নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
রংপুর রাইর্ডাস : ২০ ওভারে ২০৬/১।
ঢাকা ডায়নামাইটস : ২০ ওভারে ১৪৯/৯।
ফল : রংপুর রাইডার্স ৫৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা : ক্রিস গেইল (রংপুর)।
দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট। শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরেও টিকিট না পেয়ে অপেক্ষমান ১৫-২০ হজার দর্শকের জটলা। খেলা শুরু হওয়ার আগেই গ্যালারীর দর্শকদের গগণবিদারী চিৎকারে মুখরিত পুরো স্টেডিয়াম চত্বর। এমনই উত্তেজনাকর পরিবেশে গতকাল রাতে বিপিএলের ফাইনালে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল রংপুরের হয়ে যে ব্যাটিং ঝলকানি দেখালেন তা দেখে উদ্ভাসিত হয়ে ছিল সারা বাংলাদেশ। টি-২০’র ক্রিকেটে দর্শকদের ঝড়ো গতির ব্যাটিং দেখার যে প্রতাশা থাকে তা পুরোপুরি পুরণ করে দিয়েছেন ক্যারিবীয়ান দানব গেইল তার অতিমানবীয় ব্যাটিং দ্বারা। রংপুরের ইনিংসের ঝড়ো গতির ব্যাটিং দেখার পর দর্শকরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যথার্থই উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে এটাই আসল টি-২০ ক্রিকেটের রূপ। এমন এক ক্রিকেটীয় দিনে জয় বঞ্চিত হবেন ব্যাটিং দানব, তা কি করে হয়! হয়ও-নি তা।
উজ্জ্বিবীত এক দল হিসেবে শুরু করা রংপুর রাইডার্সের কাছে এদিন হার মানতে হলো বিপিএলের সবচেয়ে তারকাবহুল দল গতবারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসকে। তাদের ৫৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারেরমত শিরোপা উল্লাসে ভাসছে রংপুর রাইডার্স। ব্যাট হাতে একাই খেললেন গেইল। তবে তাকে পাশ থেকে দাঁড়িয়ে অসাধারণ ভাবে খেলিয়েছেন কিন্তু ম্যাককালাম। বিপিএলে এসেই প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন এই কিউই তা হল, ‘আমি শুধু গেইলকে স্ট্রাইক দেবো আর ছক্কা মারা দেখব। কথাটি অক্ষরে অক্ষরে রেখেছেন ম্যাককালাম কাল। নিজের ব্যাটিং স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে ধীর খেলেও খেলিয়েছেন ব্যাটিং দানবকে। ফলও পেয়েছেন হাতে হাতে। সর্বপরী রংপুর দলকে দারুণ ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। দলের জয় যখন নিশ্চিত, ঠিক তখন শেষ ওভারে বল হাতে তুলে দিলেন ক্রিকেটকে বিনোদনের খোরাকে পরিণত করা টি-২০’র ফেরীওয়ালা সেই গেইলের হাতেই। আর গেইল নিরাশ করেননি সেখানেও।
মিরপুরে এদিন যেন সত্যিই বন্যা বইছিল খরা কবলিত উত্তরবঙ্গের দলটির ব্যাটিং তান্ডবে। আরো একটি বিষয় লক্ষনীয়; তা হলো, ঢাকার মাঠে খেলাটি অনুষ্ঠিত হলেও স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকের অধিকাংশই ছিল রংপুর রাইডার্সের সমর্থক। এর দুটি কারণ। প্রথমটি, দলে আছেন বিশ্বের সেরা দুই টি-২০’র বিনোদনদায়ী ক্রিকেটার ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন মাককালাম। আর দ্বিতীয়টি, দলের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার প্রেরণাদায়ী, অভিজ্ঞ অধিনায়কত্বের আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই শিরোপা। শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা একটি দলকে শেষ পর্যন্ত যে শিরোপা জেতানো যায় তা যেন কেবল মাশরাফির দ্বারাই সম্ভব।
গতকাল সন্ধ্যায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ঢাকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে যেমনটা আশা করা হচ্ছিল তেমন ঝড়োভাবে শুরু হয়নি রংপুরের ইনিংস। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জনসন চার্লস এদিন কিছুই করতে পারেননি। সাকিবের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দ্বিতীয় ওভারেই। এরপর নামেন ম্যাককালাম। ১০ ওভার পর্যন্তও ধীর গতিতেই এগুচ্ছিলেন গেইল-ম্যাককালাম। একাদশতম ওভারে খালেদ আহমেদকে টানা দুই ছক্কা ও এক চারে শুরুটা করেন গেইল। গেইল তান্ডব তখন থেকেই শুরু। যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ভয়াবহ টর্নেডোতে। এলিমিনেটর ম্যাচে অপরাজিত সেঞ্চুরি করেছিলেন খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে। বিপিএলের ফাইনালেও ক্রিস গেইল চালালেন তা ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে। ৫টি চার ও এক ইনিংসে রেকর্ড ১৮টি ছক্কায় খেললেন ৬৯ বলে ১৪৬ রানের অপরাজিত এক স্মরণীয় ইনিংস ।
বিস্ফোরক ইনিংসে গড়লেন এক গাদা রেকর্ড। টি-টোয়েন্টিতে এটি গেইলের ২০তম সেঞ্চুরি। ৭টির বেশি সেঞ্চুরি নেই আর কারও। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ছুঁয়েছেন ১১ হাজার টি-টোয়েন্টি রান। ৯ হাজার রানও নেই আর কারও। বিপিএলে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসে নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন গেইল। এক ম্যাচ আগেই খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে খেলা অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংস ছাড়িয়ে গেলেন অপরাজিত ১৪৬ রান করে। ছাড়িয়ে গেছেন নিজেরই বিশ্বরেকর্ড। আইপিএলে অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংসটির পথে মেরেছিলেন ১৭টি ছক্কা।
গেইল যে স্টাইলে গতকাল ব্যাট করছিলেন তাতে বিমোহিত হয়ে দর্শকরা মাঝে মাঝে নিজের চোখ কেও অবিশ্বাস্য ভেবে সন্দীহানই হয়ে উঠছিলেন এই ভেবে যে উইকেটে গেইল নামধারী যে খেলোয়াড়টি ব্যাটিং তান্ডব চালাচ্ছিলেন তিনি কি আদৌ রক্তমাংসের কোন স্বাভাবিক মানুষ নাকি আধুনিক প্রযুক্তির কোন শক্তিমান রোবট?! ইনিংস শেষে তার সঙ্গে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৪৫ বলে ৫১ রানের ইনিংস নিয়ে যখন মাঠ ছাড়ছিলেন ম্যাককালাম রংপুরের ঝুলিতে তখন এক উইকেটে ২০৬ রান!
গেইল যেদিন ক্ষেপে যান, নিজের দল কিংবা প্রতিপক্ষ কারোরই কিছু করার থাকেনা সেদিন! এই স্তবকটি আরো একবার দেখল মিরপুরের হোম অফ ক্রিকেটও। জয়ের জন্য রান পাহাড় তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা ঢাকার ডাকসাঁইটে ব্যাটম্যানরাও কিছুই করতে পারলেন না। গেইল টর্নেডোতে চাপা পড়ায় ঢাকার পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। মেহেদী মারুফ থেকে শুরু করে জো ড্যানলি, কিংবা ইভিন লুইস, কায়রন পোলার্ড এমনকি শহিদ আফ্রিদির মত মারমুখি তারকারাও ছিলেন পুরোপুরি ¤øাণ। শুধু জুটি বেধে কিছুক্ষণ লড়াই চালিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান এবং জহুরুল ইসলাম অমি। তবে দুজনের ৪২ রানের জুটির ওপর বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি ঢাকার শিরোপাস্বপ্ন। সাকিব ফিরে যান ১৬ বলে ২৬ রান করে কিছুটা সময় ঢাকার স্বপ্ন সারথী হয়ে। এরপরও টিকে ছিলেন অমি। তবে কাটায় কাটায় ফিফটি করে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান আউট হবার সঙ্গে সঙ্গেই মুলত শিরোপা উল্লাসে মেতে ওঠে রংপুরের দর্শকরা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৯ রানে থামে ঢাকার ইনিংস। লক্ষ্য তখনও ৫৭ রান দূরে। ঢাকার টানা দ্বিতীয় শিরোপাস্বপ্ন ভেঙে নিজেদের প্রথম শিরোপার হাসি হাসে রংপুর।
খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠেন চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের খেলোয়াড় কর্মকর্তা ও সমর্থকরা। এসময় রংপুর রাইডার্স দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদেরকে করমর্দন করে অভিনন্দন জানান ঢাকা ডায়নামাইটসের কর্ণধার সালমান এফ রহমান ও তার পুত্র শায়ান এফ রহমান। স্পোর্টসম্যানশিপের অনন্য আরেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখা গেল গতকাল। ঢাকা ডায়নামাইটসের কর্ণধার বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও রংপুর রাইডার্স এর কর্ণধার বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এসকঙ্গে বসে খেলাটি উপভোগ করেন।
গত ৪ নভেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছিল ৭ দলের বাংলাদেশ প্রিয়িার লিগ (বিপিএল) টি-২০’র ৫ম আসর। পরে ঢাকার শেরেবাংলা ও চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম মিলে তিনটি ভেন্যুতে শেষ হয় ৪৫টি ম্যাচ। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে উত্তেনার পারদ যেমন ছিল মাঠে বিদ্যমান, ঠিক তেমনি গ্যালারি ছাপিয়ে মাঠের বাইরেও এর রসদ ছড়ায় সমানভাবে। ছিল কিছু অনিয়ম, বিশৃংখলাও। তবে এসব কিছুকে পেছনে ফেলে উত্তেজনাকর এক ফাইনালের মধ্যই দিয়ে ভেঙেছে ক্রিকেটীয় এই তারার মেলা।
শুধুমাত্র খেলাধুলাই যে পারে গোটা জাতিকে একটি প্লাটফর্মে দাঁড় করাতে, তা আবারও প্রমাণ করে দিয়ে গেল বিপিএল। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে, গ্রামে-গঞ্জে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিসপাড়া, ছেলে-বুড়ো থেকে আবাল-বনিতা সকলকেই এক সূঁতোয় বেধে রেখেছিল এই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। এক কথায় বিপিএল নিয়ে সারা বাংলাদেশ ছিল উদ্ভাসিত। অবশেষে নতুন চ্যাম্পিয়ন রংপুরের শ্রেষ্ঠত্বে গতকাল শেষ হলো এবারের বিপিএল। খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলাদা একটি চমকদেখানো প্রাপ্তি ছিল আকর্ষনীয় আতশবাজি যা দর্শকদের বাড়তি আনন্দ জুগিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।