নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইমরান মাহমুদ : গড়নে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। স্বভাবে ধীর, শান্ত। অথচ সাদা পোষাকে যে দুর্দান্ত তার ব্যাটিং তাতে শৈল্পিক ছোঁয়ায় নিজেকে সুরভিত করেছেন অনেক আগেই। মাঝে হাতুরুসিংহে যুগে ছিলেন অনেকটাই উপেক্ষিত। সময় বদলেছে। বদলেছে কোচ, অধিনায়কও। সময় এসেছে আবারও সুবাস ছড়ানোর। হয়েছেও তাই। চট্টগ্রাম টেস্টে ছুটছে রানের ফোয়ারা। ধরা দিচ্ছে রেকর্ড আর মাইলফলক। দিনটি হয়ে উঠেছে স্বপ্নময়। শেষদিকে জোড়া ধাক্কার অস্বস্তি। তাতে এতটুকু ¤øান হয়নি আলোর ঝিলিক। দিন শেষেও যে জ্বলজ্বল করছে মুমিনুল হক সৌরভের ব্যাট।
রেকর্ড গড়া দিনের মেরুদÐ রেকর্ড গড়া এক জুটি। তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশকে প্রথম দুইশ রানের জুটি উপহার দিয়েছেন মুমিনুল ও মুশফিকুর রহিম। তবে এই জুটির ভাঙন যেভাবে, সারাদিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে আক্ষেপের প্রহরটুকুর জন্মও সেখানেই।
দিনের শেষ বেলায় সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন মুশিফক। ব্যক্তিগত অর্জন হারানোর আক্ষেপের রেশ না মিলাতেই দলের জন্য আরেকটি ধাক্কা। পরের বলেই বল ছেড়ে দিয় বোল্ড লিটন দাস। তার পরও দিনশেষে অনেকটা এগিয়ে বাংলাদেশ মুমিনুল টিকে আছেন বলেই। তার সঙ্গে শেষ সময়টুকু কাটিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।
সেঞ্চুরি খরা কাটানোর দিন, অনেক ক্ষোভ আর অভিমানের জবাব দেওয়ার দিনে অসাধারণ ব্যাট করে মুমিনুল অপরাজিত ১৭৫ রানে। প্রথম দিনে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৩৭৪। টেস্ট ক্রিকেটে দেড় যুগের পথচলায় প্রথম দিনে বাংলাদেশের এটিই সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চ ছিল ৩৬৫। সব দিন মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। সেই সাথে নিজের একটি মাইলফলকও ছুঁয়েছেন বাংলাদেশের লিটল মাস্টার। ম্যাচে প্রয়োজন ছিল ১৬০ রান। অসাধারণ ব্যাটিংয়ে সিরিজের প্রথম দিনেই কাক্সিক্ষত সেই ঠিকানায় পৌঁছে গেছেন পকেট ডায়নামাইট খ্যাত এই ব্যাটসম্যান। রেকর্ড গড়েই ছুঁলেন ২ হাজার টেস্ট রান। দ্রততম দুই হাজারী ক্লাবের সদস্য হতে মুমিনুলের লেগেছে ৪৭ ইনিংস। ৫৩ ইনিংসে ২ হাজার করে আগের রেকর্ডটি ছিল এই তামিমেরই।
এই চট্টগ্রাম দু হাত ভরে দিয়েছে তাকে। টেস্টে যে ৫টি সেঞ্চুরি তার চারটিই এসেছে এই মাঠে। তবে গতকাল যে ব্যাট করলেন তাতে তাছিয়ে গেলেন নিজেকেও। প্রথম ১২ টেস্টেই ৪ সেঞ্চুরি করা মুমিনুল পঞ্চম সেঞ্চুরিটি পেলেন ১৩ টেস্ট অপেক্ষার পর! আর মাত্র তিন বল আগে সেঞ্চুরিটি করলে হয়ে যেতেন টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে দ্রæততম শতকের মালিক। সেখানেও অবিচল লর্ডসে ২০১০ সালে তামিমের করা ৯৪ বলের সেঞ্চুরিটি।
দল তখন অপেক্ষায় আরেকটি মাইলফলক উদযাপনের। সেঞ্চুরির দুয়ারে কড়া নাড়ছিলেন মুশফিক। শ্রীলঙ্কা তখন নিয়েছে দ্বিতীয় নতুন বল। একটু একটু করে মুশফিককে অফ স্টাম্পের বাইরে টেনে আনছিলেন সুরাঙ্গা লাকমল। শেষ পর্যন্ত ফাঁদে পা দিয়েই স্টাম্পের একটু বাইরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে মুশফিক আউট ৯২ রানে। দুজনের জুটি থামল ২৩৬ রানে। সব জুটি মিলিয়ে বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ জুটি। তবে এরই মাঝে মুশফিকের ঝুলিতে উঠেছে আরেক অর্জন।
মধ্যাহৃ-বিরতির কিছুক্ষণ পর এই ভেন্যুতে এক হাজার রান পূর্ণ করেন মুশফিক। ফলে বাংলাদেশের সাতটি টেস্ট ভেন্যুর মধ্যে তৃতীয় একহাজার রান পূর্ণ করা ব্যাটসম্যান হলেন মুশফিক। বাংলাদেশের ভেন্যুগুলোর মধ্যে বর্তমানে টেস্ট ফরম্যাটে একমাত্র ১ হাজার রান করা ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৬ ম্যাচে ১২৩৩ রান রয়েছে সাকিবের। এই ভেন্যুতে ১৫ ম্যাচে ১১১৯ রান তামিমের।
শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলতে নামার আগে এই ভেন্যুতে এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচের ২৩ ইনিংসে ৯৯৮ রান করেছিলেন মুশফিক, গড় ৪৫.৩৬। এরমধ্যে ১টি সেঞ্চুরি ও ৬টি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে। এই ভেন্যুতে ১টি মাত্র সেঞ্চুরি ২০১০ সালে করেছিলেন মুশি। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৪ বলে ১৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০১ রান করেন তিনি। তারপরও টেস্টটি ১১৩ রানে হেরেছিলো বাংলাদেশ। এই ভেন্যুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ রান তামিম ইকবালের। ১৪ ম্যাচের ২৬ ইনিংসে ৮৫৫ রান রয়েছে তামিমের। ১৪ ম্যাচের ২৫ ইনিংসে ৭০৭ রান নিয়ে তৃতীয় স্থানে সাকিব আল হাসান।
শেষ বেলায় নাইটওয়াচম্যান না নামিয়ে বাংলাদেশ নামায় লিটন দাসকে। কিন্তু লাকমলের অফ স্টাম্পে থাকা বল পা বাড়িয়েও ছেড়ে দিলেন লিটন। কী ছিল তার মনে, কে জানে! উড়ল বেলস, উল্লাসে মাতল লঙ্কানরা। পরের সময়টুকুতে অস্বন্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত আর বিপদ হয়নি। দিনজুড়ে যেমন ছিলেন, মুমিনুল শেষটাও করেছেন দারুণ নির্ভরতায়। নামের পাশে ঝলমলে অপরাজিত ১৭৫। ২০৩ বলের ইনিংসে ১৬টি চার, ১টি ছক্কা। এই দিনে যেন আউট হতে পারতেনই না মুমিনুল!
গতকাল শুরু থেকেই যেন দু’হাত ভরে দিচ্ছিল ভাগ্য। ভাগ্যের ফেরে পাওয়া অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্টেই টসে জিতলেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটিংয়ে নেমেও দুই ওপেনার তামিম-ইমরুলে শুরুটাও হল দুর্দান্ত। ম্যাচেই দ্বিতীয় ওভারেই লাহিরু কুমারাকে মারেন টানা তিনটি বাউন্ডারি।
ম্যাচের আগে উইকেট স্পিনস্বর্গ হবে বলে ধারণা করা হলেও প্রথম দিনে ছিল দারুণ ব্যাটিং সহায়ক। তামিমের ব্যাটে শুরুর সেই দ্যুতি ছিল পরের ওভারগুলোতেও। পেস বলে খেলেছেন দারুণ সব ড্রাইভ। স্পিনে উড়িয়ে মেরেছেন ছয়। আরেকপাশে ইমরুল ছিলেন টিকে। তামিমের সৌজন্যে জুটির পঞ্চাশ এসে দশম ওভারেই। দশ ইনিংসে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির প্রথম ফিফটি জুটি। তামিমের ২৫তম টেস্ট ফিফটি ৪৬ বলে। তামিমের সম্ভাবনাময় ইনিংসটি থামে ফিফটির পরপরই। দিলরুয়ান পেরেরার দারুণ একটি বল আর তামিমের ক্ষণিকের অমনোযোগ, ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড।
বাংলাদেশের রানের ¯্রােত তাতে থামেনি। তামিমের বিদায়ে একটু জেগে ওঠেন ইমরুল। ২০ ওভারেই দল পেরিয়ে যায় একশ। তবে তামিমের মত শুরুটাকে বড় করতে পারলেন না ইমরুলও। বিরতির আগে বাংলাদেশের উইকেট হারানোর পুরোনো ধারাকে ধরে রেখে লাঞ্চের আগের ওভারে ৪০ রানে আউট বাঁহাতি ওপেনার।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, ১ম টেস্ট ১ম দিন
টস : বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম বোল্ড পেরেরা ৫২ ৫৩ ৬ ১
ইমরুল এলবিডবিøউ ব সান্দাকান ৪০ ৭৫ ৪ ০
মুমিনুল ব্যাটিং ১৭৫ ২০৩ ১৬ ১
মুশফিক ডিকভেলা ব লাকমাল ৯২ ১৯২ ১০ ০
লিটন ব লাকমাল ০ ১ ০ ০
মাহমুদউল্লাহ ব্যাটিং ৯ ২০ ২ ০
অতিরিক্ত (নো ব ৪, ও ২) ৬
মোট (৯০ ওভার, ৪ উইকেট) ৩৭৪
উইকেট পতন : ১-৭২ (তামিম), ২-১২০ (ইমরুল), ৩-৩৫৬ (মুশফিক), ৪-৩৫৬ (লিটন)।
বোলিং : লাকমাল ১৭-৩-৪৩-২, কুমারা ১২-১-৬৪-০, পেরেরা ২৪-৪-৯৮-১, হেরাথ ২০-১-১০০-০, সান্দাকান ১৩-১-৫৮-১, সিলভা ৪-০-১১-০।
(প্রথম দিন শেষে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।