পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসম্মেলন-২০১৮ অবাক কান্ড মনে করছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের লোকজন। যারা আশপাশের অফিসে-দোকানে কাজ করেন, পায়ে হেঁটে ওই পথে নিয়মিত চলাচল করেন, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা জনসমাগম দেখে হয়ে গেছেন হতবাক। তাদের ভাষায় হুজুরদের অনুষ্ঠানে এমন দশা হবে বুঝতে পারলে এক দিনেই কয়েক হাজার টাকা রোজগার করা যেত। ফুটপাতের চায়ের দোকানদার, ফেরি করে চা-বাদাম-পানি বিক্রেতা, টিএসসির পিঠা বিক্রেতা সবার আফসোস, আগে যদি জানতাম! এমনকি টিভি মিডিয়াগুলোর নীতি নির্ধারকরাও বুঝতে পারেননি ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন সাহেবের সমাবেশে এতো লোকের গ্যাদারিং হবে। সমাবেশে চলার সময় খবরে দু’তিনটি টিভি চ্যানেল ‘লাইভ অনুষ্ঠান’ দেখালেও অন্যান্যরা দেখাতে পারেননি। সমাবেশে ব্যাপকতা দেখে ‘শিক্ষামন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তৃতা’ সরাসরি প্রচারের ইচ্ছা থাকলেও ‘প্রস্তুতি’ না থাকায় টিভি সাংবাদিকদের আফসোস করতে দেখা গেছে।
২৭ জানুয়ারি লাখো আলেম-ওলামা-পীর-মাশায়েখের জমায়েতের সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চিরচেনা বাদাম বিক্রেতা, ফুচকা বিক্রেতা, চকলেট-লজেঞ্জ বিক্রেতা চোখে পড়েনি। ফুল বিক্রেতা পথশিশুদেরও দেখা যায়নি। দু’চারজন হকারকে দেখা যায় পানি বিক্রি করতে। অথচ কোনো সভা সমাবেশের খবর পেলে উদ্যানের আশপাশের হকাররা লোকসমাগমের আন্দাজ করে বিক্রি বাট্টা করার আগাম প্রস্তুতি নেন। কিন্তু জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সম্মেলনের ‘এতো লোক হবে’ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হকারদের কেউ আন্দাজ করতে পারেননি। সমাবেশের সময় উদ্যানের পাশের বাংলা একাডেমী-টিএসসি, হাইকোর্ট মাজার, ইঞ্জিনিয়ারর্স ইনস্টিটিউট-শিশুপার্ক ও সড়ক ভবনের সামনের ফুটপাতে চা বিক্রেতাদের দোকানের সামনে দেখা যায় অসংখ্য মিনারেল ওয়াটারের বোতল। নিত্যদিন তারা যে এক টাকা গøাস দরে জারের পানি বিক্রি করেন সেগুলো পিছনে লুকিয়ে রেখেছেন। কোনো কোনো চা-রুটি-ফুচকার দোকানদার জারের পানি যাতে ক্রেতারা চাইতে না পারেন সে জন্য পানির জার দোকানের আশপাশে রাখেননি। রহস্য কি? প্রশ্ন করতেই একজন চা বিক্রেতা জানালেন, ফজরের সময় উদ্যানের চতুর্দিকে যখন শত শত বাস ভিড়তে শুরু করে; সাদা পাঞ্জাবী ও টুপি মাথায় হাজার হাজার হুজুর (মাদরাসার শিক্ষক) নামতে শুরু করেন; তখন বুঝতে পারেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমাবেশ না হলেও এটা কোনো সাধারণ সমাবেশ নয়। ততক্ষণে বোতলজাত পানি বিক্রি করা বিভিন্ন কোম্পানীর লোকজন এসে দোকানদারদের পানির জার সরিয়ে বোতলজাত পানি বিক্রির পরামর্শ দেয়। কোম্পানীগুলো লোকজন ছোট্ট ছোট্ট পিক-আপ এ করে পানির বোতল নামিয়ে দিয়ে যায়, বিক্রির পর টাকা নেয়ার শর্তে। অত:পর শুরু হয় বোতলের পানি বিক্রি। ফুটপাতের অনেক চা বিক্রেতা অধিক লাভ এবং অল্প সময়ে অধিক বিক্রির উদ্দেশ্যে দুধ চা বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে শুধু রং চা বিক্রি করেন।
টিএসসি এবং ইঞ্জিনিয়ারর্স ইনস্টিটিউটের গেইটের সামনে চা-পাউরুটি-বিস্কেট বিক্রি করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে জানান, তারা বুঝতেই পারেননি এমন লোক সমাগম হবে। জহির নামের এক চা বিক্রেতা বললেন, ‘স্যার উদ্যানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ হলে প্রচুর লোকজন আসে আমাদেরও ব্যবসা হয়। তখন আমরা অধিক বেচাবিক্রির জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। কিন্তু অন্যান্য সভা-সমাবেশে হাকডাক হলেও লোকজন তেমন হয় না। বিশেষ করে বিভিন্ন সংগঠন মন্ত্রীদের প্রধান অতিথি করে যেসব সভা করেন সেগুলোতে ৫শ’ থেকে ৫ হাজার লোকের গ্যাদারিং হয়। এমনও দেখা যায় কিছু সংগঠন আছে তাদের সমাবেশে দু’শ লোকও নেই; অথচ বিশল মঞ্চ এবং ৩০ থেকে ৪০টি মাইক টানানো হয়েছে, প্রধান অতিথি কোনো না কোনো মন্ত্রী। এই সভাতে (২৭ জানুয়ারি) দু’জন মন্ত্রী আসবে জেনেও লোকজন তেমন হবে না মনে করেছি। কিন্তু লাখ লাখ লোক দেখে আমরা অবাক! আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মহাসমাবেশে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এখানে (মাদরাসা শিক্ষকদের সমাবেশ) সেটাও নেই। আগে যদি বুঝতাম তাহলে দুই তিন মাসের ব্যবসা একদিনেই করে নিতাম। বয়োবৃদ্ধ এক হকার বললেন, ‘স্যার মিটিং দেখে আমরা অবাকই হয়েছি। আওয়ামী লীগ বিএনপির মিটিং হলে মিছিল হয়। চিৎকার চেচামেচি হয়। মারামারি এবং চরম বিশৃঙ্খলা হয়। কিন্তু হুজুরদের সমাবেশে (আলেম-ওলামা) সে ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েনি। এত্তো এত্তো লোক; কোনো কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে সবাই ছোট্ট ছোট্ট গেইট দিয়ে প্রবেশ করছেন। কম বয়সের হুজুররা বয়োবৃদ্ধ হুজুরদের আগে প্রবেশের জায়গা করে দিচ্ছেন। উদ্যান থেকে বাইরে বের হতে চাইলে কয়েকশ’ গজ দূরে শিশুপার্কের গেইট দিয়ে বের হচ্ছেন। কোনো হুড়োহুড়ি নেই। এ ধরনের দৃশ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কোনো বড় সমাবেশে চোখে পড়ে না’। অবশ্য মিটিং চলার সময়ও দেখা গেছে উপস্থিত জনতা সুশৃঙ্খলভাবে মঞ্চের সামনে বসে পড়েছেন। একে অন্যকে বসতে সহায়তা করছেন। যারা সমাবেশের মাঝেখানের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তারাও মাইকে বলার পর সেখানেই বসে পড়েন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-ফেরিওয়ালা-হকারদের কথা শুনে মনে হলো ২৭ জানুয়ারি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের লাখ লাখ লোকের উপস্থিতির মহাসম্মেলনে বেচা-বিক্রি করতে না পারায় আফসোস থেকেই যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।