Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সব পথ মিশে যায় সোহরাওয়ার্দীতে

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফরিদপুর বিসমিল্লাহ মাদরাসা থেকে আসা শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ রাজধানীর পল্টন থেকে পায়ে হেটে সমাবেশ স্থলে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকায় আসতে না পারা অপর এক শিক্ষক ফোনে সমাবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে আমরা হাজার হাজার মাদরাসা শিক্ষক পায়ে হেটে এগুচ্ছি। লাখ লাখ শিক্ষকের উপস্থিতির কারণে রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তায় আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষকদের ভিড়ে পায়ে হাটার বিকল্প নেই। যারা সমাবেশে আসেননি তারা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সমাবেশের স্বাক্ষী হতে পারেননি বলেও জানান মোঃ আব্দুল্লাহ। জামালপুর থেকে আসা একটি মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মোতালেব ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের গেইট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-ওলামদের উপস্থিতি দেখে অজান্তেই বলে ওঠেন আল্লাহু আকবার। তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশের ছবি তিনি দেখেছেন। কিন্তু লাখো আলেম-ওলামাদের উপস্থিতিতে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। এমন একটি সমাবেশের অংশ হতে পেরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানান এই আলেম। একইভাবে সমাবেশে আসা সারাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও গ্রামের আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষকরা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক মহাসম্মেলনে উপস্থিত হতে পেরে নিজেদের গর্বিত হিসেবে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন। বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে মাদরাসা শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জনের জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে মহাসম্মেলনের আয়োজন করে মাদরাসা শিক্ষকদের অরাজনৈতিক সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। আনুষ্ঠানিকভাবে সকাল ৯টায় সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গভীর রাত থেকেই শিক্ষকরা সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হতে থাকে। ফজরের নামাজের সময় সেখানে গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার শিক্ষক, আলেম-ওলামা সে সময় সেখানে ফজরের নামাজ আদায় করছে। কিছুক্ষণ পর পর দলে দলে শিক্ষকরা সেখানে প্রবেশ করছেন এবং খন্ড খন্ড নামাজের জামায়াত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এভাবে ভোর পেরিয়ে সকাল সময় যতই গড়িয়েছে সমাবেশ স্থল আলেমদের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ভিড় ছড়িয়ে পড়ে আশাপাশের সড়কে। সকাল ৯টার আগেই উদ্যানের ভেতরে ভিড়ের কারণে শাহবাগ-মৎসভবন সড়ক ঠেলে আর ভিতরে প্রবেশ করতে পারেননি কেউই। সমাবেশ শুরু হওয়ার পর উদ্যানের চারপাশে ঘুরে দেখা যায়, সমাবেশের জন্য উদ্যানের পূর্বপাশে স্থান বরাদ্দ দেওয়া হলেও ভিড়ের কারণে উদ্যানের লেকের পশ্চিম পাড়সহ টিএসসি দোয়েল চত্বরেও শিক্ষকরা অবস্থান নিয়ে বক্তব্য শুনেছেন। এক পর্যায়ে পল্টন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী মাদরাসা শিক্ষকদের ভিড়ের কারণে ওই রাস্তাও বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এছাড়া শাহবাগের দিকেও শিক্ষকদের উপস্থিতির কারণে বসানো হয় ইলেক্ট্রনিক জায়ান্ট স্ক্রিন। দূর দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষকরা সমাবেশে প্রবেশ করতে না পারলেও সেখানেই তারা সমাবেশের অতিথিদের দেখেছেন এবং বক্তব্য শুনেছেন। আর সকাল ১০টায় শাহবাগ, পল্টন, প্রেসক্লাব, মৎসভবন, দোয়েল চত্বর, টিএসসি পুরো এলাকা শিক্ষক, আলেম-ওলামাদের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আলেম-ওলামাদের ঢল দেখে অনেকেই হতবিহŸল হয়ে যান। অনুষ্ঠান কাভার করতে আসা সাংবাদিক, প্রশাসনের বিভিন্ন অতিথিসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা বলেন, কিভাবে লাখ লাখ মানুষ জমিয়াত সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের ডাকে ঢাকায় ছুটে এসেছেন। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের নেতা নন, শিক্ষকদের আসার জন্য কোন সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা কিংবা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। তারপরও এই নেতার প্রতি তাদের ভালবাসা দেখে তারা অবাক হয়ে যান। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা বিস্ময় দূর করার জন্য সমাবেশে আগতদের জিজ্ঞেসও করেন কেন এবং কিভাবে তারা এসেছেন। এ সময় শিক্ষকরা উত্তর দিয়েছেন নিজেরা গাড়ি ভাড়া করে তাদের নেতার (এ এম এম বাহাউদ্দীন) ডাকে তারা রাজধানীতে ছুটে এসেছেন। সূত্র মতে, মহাসম্মেলনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগের দিন শুক্রবার থেকেই ছিল আলেম-ওলামাদের পদচারণা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেই আসেন এ সব আলেম-ওলামারা। শনিবার সকালে ফজরের নামাজের খন্ড খন্ড জামায়াতও অনুষ্ঠিত হয় সম্মেলনস্থলে। এই সম্মেলনকে ঘিরে গত কয়েকদিন থেকে রাজধানীর হোটলেগুলোও ছিল মাদারাসা শিক্ষকদের দখলে। ফজরের নামাজের পর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভিড় করতে শুরু করেন সারা দেশ থেকে আসা আলেম-ওলামারা। সবকটি প্রবেশ পথেই দীর্ঘ লাইন দিয়ে ঢুকতে হয় তাদের।
উপস্থিত সকলেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসমাবেশের এই জনসমাগমকে জনসমুদ্র, জনতার মহাসমুদ্র, ওলামা মশায়েখের মিলনমেলা, শীর্ষস্থানীয় আলেমদের ঐকতান সবগুলো উপমার সঙ্গে তুলনা করেছেন। জনসমাগম এতো বেশি যে দূর থেকে মঞ্চের বক্তাদের দেখা দুস্কর। যেদিকে চোখ যায় শুধু ধবধবে সাদা টুপি পরিহিত মানুষের ঢল। সারাদেশ থেকে মাদরাসার মহিলা শিক্ষিকারাও এসেছিলেন মহাসম্মেলনে অংশ নিতে। তাদের জন্য মঞ্চের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শে আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়। কোনো সামিয়ানার ব্যবস্থা ছিল না। খোলা মাঠেই আয়োজন করা হয়েছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসম্মেলন-২০১৮। উপরে সুনীল আকাশ, নীচে গাঢ় সবুজ ঘাস। মঞ্চের সামনে মাদুর বিছিয়ে দেয়া হয়। লাখ লাখ জনতা কতজন মাদুরে বসার যায়গা পেয়েছেন! সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ প্রায়ই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু গতকাল যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো সেঁজেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। লাখ মানুষের উপস্থিতি অথচ পিনপতন নীরবতা। সবার দৃষ্টি মঞ্চের দিকে; কান মাইকের দিকে বক্তা কি বলেন শোনার জন্য। উপস্থিত হওয়া সারাদেশের আলেমদের প্রায় সবারই একই ধরণের ‘পরিধান’ হওয়ায় এক মনোরম দৃশ্যের অবতারণা হয়। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা সুউচ্চ গাছ মাঝখানে অবস্থিত সান বাঁধানো লেক সত্যি অপূর্ব। কংক্রিটের ঢাকা শহরের মাঝখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছের ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি সমাবেশকে আরও করে তোলে মনোমুগ্ধকর। কোথায় নেই মানুষ?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জমিয়াতুল মোদার্রেছীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ