পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : কাবুলে সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যে কারা রয়েছে– এই বিষয়ে কানাডাভিত্তিক গ্লোবাল রিসার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এসব হামলার পেছনে পরাশক্তি কোনও দেশ জড়িত রয়েছে। পরাশক্তির সহযোগিতা ও সমর্থন ছাড়া এ ধরনের হামলা চালানো সম্ভব নয়। সুনির্দিষ্টভাবে উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত কয়েকটি হামলার কথা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জানতো। কিন্তু এই বিষয়ে আফগান সরকারের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এতে এই দাবির স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ হাজির করা হয়নি। কাবুল থেকে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ওয়াসুদ মাদান।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বিলাসবহুল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুক্রবার জঙ্গিরা হামলা চালায়। হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল হত্যা ও রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়া। যাতে প্রমাণ হয়, আফগানিস্তান এখনও যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। ভয়াবহ এই হামলায় অনেক সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভবনের ভেতরে থাকা অনেককেই ‘নিখোঁজ’ বলা হচ্ছে। ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ব্যাপক ভাঙচুর ও যতজনকে পেরেছে হত্যা করেছে। এইসব নৃশংসতার নেপথ্যে কারা?
শুক্রবারের হামলার শোকে মুহ্যমান অবস্থায় থাকা আফগানিস্তানে শনিবার আরও ভয়াবহ হামলা চালানো হয় বিস্ফোরকভর্তি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে। বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, জঙ্গিরা আফগান সেনাবাহিনীর স্থাপনা কাজে লাগিয়ে এই হামলা চালিয়েছে। হামলায় শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অনেকেরই শরীর পুড়ে গেছে, চেনার কোনও উপায় নেই। হামলাটি ছিল জঙ্গিদের হাসপাতাল, হোটেল, দাতব্য সংস্থা ও মসজিদে চলমান ধারাবাহিক সহিংসতার সর্বশেষ নিদর্শন।
আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দা জানানোর প্রকাশ দেখেও এসব হামলার ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, যুক্তরাজ্য দূতাবাস, ভারতীয় দূতাবাস, ন্যাটোর মহাসচিব ও জাতিসংঘের মহাসচিব, এমনকি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও হামলাটির নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তিক্ত বাস্তবতা হলেও ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলাকে আফগানিস্তানে আরও বেশি সেনা মোতায়েন ও দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানকে যৌক্তিকতা দিচ্ছে।
আইএস কিংবা তালেবান যারা এই হামলার দায় শিকার করে তাদের বিদ্রোহী বলা হয় না। বরং ‘মগজ ধোলাইয়ের’ শিকার এক জঙ্গিগোষ্ঠী বলা হয় যাদের জন্য এই যুদ্ধ এখনও চলমান। এই হামলায় প্রাণ হারান নিরীহরা, হামলা চালায় ‘মগজ ধোলাই’ হওয়া যুবকরা। আর পর্দার আড়ালে তাদের নেতারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। ২০১৭ সালে কাবুলের কূটনৈতিক পাড়ায় জার্মান দূতাবাসের কাছে এক হামলায় সবাই আবার সতর্ক হয়ে যায়। এক সূত্র দাবি করে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই তাদের মিত্রদের আতঙ্কে রাখতে চেয়েছিল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-রায়া দাবি করে, যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে এই হামলার নেপথ্যে কাজ করেছে। এমন শক্তিশালী হামলা কোনও পরাশক্তির পক্ষেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কোনও সন্ত্রাসী বা বিদ্রোহী গোষ্ঠী এমন হামলার কথা চিন্তাও করতে পারবে না।
কাবুলে প্রত্যেকটি হামলার পেছনেই কোনও উদ্দেশ্য আছে। বিশ্বের পরাশক্তিরা আফগান যুদ্ধ চায়। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর এই হামলা ঠেকানোর ক্ষমতা নেই। আশরাফ ঘানির সরকারকে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে কোনও লাভ নেই। সরকার কথা বলা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। আফগানিস্তান এমন একটি পরিস্থিতিতে রয়েছে যেখানে দেশটির বাহিনী খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না।
হামলার পরবর্তী সব ঘটনায় আমাদের কাছে কারণ স্পষ্ট হতে থাকে। আফগান নাগরিকরা বুঝতে পারে, এখানে ‘দায় চাপানোর খেলা’ চলছে। কী কারণে হামলা চালানো হয়েছে– আস্তে আস্তে সবার সামনে আসতে শুরু করে।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান নিন্দা জানায়। তাদের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। নিন্দা জানিয়ে যেন তারা বোঝানোর চেষ্টা করলো যে, এই হামলার পেছনে তারা নেই। কিন্তু লাভ হয়নি, প্রতিবারের মতো আফগানিস্তান ও ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানভিত্তিক হাক্কানি গোষ্ঠীর ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। দায় চাপিয়েই যেন কাজ শেষ।
আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলোও এই দায় চাপিয়ে চুপ হয়ে যায়। আফগান সরকার ও সংবাদমাধ্যম পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজে বাঁচার চেষ্টা করে। তারা বলার চেষ্টা করে, পাকিস্তানই এর জন্য দায়ী। তারাই এই হামলার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে। হোটেলে হামলার দুই দিন আগেই মার্কিন দূতাবাস থেকে এক বিবৃতিতে কাবুলে হামলার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কেন এটা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেনি। সেক্ষেত্রে হামলা থামানোর একটা সম্ভাবনা ছিল। আর হামলার পর পাকিস্তানে হাক্কানি নেটওয়ার্কের সম্ভাব্য ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন জোট।
ওয়াসুদ মাদান লিখেছেন, ‘আমি পাকিস্তানকে এই যুদ্ধে নির্দোষ মনে করি না। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দোষ যুক্তরাষ্ট্রের।’ জিহাদের ঘোষণা দেওয়া তালেবান ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী প্রতিদিন অনেক আফগানকে হত্যা করছে। ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থায় দেশকে এনেছে যেখানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছে।
গেøাবাল রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন অভিযান অব্যাহত রাখার জন্য আফগানিস্তানে সহিংসতা জারি রাখা জরুরি। বিশ্বকে তারা দেখাতে চায় যে, আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলছে। নয়তো দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোটের সেনা মোতায়েন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মাদক ব্যবসা পরিচালনা ও খনিজ সম্পদ তুলতে দেশটিতে থাকতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের উষ্ণ সম্পর্ককেও এই অবস্থানে থেকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে তারা। আফগানিস্তানে হামলায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার কোনও প্রমাণ না থাকলেও হোয়াইট হাউস ঠিকই তাদের ইঙ্গিত করেছে। তারা পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, জায়েজ করার চেষ্টা করছে পাকিস্তানে হাক্কানির বিরুদ্ধে হামলাকে। শনিবারের হামলার পরও ট্রাম্প তালেবানের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।