নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জিততে হলে শেষ ৬ বলে প্রয়োজন ৬ রান। হাতে ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে ‘তুড়ি মেড়ে জুড়ে’ দোবার মত মামুলি ব্যপার। কার্লোস ব্রাফেট প্রথম তিন বলই করলেন ইয়র্কার। তৃতীয় বল থেকে এক রান নিতে পারলেন জহুরুল। চতুর্থ বলে এক রান নিয়ে জহুরুলকে স্ট্রাইকে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন। হঠাৎই কঠিন সমীকরণের মুখে ম্যাচ। ২ বলে দরকার ৪ রান। ওভারের পঞ্চম বলেই ‘রিভার্স স্কুপ’ খেলে ঢাকাকে ৪ উইকেটে জিতিয়ে ফেরেন একসময় জাতীয় দলে খেলা এই ব্যাটসম্যান। ৩৯ বলে অপরাজিত ৪৫ রান করে গতকাল ম্যাচের ‘বীর’ তিনিই। রোমাঞ্চকর জয়ে ঢাকা ডায়নামাইটস করল জয়ের হ্যাটট্রিক। বিপিএলে অনেকবার ম্যাচের লাগাম হাত বদল হওয়ার এই ম্যাচে খুলনা টাইটানসকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল ব্র্যাথওয়েটের ঝড়ো ইনিংস খুলনাকে এনে দিয়েছিল ১৫৬ রানের পুঁজি। ঢাকা শুরুতে ধুঁকলেও ম্যাচের গতিপথ বদলে দেন পোলার্ড। পরে জহুরুলের অপরাজিত ইনিংসে জেতে তারা ১ বল বাকি থাকতে। ঢাকা রান তাড়ার শুরু করে চার ম্যাচে চতুর্থ উদ্বোধনী জুটি দিয়ে। এভিন লুইসের সঙ্গে আগের তিন ম্যাচে ওপেন করেছিলেন মেহেদী মারুফ, কুমার সাঙ্গাকারা ও শহিদ আফ্রিদি। এবার লুইসের সঙ্গী সুনিল নারাইন। তবে সেই ফাটকা কাজে লাগেনি। তিন নেমে ঝড় তুলতে পারেননি শহিদ আফ্রিদিও। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ক্যামেরন ডেলপোর্টের বেলস ওড়ান জোফ্রা আর্চার। আকিলা দনঞ্জয়ার পথম বলেই ফেরেন নারাইন। মিড অন থেকে অনেকটা দৌড়ে সামনে ঝাঁপিয়ে সীমানার কাছে অসাধারণ ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। খুলনা অধিনায়ক পরে বল হাতে নিয়ে ফেরান প্রতিপক্ষ অধিনায়ক সাকিবকে (১৭ বলে ২০)। ১০ ওভার শেষে ঢাকার রান ছিল ৫ উইকেটে ৪৮। কে ভাবতে পেরেছিল, একাদশ ওভার থেকেই শুরু হবে এমন টর্নেডো!
মাহমুদউল্লাহর এক ওভারেই চারটি বিশাল ছক্কা মারেন পোলার্ড। ব্র্যাথওয়েটের এক ওভারে দুটি চার, দুটি ছয়। টাইমিং আর পেশিশক্তির মিশেলে সবগুলোই বিশাল ছয়। জহুরুল ইসলামের সঙ্গে জুটির পঞ্চাশ আসে মাত্র ২৫ বলেই, তাতে পোলার্ডের রানই ছিল ৪৬! ফিফটি করেন ১৯ বলে, বিপিএলে যা তৃতীয় দ্রুততম পঞ্চাশ। শেষ পর্যন্ত এই তান্ডব থামান শফিউল। তার একটি বাউন্সার পোলার্ডের মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। পরের বলটিও ছিল শর্ট বল, তবে এটি ¯েøায়ার শর্ট। ৬ ছক্কায় ২৪ বলে ৫৫ করে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পোলার্ড।
জয়ের জন্য ঢাকার প্রয়োজন ছিল তখন ৩২ বলে ৪৩ রান। জহুরুল ও মোসাদ্দেক দলকে এগিয়ে নেন ঠান্ডা মাথায়। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। শেষের আগের ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মারেন জহুরুল, শেষ বলে মোসাদ্দেক। ওভার থেকে আসে ১৩ রান। এরপর শেষ ওভারের নাটকীয়তায় নায়ক জহুরুল। অপরাজিত থাকেন ৩৯ বলে ৪৫ রানে।
ঢাকার আগে ব্যাটিংয়ে খুলনার শুরুটাও ছিল বাজে। টপ অর্ডারের দুর্দশা কাটাতে এদিন উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন আনে খুলনা। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে শুরু করেন মাইকেল ক্লিঙ্গার। ম্যাচের প্রথম ওভারে দুটি চারে শুরু করেছিলেন দুজন। এরপর আর করতে পারেননি বেশি কিছু। সাকিবের বলে আবু হায়দারের দারুণ ক্যাচে ফেরেন ক্লিঙ্গার। এরপর এবার প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ধীমান ঘোষ ব্যর্থ। থিতু হয়েও সুনিল নারাইনকে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন শান্ত। পোলার্ডের এক ওভারে দুটি চার মারার পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ফেরেন আফ্রিদিকে অযথাই রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে। ১৪ ওভার শেষে খুলনার রান ছিল ৪ উইকেটে ৭৯।
এরপরই ব্র্যাথওয়েটের ঝড়। প্রথম ৩ ওভারে ৯ রান দেওয়া আফ্রিদির শেষ ওভারে দুটি ছক্কা মেরে শুরু। পরের ওভারে সাকিবকে মারেন দুটি চার, এক ছক্কা। দারুণ জুটিতে ব্র্যাথওয়েটকে সঙ্গ দেন রাইলি রুশো। জুটির পঞ্চাশ আসে ৩১ বলেই। ৩০ বলে ৩৪ করে ফেরেন রুশো। তবে ব্র্যাথওয়েটের ঝড় থামানো যায়নি। প্রথম ৩ ওভার মাত্র ৭ রান দেওয়া নারাইনের শেষ ওভার থেকে আসে ১৫ রান। ইনিংসের শেষ ওভারে আবু হায়দারের দুটি ফুল টসে বিশাল দুটি ছক্কা। ২৯ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ব্র্যাথওয়েট। ৪টি চারের পাশে ইনিংসে ছক্কা ৬টি। শেষ ৬ ওভারে খুলনা তোলে ৭৭ রান। পায় লড়াই করার পুঁজি। লড়াই জমে উঠেছিলও দারুণ। কিন্তু পার্থক্য গড়ে দিলেন পোলার্ড। শেষ করলেন জহুরুল। উল্লাসে মাতল ঢাকার ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে থাকা চেয়ারম্যান শায়ান এফ রহমান, দলের ড্রেসিং রুম ও গ্যালারির হাজারো সমর্থক।
সত্যি বলতে কি, এমন ম্যাচের অপেক্ষাতেই ছিল বিপিএল। শ্বাসরুদ্ধকর এক সমাপ্তি, ম্যাচের নায়ক দেশি কোনো ক্রিকেটার- বিপিএলের আয়োজনই তো এমন কিছুর জন্য। ৪ নভেম্বর সিলেটে শুরু হওয়া বিপিএলের পঞ্চম আসর দশম দিনে এসে উপহার দিল এমন কিছু।
স ং ক্ষি প্ত স্কো র
খুলনা টাইটানস : ২০ ওভারে ১৫৬/৫ (শান্ত ২৪, ক্লিঙ্গার ১০, ধিমান ২, রুশো ৩৪, মাহমুদউল্লাহ ১৪, ব্র্যাথওয়েট ৬৪*, আরিফুল ৪*; খালেদ ০/৯, মোসাদ্দেক ০/১৫, আফ্রিদি ১/২৩, সাকিব ১/৩২, আবু হায়দার ২/৪০, নারাইন ১/২২, পোলার্ড ০/১৩)।
ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৯.৫ ওভারে ১৫৭/৬ (লুইস ৪, নারাইন ৭, আফ্রিদি ১, দেলপোর্ত ২, সাকিব ২০, জহুরুল ৪৫*, পোলার্ড ৫৫, মোসাদ্দেক ১৪*; আবু জায়েদ ১/২৪, শফিউল ২/২৪, আর্চার ১/২৬, দনঞ্জয়া ১/১৭, ব্র্যাথওয়েট ০/৩৪, মাহমুদউল্লাহ ১/২৯)।
ফল : ঢাকা ডায়নামাইটস ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : জহুরুল ইসলাম (ঢাকা)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।