পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : অনন্য এক ইতিহাস। আলেম-ওলামা-মাশায়েখের মহাজাগরণ। বিস্তৃত হলো নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসম্মেলন জনসমুদ্রে রূপ দিয়ে ইতিহাস গড়ল। ঘটাল বিপ্লব, যা কল্পনার বাস্তবরূপ। এটিতে নতুন এক অনুভবে ঐক্যবোধ জাগ্রত হলো। প্রতিফলিত হলো ভীষণরকম জনমুখিতার দিকচিহ্ন। এটি ঐক্যতানের বাতাবরণে নিঃসন্দেহে উদারতর সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার পরিচায়ক, আলোকিত দিক। সংগঠনটির গণভিত কতটা সুদৃঢ় তার বহিঃপ্রকাশ এই মহাসম্মেলন। এতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পেলো, চলে গেল ‘ইউনিক’ অবস্থানে- এটি কারো অস্বীকার করার উপায় নেই। তাদের একতা ও সামর্থের অনন্য ইতিহাস সৃষ্টিতে রচিত হলো নব অধ্যায়ের। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির সুলভ উপায়ের কোনো বাসনা নেই তাদের। সময়ের প্রয়োজনে সবাই হৃদয়ের উপলব্ধি থেকে উজ্জ্বল নিদর্শন রেখেছেন। করেছেন অভাবনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন। শামিল হয়েছেন এক কাতারে, জমিয়াতের পতাকাতলে। এটি সম্ভব হয়েছে- সমবেতদের মধ্যে একটা মনননির্ভর আবেগের ব্যাপার ছিল। মহাসম্মেলনটি সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে এ কারণে যে, সাধারণদের কোনো সম্মেলন ছিল না, এটি ছিল মানুষ গড়ার কারিগর লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষক, আলেম-ওলামা-মাশায়েখদের, যারা নিজ নিজ এলাকায় সর্বস্তরেরর মানুষের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি, মুরব্বি অর্থাৎ অসাধারণদের। সে জন্য মহাসম্মেলনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
চারিদিকে আলোচিত হচ্ছে, ঐতিহাসিক মহাসম্মেলনের মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষকদের একমাত্র পেশাজীবী অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আরো একধাপ এগিয়ে গেল। প্রত্যাশা আস্থা বিশ্বাসের পারদ উঠল তুঙ্গে। মাদরাসা শিক্ষকদের ভরসাস্থল সংগঠনটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালনে সাংঘাতিক যত্মবান তা আরো একবার প্রমাণিত হলো।
এ কথা শতভাগ সত্য, মাদরাসা শিক্ষা জাতিকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করতে এবং রাষ্ট্রীয় সামাজিক সঙ্কটেও আলেম সমাজ সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা আলেমকুল শিরোমণি মরহুম আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:)-এর নামটি দেশের লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষকের হৃদয়ে আজ অনুরণিত হচ্ছে। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলেই সংগঠনটি আজ মহিরুহে পরিণত হয়েছে। অবহেলিত মাদরাসা শিক্ষক ও কর্মচারীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। প্রচন্ড আশাবাদী হয়ে উঠেছেন চাকরি জাতীয়করণের প্রাণের দাবিও পূরণ হবে অচিরেই।
আলেম-ওলামা-মাশায়েখের ঐতিহাসিক সফল মিলনমেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করে দক্ষতা, যোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শীতার স্বাক্ষর রেখে ‘গ্রেট অরগানাইজার, গ্রেট লিডার, মাদরাসা শিক্ষকদের কিং, আশা-ভরসার প্রতীক’ হয়ে উঠলেন সংগঠনের সভাপতি এবং দেশ ও দশের পক্ষের জনপ্রিয় দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক প্রথিতযশা সাংবাদিক এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কতটা জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী তা বলাই বাহুল্য। এত বড় মহাসম্মেলন সুন্দরভাবে সমাপ্তের মাধ্যমে তিনি তা প্রমাণ করেছেন, নজির স্থাপন করেছেন। তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। দীর্ঘ পরিশ্রমের পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। মহামিলনের মধ্যমণি ছিলেন তিনি। সর্বমহল থেকে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন, হয়েছেন অভিনন্দিত। মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের অরাজনৈতিক এই সংগঠনটি এখন ‘আনপ্যারালাল’। সংগঠনটি মহাসম্মেলনের মাধ্যমে উজ্জ্বলতর আকারে প্রতিভাত হলো। চিরচেনা সভা-সমাবেশ ছিল না, ছিল সম্মেলনটির ভিন্নতা। মহাসম্মেলনের জনসমুদ্রের ঢেউ-এ ভেসে গেছে নানা সময়ে বিষোদ্গার করা কুচক্রিরা। সংগঠনটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের হতাশার বাষ্প ঘণীভ‚ত করেছে এটিও সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়। উপরন্তু ক্লিন ইমেজের শক্তিশালী সংগঠনটি ভোট রাজনীতিতে এখন রীতিমতো ‘কাউন্টেবল’। ভোটের ক্ষেত্রে একটা বড় ফ্যাক্টর বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আগামী দিনগুলোতে এ দেশের আলেম সমাজকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া ছাড়া কারোরই উপায় থাকবে না। কারণ তারাই সমাজের শক্তিশালী অংশ, আদর্শবান সাহসী, নীতিবান, নিরপেক্ষ ব্যক্তি, দক্ষ-বলিষ্ঠ সমাজ অভিভাবক।
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে সুন্দরবনের শ্যামনগর, রাজশাহীর পদ্মাপাড় থেকে বাগেরহাটের সমুদ্রপাড় পর্যন্ত সারাদেশের চারিদিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সফল শান্তিপূর্ণ মহাসম্মেলন। সোহরাওয়ার্দীর জনসমুদ্র প্রত্যক্ষ করে দারুণভাবে আন্দোলিত আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষকরা। রীতিমতো অবাক হয়েছে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থার অনেক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ইমামসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ। তাদের প্রতিক্রিয়ায় দেয়া মন্তব্য ও বক্তব্য থেকেই এসব কথা উঠে এসেছে। তাদের মোদ্দা কথা, একতা- সামর্থ্যরে অনন্য ইতিহাস এটি। তাদের অনেকেই বলেছেন, অভাবনীয় অভ‚তপূর্ব শান্তিপূর্ণ সম্মেলন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপহার দিয়ে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ‘লাইমলাইটে’ এসেছে। মহাসম্মেলনকে আলেম-ওলামা-মাশায়েখ, মাদরাসা শিক্ষক ও সমাজের সম্মানীয়দের নজিরবিহীন মহা-মিলনমেলা হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা কথা প্রসঙ্গে বলেন, ইনকিলাবের বাহাউদ্দীন সাহেব ‘গ্রেট অর্গানাইজার’ তা প্রমাণ করে দিলেন। তার নেতৃত্ব এতটা সুদৃঢ়, তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। আর জমিয়াতুল মোদার্রেছীন যে এত লোকবল আছে, তা ছিল ধারণার বাইরে।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন ফিল্ড অফিসারের প্রতিক্রিয়া- ‘আরে ভাই একি দেখলাম, এত লোক এলো কিভাবে, কোনো হৈহুল্লোড় নেই, নেই ধাক্কাধাক্কি, একেবারে শান্তশিষ্টভাবে সবাই এলেন, বসলেন, অতিথিদের বক্তব্য শুনলেন, আবার যে যার মতো সুশৃঙ্খলভাবে চলে গেলেন। সত্যিই অবাক হওয়ার বিষয়। তারও বক্তব্য- এতটা শক্তিশালী এই সংগঠনটি এটি জানা ছিল না। ঢাকায় কর্মরত একজন সরকারি কর্মকর্তা বললেন, হঠাৎ দেখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নতুন চেহারা, উদ্যান ছাড়াও আশেপাশে শুধু মানুষ আর মানুষ। একি হলো, এত হুজুরের জমায়েত ঘটল কেন, ওরে বাবা, বিশাল ব্যাপার। পরে জানলাম, এটি ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দীনের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সম্মেলন। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী যশোর জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি যশোর আমিনিয়া আলিয়া মাদরাসার ভইস-প্রিন্সিপাল মাওলানা নুরুল ইসলাম বিশাল বহর নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসম্মেলনে যোগ দিতে যান। তিনি সম্মেলন শেষে বললেন, ‘আমার জীবনে এত বড় সম্মেলন দেখিনি। শিক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সম্মানিত অতিথিবৃন্দ খুবই খুশি হয়েছেন, তাদের বক্তব্যের সুরও ছিল এরকম। তিনি বললেন, আমি অভিভ‚ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন ও মহাসচিব প্রিন্সিপাল আলহাজ মাওলানা শাব্বির আহমেদ মোমতাজীর নিরলস প্রচেষ্টার ফল এটি। এই মহাসম্মেলনের আগে সারাদেশে বিশেষ করে বিভাগ ও গুরুত্বপূর্ণ জেলায় নেতৃবৃন্দ সফর করেছেন। এতে মাদরাসা শিক্ষকরা দারুণভাবে উজ্জীবিত হন। তার মতে, সারাদেশে মাদরাসা শিক্ষক ও আলেম ওলামাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসম্মেলন। অবশ্যই এটি ইতিহাস হয়ে থাকবে।
জেলা পর্যায়ের এক রাজনৈতিক নেতা টিভিতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিশাল সম্মেলন দেখে মোবাইলে বললেন, এ তো দেখছি বিশাল ব্যাপার। আপনাদের বাহাউদ্দীন তো বিশাল কান্ড ঘটিয়ে ছাড়লেন। একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ পরদিন পত্রিকায় জনসমুদ্রের ছবি ও মন্ত্রীদের বক্তব্য পড়ে বললেন, সত্যিকথা আমার ধারণা ছিল না বাহাউদ্দীনের এই সংগঠনটি এতটা শক্তিশালী। ঢাকায় কর্মরত ঝিনাইদহের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বললেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন এটি জানা ছিল, কিন্তু ধারণা ছিল না সংগঠনটির শেকড় এত গভীরে। বিরাট শক্তিশালী বলেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সফল সম্মেলন করতে পেরেছে। বিরাট শোডাউন দিলো রে ভাই। নোয়াখালীর এক ব্যক্তি থাকেন ঢাকার মৎস্য ভবনের পাশে। তার প্রতিক্রিয়া স্মরণকালের বিশাল সমাবেশ। সংগঠনটিতে যে এত বড়, তাদের রয়েছে এত আলেম-ওলামা, তা ছিল কল্পনাতীত। ২৭ জানুয়ারি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ঐতিহাসিক মহাসম্মেলন ও জনসমুদ্র নিয়ে অগণিত মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এর রেশ যেন কাটছেই না। দিন যত যাচ্ছে ততই বিষয়টি নানা মহলে চিন্তাভাবনা আলোচনা বাড়ছে।
আসলেই সোহরাওয়ার্দীর মহাজাগরণ নিয়ে ভাবনার শেষ নেই বিভিন্ন মহলে। অবিসংবাদিত সত্য, সারাদেশের মাদরাসা শিক্ষকরা দারুণভাবে উজ্জীবিত হয়েছেন। সৃষ্টি হয়েছে প্রাণচাঞ্চল্যের। সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজির হয়ে ন্যূনতম ক্লান্তিবোধ করেননি মাদরাসা শিক্ষকরা। তাদের মধ্যে ছিল না অধৈর্য্য, বিরক্তি ও হতাশার ছাপ। বরং এমন একটি মর্যাদাশীল সংগঠনের পতাকাতলে থাকতে পেরে সবাই গর্বিত হয়েছেন। নিজেদেরও মর্যাদাবান করে তুলেছেন। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আরো শক্তিশালী হবে, এর পতাকাতলে কাতার আরো বাড়বে- এমন মন্তব্য মাঠপর্যায়ের কয়েকজন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সদস্যের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।