Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গেইল তোপে খুলনার বিদায়

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনা টাইনান্সকে বিদায় করে ৮ উইকেটের বিশাল জয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে নাম লিখিয়েছে রংপুর রাইডার্স। কিন্তু রংপুরের ড্রেসিং রুমে নেই কোন উত্তেজনা। সবকিছুই নীরব-শান্ত। চলল কেবল সৌজন্য হ্যান্ডশেক। ব্যাপারটা এমন, যেন এমনটাই হওয়ার কথা ছিল।
আসলেই তাই! ক্রিজে যদি ওঠে গেইল ঝড় তাহলে তার সতীর্থদের ম্যাচ নিয়ে চিন্তা না করলেও চলে। ২৫ রানে ২ উইকেট হারানো রংপুরও তাই আর কোন অঘটন ছাড়াই হেসেখেলে ২৮ বল হাতে রেখে পূরণ করল ১৬৮ রানের লক্ষ্য।
৪৫ বলে ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব পূর্ণ করেন টি-২০ ক্যারিয়ারের ১৯তম শতক। বিপিএলের এবারের আসরের প্রথম শতকও এটি। ইনিংসে তার ১৩তম ছক্কাটি ছিল ক্যারিয়ারের ৮০০তম ছয়। নাজমুল হোসেন শান্তকে পরের বলেই মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে খুলনার বিদায় নিশ্চিত করেন ৩৮ বছর বয়সী তারকা। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৪টি গেইলীয় ছক্কায় ৫১ বলে ১২৬ রানে। সঙ্গে ৬টি চারের উল্লেখ অবশ্য অতি তুচ্ছ ঠেকতে পারে। বিপিএলে এক ইনিংসে এটি সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। ২০১৩ সালে ১২ ছক্কার আগের রেকর্ডটিও ছিল গেইলের।
রংপুর ইনিংসে চমক ছিল শুরুতেই। ক্রিস গেইলের সঙ্গে ওপেনে নামেন সোহাগ গাজী। মাশরাফির এই প্ল্যান অবশ্য কাজে লাগেনি। তৃতীয় ওভারে জোফরা আর্চারের বলে ৪ বলে মাত্র ১ রান করে বোল্ড হয়ে যান গাজী। এক বল পরে কোন রান না করে ফেরেন ব্রান্ডন ম্যাককালামও। গেইল তোপে ২ ওভারে ২৪ রান তুলে ফেলা রংপুর তখন উল্টো চাপে। পরের গল্পটা শুধুই টি-২০ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মহাতারকার। বড় ম্যাচ যে বড় তারকারদের জানান দেয়ার মঞ্চ সেটা আবারো প্রমাণ করলেন গেইল। সাত জন বোলার কাজে লাগিয়েও তাকে থামাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। অপর প্রান্তে গেইলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যান ৩৬ বলে ৩০ রান করা মোহাম্মাদ মিথুন।
ষষ্ঠ ওভারের যখন রংপুর ফিফটি পূর্ণ করে গেইলের তখন ৪৪। পরের ওভারে মোহাম্মাদ ইরফানকে লং-অনের মাথার উপর দিয়ে বল গ্যালারীতে পাঠিয়ে ২৩ বলে পূর্ণ করেন ব্যক্তিগত অর্ধ-শতক। এরপর যখনই মিথুন স্ট্রাইকে এসেছে তখনই কেবল স্বস্তি ছিল খুলনার বোলারদের। দশম ওভারের প্রথম বলে আসে রংপুরের দলীয় শতক।
অথচ খুলনার সংগ্রহটা কিন্তু আদতে এমন মামুলি ছিল না। বিশেষ করে যেখানে ব্যাটসম্যানদের রানের জন্য হাপিত্যেশ করতে হচ্ছে। কিন্তু গেইলের দিনে যে বাকি সবকিছুই তুচ্ছ। ম্যাচ পরবর্তি সাক্ষাতকারে সেটাই জানান খুলনা দলপতি মাহমুদউল্লাহ, ‘সংগ্রহটা বেশ ভালোই ছিল, কিন্তু ক্রিস ম্যাচটা ¯্রফে ছিনিয়ে নিয়েছে।’
গেইলের কথাতেও বুঝা গেল খুলনার সংগ্রহটা মন্দ ছিল না, ‘আপনি যখন ভালো ব্যাট করবেন তখন সবকিছুই ভালো মনে হবে। ঢাকার উইকেটে ১৭০ রান ভালো সংগ্রহ। চাপ সেখানে থাকবেই। কিন্তু আমি শীর্ষ তিনে ব্যাট করতে পছন্ন করি। এই অবস্থানটা কারো কাছে হারাতে চাই না।’
দলের নায়ক দলপতির কাছ থেকে বাড়তি বাহবা পাবেন এ আর নতুন কি। মাশরাফিও পঞ্চমুখ গেইল বন্দনায়। তাকে টি-২০ ফর্ম্যাটের রাজা উপাধি দিয়ে ম্যাশ বলেন, ‘সে (গেইল) এই সংস্করণের রাজা, তাকে থামানো কঠিন।’
আগেই বলেছি, গেইলের দিনে বাকি সব কিছুই তুচ্ছ। ঠিক যেমনটা খুলনার ইনিংসটা। শুরুতে স্বস্তিতে ছিল না টাইটান্স। নিয়মিত বিরতিতে তারা উইকেট হারাতে থাকে। যে কারণে ৫ ব্যাটসম্যান বিশ পার করলেও ত্রিশোর্ধো ইনিংস নেই একটিও। এরপরও নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে তারা ৬ উইকেটে ১৬৭ রান করল তার কৃতিত্ব মূলত নিকোলাস পুরান (২২ বলে ২৮) ও কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের (৯ বলে (২৫)। ৬ বলে ২টি করে ছক্কা চারে মাহমুদউল্লার ইনিংস থামে ২০ রানে।
কোন উইকেট না পেলেও রংপুরের সবচেয়ে কিপটে বোলার ছিলেন মাশরাফি (৪ ওভারে ২৩ রান)। অপরদিকে লাথিস মালিঙ্গা ৪ ওভারে ৪৯ রান দিলেও তুলে নেন ২ উইকেট।
স ং ক্ষি প্ত স্কো র
খুলনা টাইটান্স : ২০ ওভারে ১৬৭/৬ (শান্ত ১৫, ক্লিঙ্গার ২৫, আফিফ ১১, মাহমুদউল্লাহ ২০, আরিফুল ২৯, পুরান ২৮, ব্র্যাথওয়েট ২৫*, আর্চার ৬*; মাশরাফি ০/২৩, সোহাগ ১/২৪, মালিঙ্গা ২/৪৯, অপু ১/২৩, রুবেল ১/৩৩, বোপারা ১/১৫)।
রংপুর রাইডার্স : ১৫.২ ওভারে ১৭১/২ (গেইল ১২৬*, সোহাগ ১, ম্যাককালাম ০, মিঠুন ৩০*; আবু জায়েদ ০/২৩, মাহমুদউল্লাহ ০/৩০, আর্চার ২/৩০, ইরফান ০/২৫, ব্র্যাথওয়েট ০/৩০, আফিফ ০/২১,শান্ত ০/১২)।
ফল : রংপুর রাইডার্স ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ক্রিস গেইল (রংপুর)।

গেইলনামা
রেকর্ড নবায়ন
খুলনার বিপক্ষে গতকাল ৫১ বলে অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংসের পথে নিজের গড়া কিছু রেকর্ড নবায়ন করেছেন ক্রিস গেই। বিপিএলে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ হাঁকানোর রেকর্ড আগেও তার ছিল। এবার সেটাকে একটু বাড়িয়ে নিলেন। এলিমিনেটরের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনি ছক্কা হাঁকান ১৪টি।
এর আগে ২০১৩ সালের সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে ঢাকা গøাডিয়েটর্সের হয়ে এক ইনিংসে ১২টি ছক্কা মেরেছিলেন গেইল। সেটিই ছিলো বিপিএলে এতোদিন এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। ঐদিন করেছিলেন ৫১ বলে ১১৪ রান।
২০১২ আসরেও বরিশাল বুলসের হয়ে দুই ম্যাচে যথাক্রমে ১১ ও ১০টি করে ছক্কাও হাঁকিছিলেন গেইল। দুটিতেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। এছাড়া ২০১৫ সালে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৯টি ছক্কা মারার রেকর্ডও তার। সব মিলে বিপিএলের সর্বোচ্চ ছক্কার মালিকও এই ৩৮ বছর বয়সী। এ পর্যন্ত বিপিএলের ২৪ ম্যাচে ৮৯টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন গেইল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭টি ছক্কা বাংলাদেশের সাব্বির রহমানের।

৮০০ পেরিয়ে
টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৮০০ ছক্কার মাইলফলক স্পর্শ করলেন ক্রিস গেইল। সব মিলে ৮০১টি। অবশ্য শুধু এটি কেন, পেছনে রেখে আসা সব মাইলফলই তো তার। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে যিনি তার ছক্কা ৫০৬টি। তিনিও আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কাইরন পোলার্ড। চলতি বিপিএলে যিতি ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে গ্যালারি মাতাচ্ছেন।সব মিলে ৩১৮ ম্যাচের টি-২০ ক্যারিয়ারে তার রান ১০৯০৭।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিপিএল

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ