পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের একমাত্র বৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত হালদা নদী বহু বছর ধরেই বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। দখল, দূষণ এবং নানা অনাচারে নদীটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এটি রক্ষায় বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সচেতন মহল সোচ্চার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। বলা হয়, এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এটি। এ নদী থেকে আহরিত রুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু সংগ্রহ করে দেশের সিংহভাগ মৎস্য উৎপাদন করা হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নদীর গতিপথ এবং এর পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার উপর গবেষকরা বরাবরই জোর দিয়ে আসছেন। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখিও হয়েছে। তবে এসবের কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। নদীটি কীভাবে ধ্বংস করে দেয়া যায়, সেই প্রতিযোগিতাই যেন চলছে। এর গতিপথ এবং স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘœ করে ইতোমধ্যে অসংখ্য বাঁধ ও রাবার ডেম নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট জরিপ করে দেখেছে, নদীর ৯৮ কিলোমিটারের মধ্যে এসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে নদীটির স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ কমে গেছে। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালী একটি মহল বালু উত্তোলনের জন্য নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়েছে। এসব ড্রেজার মেশিনের কারণে নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
অপরিকল্পিতভাবে বসানো ড্রেজিং মেশিনের কারণে বিরল প্রজাতির ডলফিন এখন বিপন্ন হওয়ার পথে। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত তিন মাসে ড্রেজিং মেশিনের ঘূর্ণায়মান পাখার আঘাতে ১৬টি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। গবেষকরা ডলফিনের এই মৃত্যুকে প্রজাতিটির বিলুপ্তিকরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০টি ডলফিন রয়েছে। এর মধ্যে এখন ১৬টিই মারা গেছে। এটি এক অপূরণীয় ক্ষতি। পরিকল্পনাহীন ড্রেজিংয়ের কারণে শুধু ডলফিনেরই ক্ষতি হচ্ছে না, হালদার প্রাকৃতিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, নদীর নাব্য এবং স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ঠিক রাখার জন্য ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেহেতু দেশের নদ-নদীগুলো প্রতিবেশি ভারতের এক তরফা পানি ছিনতাইয়ের কারণে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে, তাই এগুলোর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ধরে রাখতে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘যমুনা-পদ্মা নদীর তীর স্থিরকরণ এবং ভূমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ উন্নয়নে প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পের রূপরেখা উপস্থান’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে ড্রেজিংয়ের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেছেন, বহু বছর হয়ে গেছে আমাদের নদীগুলো ড্রেজিং করা হয়নি। এজন্য প্রথমে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং প্রতিবছর সেগুলোর মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে। এতে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগ ও চাষের জমি বাড়বে। মোট কথা, ড্রেজিং হতে হবে পরিকল্পিত, টেকসই এবং উন্নয়নের সহায়ক। দুঃখের বিষয়, দেশে পরিকল্পিত ড্রেজিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। প্রভাবশালী একটি চক্র বালু উত্তোলনের জন্য ইচ্ছামতো নদ-নদীর যে কোনো স্থানে ড্রেজার বসিয়ে ড্রেজিং করে চলেছে। এতে নদ-নদীর স্বাভাবিক নাব্য বৃদ্ধির পরিবর্তে এর গতিবেগ পরিবর্তন এবং পাড়ে ভাঙন দেখা দেয়। সরকারিভাবে যেসব স্থানে ড্রেজিং চলে সেখানেও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। দেখা যায়, যে স্থান থেকে ড্রেজিংকৃত বালু উত্তোলন করা হয়, তার পাশেই সেগুলো ফেলা হয়। এতে পুনরায় সেই মাটি ড্রেজিংকৃত স্থান ভরাট করে ফেলে। এতে একদিকে যেমন প্রচুর অর্থের অপব্যয় হয়, তেমনি নদীর ড্রেজিং কাজটি ব্যর্থ হয়ে পড়ে। অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ড্রেজিং করার কারণে নদ-নদীতে দেয়া ছোট বড় বাঁধ পর্যন্ত হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু সেতু কিংবা মেঘনা-গোমতী সেতুর মতো বৃহৎ স্থাপনা বছরে বছরে বানানো সম্ভব নয়। দেশের অমূল্য সম্পদ হালদা নদী নিয়ে যে অনাচার চলছে, তার প্রতিকারের ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। দখল-দূষন, গতিপ্রবাহে অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ এবং যথেচ্ছ ড্রেজিংয়ের কবলে পড়ে নদীটি বিপন্ন দশায় নিপতিত হয়েছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। যে পানি উন্নয়ন বোর্ড রয়েছে, নদীটি রক্ষায় তার কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। এ কথা উপলব্ধি করছে না, প্রকৃতির দান বহুমুখী কল্যাণের এ নদীটি যদি হারিয়ে যায়, তবে তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এতে অর্থনীতির কী বিপুল ক্ষতি সাধিত হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। নদী বিশেষজ্ঞরা যেখানে হালদা রক্ষায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে, সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা অত্যন্ত দুঃখজনক।
পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আমাদের সাথে ভারতের টালবাহানা এবং বৈরি আচরণ নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরেই তা চলছে। সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণের পরিবর্তে সে চরম স্বার্থবাদী আচরণ করে চলেছে। বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে অভিন্ন নদ-নদীতে ইতোমধ্যে অসংখ্য বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তার আচরণে এটাই প্রতীয়মাণ হয়, বর্ষায় পানি ছেড়ে দিয়ে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে আমাদেরকে ডুবিয়ে ও শুকিয়ে মারতে চাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, আমাদের নদ-নদীর নাব্য এবং স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ধরে রাখতে নিজেদেরই উদ্যোগী হতে হবে। পরিকল্পিত উপায়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এই ড্রেজিং করতে গিয়ে যাতে নদ-নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। ড্রেজিংয়ের কারণে এসবের ক্ষতি সাধন কাম্য হতে পারে না। হালদা নদীতে প্রভাবশালী চক্র যেভাবে অপরিকল্পিত উপায়ে ড্রেজিং করছে, তাতে নদীর জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের ড্রেজিং অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। পাশাপাশি নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ এবং মৎস্য প্রজনন উপযোগী পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য দখল, দূষণ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং পরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।