফল-সার্থক মহাসম্মেলন সম্পন্ন হয় ২৭ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তবে এর রেশ পুরোদমেই জিইয়ে আছে এখনও এক সপ্তাহ পরও। মহাসম্মেলনের আওয়াজ এবং এর চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে বন্দরনগরীসহ সমগ্র বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের শহর-গ্রাম-গঞ্জে। আজ সবখানেই আশা-ভরসাস্থল হিসেবে কেন্দ্রবিন্দুতে আলোচিত একটি নাম বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। আর তার সিপাহ্সালার জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন এবং জমিয়াতের মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা শাব্বির আহমদ মোমতাজীর নাম।
চট্টগ্রাম ঐতিহাসিকভাবে ‘বা’বুল ইসলাম’ বা ‘ইসলামের প্রবেশদ্বার’। চট্টগ্রামকে বলা হয় ‘বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি’। এ অঞ্চলের প্রাচীন নাম ‘ইসলামাবাদ’। বৃহত্তর চাটগাঁর মানুষজন দেশের অন্যকোনো অঞ্চলের তুলনায় ইসলামের আদর্শ ও চেতনার প্রতি বেশিই অনুরাগী। বেশিই ধর্মপ্রাণ। অধিকতর সচেতন। রাজনীতিতে সচেতনতাও বেশি। কেননা শত শত বছরকালে আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার চট্টগ্রাম। এই প্রেক্ষাপটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলন থেকে যে মহাজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে সেই অতিসা¤প্রতিক ঘটনার ঢেউ ও রেশ বেশিমাত্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চলব্যাপী। মানুষের মুখে মুখেই তা হরহামেশা উঠে আসছে।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৭ তারিখের মহাসম্মেলনের আওয়াজ ও চেতনা গত এক সপ্তাহ যাবত বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলজুড়ে বঙ্গোপসাগরের জোয়ারে ঢেউয়ের মতোই ছড়িয়ে পড়ছে প্রধানত দুই ভাবে।
এক. চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসম্মেলনে যারা শামিল হতে পারেননি বা যারা আলেম-ওলামা নন; তারাও সেই মহাসম্মেলনে উপস্থিত সহকর্মী, পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা পরিচিতজন আলেমদের কাছ থেকে খোঁজ-খবর পেয়ে গেছেন। সেখান থেকে ফিরে আসা মাদরাসা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ প্রতিনিধিদের বক্তব্য বিবরণ থেকে এক ঐতিহাসিক সফল আয়োজনের বিষয়ে অবহিত হয়েছেন। এ নিয়ে তারা পরম সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। একে অপরের কাছে বর্ণনা তুলে ধরছেন। দেশের কোথাও কোনো পোস্টারিং, ব্যানার, বিলবোর্ড, মাইকিং, সভা-মিছিল, টাকা-পয়সা ‘বিলানো’র মতো কোনো রকমের ‘খেলা’ এমনকি কৃত্রিমতা ছাড়াই শর্টকাট নোটিশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসম্মেলনটি স্বতঃস্ফূর্ততা এবং সফলতার মাপকাঠিতে সকলের সামনে এসে এখন যেন এক মহাবিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রসঙ্গে অবশ্য জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন সেদিনই (২৭ জানুয়ারি) এই প্রতিবেদককে শুধুই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছিলেন, ‘মহাসম্মেলনের সফলতার পেছনে সবকিছুই আল্লাহতায়ালার রহমত’।
দুই. রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসম্মেলনের খবরাখবর বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসী ওইদিনই টিভি চ্যানেলসমূহ, দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ-মিডিয়া, ফেইসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানেই কিন্তু শেষ হয়নি। দৈনিক ইনকিলাব ফেইসবুক পেজ, ইউটিউব ও বিভিন্ন লিংকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২৭ তারিখে সারাদেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ খতিব-ইমামদের অভূতপূর্ব মহাসমুদ্রের সেই উত্তাল জাগরণ ‘লাইভ ভিডিও’ ভাইরাল হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। সেসব মিডিয়ায় উক্ত মহাসম্মেলনের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, উদ্বোধক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন ও মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা শাব্বির আহমদ মোমতাজীসহ বিশিষ্ট বক্তাদের প্রদত্ত বক্তব্য লাইভ দেখতে পাচ্ছেন এখনও। সফল-সার্থক মহাসম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে চাটগাঁর আলেম সমাজসহ সচেতন সর্বস্তরের তৌহিদী জনতার মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছে অপরিসীম আনন্দ, উৎসাহ-উদ্দীপনা। সাফল্যে উজ্জীবিত হয়েছেন আলেম-মাশায়েখগণ। যারা ২৭ জানুয়ারির সেই ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন এবং আরও যারা সেখানে ছিলেন না তাদেরকেও মেলবন্ধনে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে মহাসম্মেলন। এমনিভাবেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের এক-অভিন্ন স্রোতধারা আর চেতনার সাথে মিলিত হয়েছে গোটা চট্টগ্রাম। সমগ্র বাংলাদেশ। আলেমগণের অভিমত, মহাসম্মেলনের সফলতা এখানেই। এর রেশ যেন কখনও শেষ হওয়ার নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।