পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের আলেম ওলামা মাশায়েখদের এ যেন মহাজাগরণ। সারাদেশের লক্ষ্যাধিক আলেম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেত হয়ে আওয়াজ তুললেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য চলবে না’। আলেম সমাজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের অভুক্ত রেখে দেশের উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ টেকসই হতে পারে না। সোহরাওয়ার্দীতে গতকাল দেশের কোন অঞ্চলের আলেম ছিলেন না? টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়ার মাদরাসা অধ্যক্ষ, প্রিন্সিপাল, সুপার, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, মসজিদের ঈমাম, পীর-মাশায়েখ, নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজকে যারা আলোকিত করছেন এবং আমজনতা যাদের মুরুব্বী হিসেবে চেনেন-জানেন-মানেন তাদের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
সবার কণ্ঠে এক আওয়াজ ‘সরাসরি রাজনীতি না করলেও মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক-পীর-মাশায়েখদের রয়েছে প্রায় দেড় কোটি ভোট। এই ভোট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আলেম সমাজ ও মাদরাসা শিক্ষার জন্য অনেক কিছু করেছেন। এখন তিনি শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করতে ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত সকল মাদরাসার শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করবেন’। দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক এবং পেশাজীবী সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের এই মহাসমাবেশে তারা আরো বলেন, মাদরাসায় শুধু ধর্মীয় শিক্ষাই নয়; নৈতিকতা শিক্ষার পীঠস্থান বটে। যারা মাথায় কোরআন ধারণ করেন তারা কখনো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেন না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস হয়, মাদকের হাট বসে, ছাত্ররা দাবি দাওয়ার নামে পিতৃতুল্য শিক্ষকদের অপমান-অপদস্ত করেন; কিন্তু মাদরাসা পড়–য়া ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো অপকর্মের খবর শোনা যায় না। কারণ মাদরাসায় সুশিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতার শিক্ষায় জোর দেয়া হয়। সন্ত্রাস-মাদকের থাবা থেকে বাঁচতে মাদরাসা শিক্ষার উপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল এই মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মহাসমাবেশ উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জাতীয় সংসদের ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি। বক্তৃতা করেন মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আলমগীর, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো: আহসান উল্লাহ, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম ছায়েফ উল্যা, পীর-মাশায়েখগণের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আল্লামা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী (ফুলতলি), মৌকারা দরবার শরিফের (কুমিল্লা) পীর সাহেব আলহাজ মাওলানা নেছার উদ্দীন ওয়ালিহী, মোকামিয়া দরবার শরিফের (বরগুনা) পীর সাহেব আলহাজ প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস, নেছারাবাদ দরবার শরিফের (ঝালকাঠি) পীর সাহেব আলহাজ মাওলানা খলিলুর রহমান, মোহাম্মদপুর দরবার শরিফের পীর সাহেব মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান জৌনপুরী, যশোর জেলা জমিয়াতের সভাপতি মাওলানা নুরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস, চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল ফারাহ মো. ফরিদউদ্দীন, সিলেট জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এ কে এম মনোয়ার আলী, দিনাজপুর জেলা সভাপতি মাওলানা হাসান মাসুদ, পীর সাহেব মুর্শীদ নগর অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হাকিম জেহাদী, রাজশাহী জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোকাদ্দিসুল ইসলাম, জমিয়াত আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, গোপালগঞ্জ জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল কাউয়ুম, ফরিদপুর জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইউসুফ মৃধা, বান্দরবান জেলা সেক্রেটারি প্রফেসর মো. সাদাত উল্লাহ্, জমিয়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় জমিয়াতের যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ মাওলানা ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা আ ন ম হাদিউজ্জামান, নিলফামারী জেলা জমিয়াত সভাপতি আলহাজ মাওলানা এ বি এম মনসুর আলী , চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা কাজী আবুল বয়ান হাশেমী, ভোলা জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা মোবাশ্বেরুল ইসলাম নাঈম, বরিশাল মহানগরীর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রব, ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর সাদেক, গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা মো: জহিরুল হক, কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা সাহাদাত হোসেন, অধ্যক্ষ মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার (ঢাকা), অধ্যক্ষ মাওলানা ড. নজরুল ইসলাম আল মারুফ (ঢাকা), অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হান্নান আজিজী (পটুয়াখালী), অধ্যক্ষ মাওলানা হাফেজ আতিকুর রহমান (সিরাজগঞ্জ), অধ্যক্ষ মাওলানা আজহারুল্লাহ (পাবনা), অধ্যক্ষ মাওলানা কাউছার কামেল (বরিশাল), অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদি (নোয়াখালী), অধ্যক্ষ মাওলানা পারভেজ (সুনামগঞ্জ), অধ্যক্ষ মাওলানা মাসুদ আলম (কিশোরগঞ্জ), অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হান্নান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), অধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুল ইসলাম (খুলনা), অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম (বাগেরহাট), অধ্যক্ষ মাওলানা আক্তারুজ্জামান (নাটোর), অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মোতালেব (জামালপুর), অধ্যক্ষ মাওলানা নূরুল আমিন (শেরপুর), অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাতেন (নেত্রকোনা) সহ আরও অন্যান্য জমিয়াত নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। মহাসম্মেলন পরিচালনা করেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী ও যুগ্ম মহাসচিব ড. এ. কে এম মাহবুবুর রহমান। মহাসম্মেলন শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জমিয়াত সিনিয়র সহ-সভাপতি ও গাউসুল আজম জামে মসজিদের খতিব আলহাজ মাওলানা কবি রুহুল আমীন খান।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসমাবেশের এই জনসমাগমকে জনসমুদ্র, জনতার মহাসমুদ্র, ওলামা-মাশায়েখের মিলনমেলা, শীর্ষস্থানীয় আলেমদের ঐকোতান সবগুলো উপমার সঙ্গে তুলনা করা যায়। বিশালাকৃতির মঞ্চ। অসংখ্য মাইক টানানো হয়েছে গাছে গাছে। জনসমাগম এতো বেশি যে দূর থেকে মঞ্চের বক্তাদের দেখা দুষ্কর। মঞ্চের দুই পার্শ্বে বিশাল আকৃতির দু’টি প্রজেক্টর বসানো হয়েছে উপস্থিত মানুষ যাতে বক্তাকে দেখতে পারেন। মানুষ কি শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই? একদিকে মৎস্য ভবন থেকে শুরু করে শিশুপার্ক; অন্যদিকে টিএসসি, বাংলা একাডেমী, দোয়েল চত্বর পর্যন্ত মানুষ আর মানুষ। যেদিকে চোখ যায় শুধু ধবধবে সাদা টুপি পরিহিত মানুষের ঢল। সারাদেশ থেকে মাদ্রাসার মহিলা শিক্ষিকারাও এসেছেন মহাসম্মেলনে অংশ নিতে। তাদের জন্য মঞ্চের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়।
কোনো ছামিয়ানার ব্যবস্থা নেই। খোলা মাঠেই আয়োজন করা হয়েছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসম্মেলন-২০১৮। উপরে সুনীল আকাশ, নীচে গাঢ় সবুজ ঘাস। মঞ্চের সামনে মাদুর বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। লাখ লাখ জনতা কতজন মাদুরে বসার যায়গা পেয়েছেন! সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ প্রায়ই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু গতকাল যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো সেঁজেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। লাখ মানুষের উপস্থিতি অথচ পিনপতন নীরবতা। সবার দৃষ্টি মঞ্চের দিকে; কান মাইকের দিকে বক্তা কি বলেন শোনার জন্য। উপস্থিত হওয়া সারাদেশের আলেমদের প্রায় সবারই একই ধরনের ‘পরিধান’ হওয়ায় এক মনোরম দৃশ্যের অবতারণা হয়। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা সুউচ্চ গাছ মাঝখানে অবস্থিত সান বাঁধানো লেক সত্যি অপূর্ব। কংক্রিটের ঢাকা শহরের মাঝখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছের ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি সমাবেশকে আরও করে তোলে মনোমুগ্ধকর। কোথায় নেই মানুষ? যে যেখানে পেরেছেন ঘাসের ওপর বসেই বক্তৃতা শুনতে শুরু করেছেন। বক্তৃতা শোনা নয় যেন গোগ্রাসে গিলছেন। প্রায় সবার পরনে সাদা পায়জামা, গায়ে সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী মাথায় টুপির অপরুপ দৃশ্য। কারো কারো পাঞ্জাবীর ওপর হাতাকাটা কোট-চাদর। এ যেন কোনো শিল্পীর ক্যানভাসে জলরং, তেলরং, অ্যাক্রোলিক মাধ্যমে আঁকা ছবি।
সারাদেশ থেকে সকালেই গাড়ীতে করে আলেমরা সমাবেশ স্থলে হাজির হন। দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি রাস্তার দুই ধারে সারিবদ্ধভাবে বাস রাখা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে রাস্তা, শাহবাগ এবং বুয়েটের রাস্তায়ও গাড়ির সারি। অনেকেই সকাল ৮টার আগেই মঞ্চের সামনে গিয়ে বসেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সমাবেশস্থলে বাড়তে থাকে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সারাদেশ থেকে আসা নেতার সংখ্যা। অন্য আর দশটা সভা সমাবেশের মতো কাউকে মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়নি। মিছিলের দৃশ্য ছিল না। ছিল না হুড়োহুড়ি। পুলিশের প্রহরায় সারাবদ্ধভাবে উদ্যানের সমাবেশস্থলে হাজির হন। বিভিন্ন দাবি দাওয়ার প্লাকার্ড, ব্যানার দেখা যায় সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের হাতে। মাঠেও বিভিন্ন ব্যানার লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন সময় উপস্থিত তৌহিদী জনতা ‘নারায়ে তকবির-আল্লাহু আকবর’সহ নানা রকম শ্লোগানও দেন। সংগঠনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামানের নামেও শ্লোগান দেয়া হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৈরি বিশাল মঞ্চ থেকে বক্তৃতা করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মাদরাসা শিক্ষক, পীর-মাশায়েখ ও আলেম ওলামা। তাদের অধিকাংশেরই বক্তব্য ছিল এ রকম; ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে বৈষম্যমূলক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনাও দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রের চলমান বৈষম্য নিরসন করে ইতিহাসে জায়গা করে নেবেন’। ‘মাদরাসার শিক্ষক ও আলেম সমাজ সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নেই। কিন্তু তারা জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত। সমাজে তাদের ব্যাপক প্রভাব। এক একজন আলেম শত এমনকি হাজার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারাই মসজিদে ইমামতি করেন; সমাজ পরিচালনা করেন। তারা সমাজে রাষ্ট্রে এমনকি নির্বাচনের ভোটে নীতি-নির্ধারণী ভূমিকা রাখেন। মাদরাসা পড়–য়া ছাত্রছাত্রীরা এখন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করছে। কাজেই মাদরাসা শিক্ষাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই’। একজন বক্তা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ এ এম এম বাহাউদ্দীনের দৃঢ়তা ও নেতৃত্বের ভূয়সীপ্রশংসা করে তাকে দেশের আলেম-ওলামা-পীর-মাশায়েখদের ‘আস্থার প্রতীক’ অবিহিত করেন। পারস্য থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে আসা প্রখ্যাত মনিষী খানা মঈনু্িদ্দন চিশতী (রহ.) এবং হিন্দুস্তানের সুলতানের কাহিনী তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই সময় দিল্লীর শাসকরা বলতেন, খাজা মঈনু্িদ্দন চিশতী খুশি থাকলে মুসলমানদের সমর্থন পাই; তিনি বিরূপ হলে মুসলমান দূরের কথা হিন্দুদের সমর্থন পাই না। কাজেই সরকারের যদি মাদরাসা শিক্ষকদের দাবি পুরণ করে এ এম এম বাহাউদ্দীনকে সেতুবন্ধন হিসেবে ব্যবহার করেন তাহলে তারাই লাভবান হবেন। সকাল সাড়ে ৮টায় সমাবেশ শুরু হলেও বেলা ১১টার মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা বিশাল এক জনসমূদ্রে পরিণত হয়। প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ এবং কাকরাইল থেকে রাস্তাগুলো ছিল মানুষের ভিড়ে ঠাসা। উদ্যান ঘিরে আশপাশের রাস্তাগুলোতেও ছিল মানুষের স্রোত। পথে পথে যানজট ছিল।
মহাসম্মেলনে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী মাদরাসা শিক্ষকদের চার দফা দাবিনামা তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো (১) দেশের সকল মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ (২) শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৬৫ বছর করা (৩) শিক্ষার্থী সংকট দূর করার জন্য সংযুক্ত ও স্বাতন্ত্র এততেদায়ী মাদরাসাসমূহকে প্রাইমারী স্কুলের ন্যায় জাতীয়করণের আওতাভুক্ত করা, উপবৃত্তি দুপুরে টিফিন এবং এবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেয়া (৪) শিক্ষার সংকট দূর করতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন পেশকৃত জনবল কাঠামো অনুমোদন, মাদরাসায় সহকারী মৌলভীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ। তিনি মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে তিনি সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এদেশে কোরআরবিরোধী কোনো আইন হবে না। মাদরাসা শিক্ষকদের দাবি আমি কখনো ভুলিনি। ইতোমধ্যেই ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা অধিদপ্তর, বেতনসহ অন্যান্য অনেক দাবি পূরণ করা হয়েছে। এখন চাকরি জাতীয়করণ ছাড়াও যে দাবিগুলো রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো। আশা করি তিনি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলে বিবেচনা করবেন। মাদরাসা শিক্ষকদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় মাদরাসা ও ইসলাম শিক্ষার প্রতি আন্তরিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। মানুষ জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না; প্রশ্রয় দেয় না। আজান পড়লেই মানুষ মসজিদের পথ ধরে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা ধর্মের কথা বলেন নবীর কথা বলেন। তারা ইসলামী শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে আলোকিত করছেন। যারা মাথায় কোরআন ধারণ করেন তারা কখনো সন্ত্রাসী হতে পারেন না। সালমান এফ রহমান উপস্থিত আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় মাদ্রাসা শিক্ষা ও আলেম ওলামাদের প্রতি সম্মান দেখান। বর্তমান সরকার সব সময় মাদরাসার উন্নয়নে আন্তরিক। আশা করি আপনাদের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে তিনি পূরণ করবেন। আমিও আপনাদের কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরবো।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, দেশের মাদ্রাসাগুলো ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা দেন। সমাজের অনগ্রসর এলাকা থেকে উঠে আসা ছাত্রছাত্রীরা মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজকে আলোকিত করছেন। মাদক নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। সেখানে দেখা যায় পুলিশ সদস্য, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, রাজনীতিকসহ নানা ধরনের মানুষ মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কোনো মাদরাসার ছাত্রকে মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। শিক্ষায় নৈতিকতার অভাব ও মাদকের কারণে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে আনতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষার বিকল্প নেই। সরকার যদি মাদরাসা শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করে তাদের রুটি রুজির সহায়তা করেন তাহলে আলেমরা সুন্দর সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। আমরা সব সময় বলছি সরকারের ভাল কাজের সঙ্গে ছিলাম-আছি-থাকবো। মনে রাখতে হবে মাদরাসা ছাত্র শিক্ষকদের ভোটের সংখ্যা দেড় কোটি। রাজনীতি না করলেও এই ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আলমগীর বলেন, আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সৃষ্টির সময় মানুষের সব প্রত্যাশা পুরণ করতে পারেননি। ধাপে ধাপে সবগুলো হয়েছে। হজরত আদম (আ:) সময় তো ইন্টারনেট ফেসবুক ছিল না। এখন সেগুলো মানুষ ব্যবহার করছে। ইসলাম আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিকথা তুলে ধরে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্জেলর ড. মো: আহসান উল্লাহ বলেন, সরকারের সহযোগিতায় ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদরাসা শিক্ষার প্রতি দরদী মন নিয়ে নানা সহায়তা করছেন। তিনি হয়তো ধাপে ধাপে মাদরাসা শিক্ষকদের সকল দাবি পূরণ করবেন। তবে আমি বিশ্বাস করি সারাদেশের মাদরাসা শিক্ষকরা আরো আন্তরিকতার সঙ্গে ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করবেন।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম ছায়েফ উল্যা বলেন, বর্তমান সরকারের ৯ বছরের শাসনামলে মাদরাসা শিক্ষার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। পাকিস্তান আমল থেকে শিক্ষা নীতির দাবিতে শিক্ষানুরাগীরা সোচ্চার ছিলেন। শেখ হাসিনা মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য ‘শিক্ষা নীতি’ করেছেন। শেখ হাসিনা আলেম সমাজকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। কারণ জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরোধী কর্মকান্ডে আলেম ওলামারা সহায়ত করছে। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়ার কারণে মাদরাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে নারীর প্রতি সহিংসতা বা মাদক গ্রহণের অভিযোগ শোনা যায় না। মাদরাসার কোনো শিক্ষার্থী মাদক গ্রহণ করছে এমন কোনো তথ্য নেই।
দেশের মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়ন ও মাদরাসা শিক্ষকদের মর্যাদার প্রতিষ্ঠার পথিকৃত মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) কর্মময় জীবনের চিত্র তুলে ধরে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জৈনপুরি বলেন, মাওলানা মান্নান শুধু এ দেশের নয়; তিনি উপমহাদেশের সম্পদ ছিলেন। তিনি মাদরাসা শিক্ষকদের এবং শিক্ষার জন্য যা করছেন দেশের আলেম সমাজ সারাজীবন তা মনে রাখবে। এখন মাদরাসায় লেখাপড়া করে ছেলেমেয়েরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলে প্রথম হয়। মাদরাসার ছাত্ররা সব পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে। মাওলানা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাদরাসার শিক্ষকদের রাস্তায় রেখে সমৃদ্ধ দেশ গঠন সম্ভব নয়। ইসলাম ধর্ম যেখানে নৈতিকতা সেখানে। মাওলানা এম এ মান্নান মাদরাসা শিক্ষার জন্য যা করছেন সে জন্য তাকে এখন স্মরণ করতেই হয়। ইসলামী শিক্ষা তথা মাদরাসা শিক্ষাকে পিছনে রেখে সাধারণ শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হলে দেশের সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। স্কুলের ছেলেমেয়েরা দুপুরে টিফিন খাচ্ছে; মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা সেটা পাবে না কেন? বাংলাদেশের পীর আউলিয়ার দেশ। এ দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নাস্তিকবাদের কোনো জায়গা নেই। মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, দেশে এখন ৪ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু মাদরাসা ছাড়া অন্য কোথাও নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া হয় বলে জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ভিসিকে সম্মান দিতে জানে না। প্রগতিশীলতার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্ররা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে। অথচ মাদরাসা নৈতিকতার শিক্ষা দেয়ায় সমাজবিরোধী কোনো কর্মে তেমন ছাত্রদের জড়াতে দেখা যায় না। মাদরাসার শিক্ষকরা চাকরি জাতীয়করণ করার দাবি জানাচ্ছেন। এই দাবি দ্রুত মেনে নেয়া হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।