রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার সীমান্ত ঘেঁষা দুই উপজেলা বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার ১৬ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৫ সংসদীয় আসন। এখানে আওয়ামীলীগে গ্রæপিং থাকলেও দলের স্বার্থে ঐক্যের জায়গাটি সুসংহত করার নজির আগেও দেখিয়েছে আসন্ন নির্বাচনেও তা ফুটে উঠবে বলে দৃঢ় আশাবাদী তৃণমুল নেতাকর্মীরা। আর দলীয় ঐক্যের পথ ধরে আসনটি আগামীতেও আওয়ামীলীগের কব্জায় থাকবে বলে মনে করছেন বুড়িচং-ব্রাক্ষ্রণপাড়ার আওয়ামীলীগ নেতারা। আসনটিতে প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি দলের মনোনয়ন পাবার আশায় বসে নেই সেক্টর কমান্ডারর্স ফোরাম ঢাকা বিভাগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আওয়ামীলীগ নেতা ব্যারিষ্টার সোহরাব খান চৌধুরী। অপরদিকে বিএনপিতে রয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশি একাধিক হেভিওয়েট নেতা। তাদের মধ্যে সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মো. ইউনুস, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি এসএম আলাউদ্দিনকে ঘিরে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপি তিনভাগে বিভক্ত। এসব নেতাদের নেতৃত্বের কোন্দল জিঁইয়ে থাকলে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবে না বিএনপি। ফলে সহজেই আওয়ামীলীগের ঘরে জয় উঠবে।
বুড়িচং- ব্রাক্ষ্রণপাড়া উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ সাবেক আইনমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি আবদুল মতিন খসরুকে পছন্দ করেন তার পরিচ্ছন্ন রাজনীতির জন্য। ৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের আইনমন্ত্রী থাকাকালে তিনি দুই উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন বলেই দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। ফলে আওয়ামীলীগের এ নেতার উপর প্রচন্ড আস্থা রয়েছে সাধারণ মানুষের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এমপি আবদুল মতিন খসরুর নেতৃত্বে বুড়িচং-ব্রাক্ষ্রণপাড়া আওয়ামীলীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত। তবে আওয়ামীলীগ নেতা ব্যারিষ্টার সোহরাব হোসেনের সঙ্গে রয়েছে মতিন খসরু গ্রæপের দীর্ঘদিনের বৈরিতা। বিগত নির্বাচনগুলোতে দলীয় গ্রæপিং বা ব্যক্তি বৈরিতা প্রভাব ফেলেনি। আসন্ন নির্বাচনে সোহবার হোসেন দলের মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেছেন মনোনয়ন না পেলে দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজ করবেন। বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামীলীগ বড় দল। তাই নেতা-কর্মীদের মাঝে মান অভিমান থাকতেই পারে। এসব নিয়ে দলের মধ্যে কোনও কাদা ছোড়াছুড়ি নেই। আগামী নির্বাচনে দল যাকেই এ আসনে মনোনয়ন দেবে তার জন্য এখানকার আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের সকল নেতা-কর্মী, সমর্থকরা নি:স্বার্থভাবে কাজ করবে। এমন নজির এখানকার আওয়ামীলীগ আগেও দেখিয়েছে, আগামীতেও দেখাবে।
এদিকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী বদল করেও কুমিল্লা-৫ আসনে সুবিধা করতে পারছে না বিএনপি। দলীয় কোন্দল না থাকলে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া হতো বিএনপির ঘাঁটি। কিন্তু কোন্দল পিছু ছাড়ছে না বিএনপির। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগবিহীন ১৫ ফেব্রæয়ারির সমালোচিত নির্বাচনে মজিবুর রহমান মজু এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে অধ্যক্ষ মো. ইউনুসের পর বিএনপির আর কোন প্রার্থী জয়ের মুখ দেখেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে ইউনুসকে এমপি নির্বাচিত করার অন্যতম সহায়ক শক্তি ছিলেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি জসিম উদ্দিন। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে এমপি ইউনুস নানাভাবে সমালোচিত হন। তার সময়েই বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপিতে দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ওই কোন্দলে যুক্ত হোন জাতীয়তাবাদী আইজীবি ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিষ্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। বিএনপির তৃণমুলের অভিযোগ, একসময় আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির রাজনীতি করে পরে বিএনপিতে আসা দলবদল খ্যাত অধ্যক্ষ ইউনুস ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এএসএম আলাউদ্দিনের বিরোধিতা করেছিলেন। ওই নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েও আ’লীগের সাথে আঁতাত করে মনোনয়ন গ্রহণ করেননি। আবার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতির পথ থেকে জসিমকে সারতেও ভূমিকা রেখেছিলেন অধ্যক্ষ ইউনুস। বর্তমানে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় বিএনপিতে ইউনুস গ্রæপের অস্তিত্ব নাম কা ওয়াস্তে টিকে রয়েছে।
এদিকে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপির সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়ে কুমিল্লা-৫ আসনের রাজনীতিতে সক্রিয় হোন ব্রাহ্মণপাড়া আসাদনগরের বাসিন্দা বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাংবাদিক শওকত মাহমুদ। বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় সাংগঠনিক বিরোধ মেটাতে এসে বিএনপির গৃহবিবাদ আরেক ধাপ বেড়ে যায়। সৃষ্টি হয় শওকত মাহমুদ গ্রæপ। আসন্ন একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে শওকত মাহমুদ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। আবার মনোনয়নের আশায় বসে নেই অধ্যক্ষ ইউনুস ও এসএম আলাউদ্দিন। সবমিলে বিএনপির ঘরেই এখন ত্রিমুখি বিরোধ। দলের স্থানীয় নেতারা জানান, তৃণমুলের ত্যাগি নেতা-কর্মীদের মুল্যায়ন ও বিরোধ না মিটলে দলীয় কোন্দল আরও প্রকট হবে। আর এ অবস্থা চললে আসনটি পুনরুদ্ধার বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ফলে আওয়ামীলীগের জয় সহজ হয়ে উঠবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।