হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোহাম্মদ আবদুল গফুর : বাংলা সনের হিসাবে আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষা ঋতু। যদিও পরবর্তী মাস ভাদ্র বর্ষা ঋতুর অন্তর্গত নয়, তবুও বাস্তবতা বিচারে আমাদের দেশে ভাদ্র মাসকেও বর্ষা কালের অন্তর্গত বিবেচনা করা হয়। সেই বর্ষা কালে প্রচুর বর্ষণ হবে, এবং বাংলাদেশের উজানে অবস্থিত ভারতীয় রাজ্যসমূহে প্রচুর বর্ষণের পরিণতিতে বাংলাদেশেও বন্যা-পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এমনটা ধরে নিতে আমরা প্রায় অভ্যস্তই হয়ে উঠেছি।
কিন্তু এবারকার পরিস্থিতি মনে হচ্ছে একটু আলাদাই হতে যাচ্ছে। শুধু আলাদাই নয়, ভয়াবহও বটে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় গত কয়েকদিন এ সম্পর্কে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে তার ফলেই আমরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি। গত শনিবার দৈনিক ইনকিলাব-এর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদের ৫-কলাম দীর্ঘ শিরোনাম ছিল : “ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-দুয়ারে বন্যা”। গত শরিবার দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় যে সচিত্র প্রতিবেদনটি প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশিত হয় তার শিরোনাম ছিল : “উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বহু এলাকায় ফের প্লাবিত : বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি, রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিঘিœত”।
ঐ একই দিনে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রধান সচিত্র সংবাদটির শিরোনাম ছিল : ‘টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা”। এই সংবাদের সাথে যে ছবি প্রকাশিত হয় তাতে দেখানো হয় নিলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহরের প্রধান সড়কটি কিভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে। ঐ দিনের দৈনিক ‘সমকাল’ পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল : ‘‘১৪ জেলায় বন্যা, লাখো মানুষ দুর্ভোগে”। সঙ্গে উপ-শিরোনাম ছিল : “১৭ পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপদ-সীমার ওপরে”।
পরদিন অর্থাৎ গত সোমবারের দৈনিক ইনকিলাব-এর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রধান সচিত্র প্রতিবেদনের ৫-কলম দীর্ঘ শিরোনাম ছিল : “ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা”। “এ প্রতিবেদনে আরও জানা গেল : একযোগে ফুঁসে উঠেছে দেশের প্রধান নদ-নদী : গজলডোবার সব গেট খুলে দেয়ায় ধেয়ে আসছে পানি, তিস্তা এলাকায় রেড এলার্ট। সরিয়ে নেয়া হয়েছে এলাকাবাসীদের : শিশুসহ ২১ জনের মৃত্যু : লাখ লাখ একর ফসল পানির নীচে : দুর্যোগ মোকাবিলায় ছুটি বাতিল”।
ঐ দিনের সমকাল পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় “বন্যা সর্বগ্রাসী”, শীর্ষক যে চার কলাম দীর্ঘ শিরোনামের সচিত্র প্রধান খবরটি প্রকাশিত হয় তার সঙ্গে যে ছবি ছিল, তার পরিচয় দেয়া হয় এভাবে : “ভেঙ্গেছে বাঁধ, তলিয়ে গেছে বসতবাড়ী। গৃহপালিত পশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিনাজপুরের বানভাসী মানুষ”। এ ব্যাপারে ঐ দিনের দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় ৫-কলম দীর্ঘ যে প্রধান সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয় তার শিরোনাম ছিল : “ধেয়ে আসছে বড় বন্যা : ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে”।
ঐ একই দিনের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এ-সম্পর্কিত এক সচিত্র প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল : “দিনাজপুর ও লালমনিরহাটে বন্যায় ১১ জনের মৃত্যু : ২১ জেলায় বন্যা : তিস্তা বাঁধ এলাকায় রেড এলার্ট”। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে যে ছবি প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যায় বন্যার পানির প্রবল তোড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে রেল লাইনের তলদেশের মাটি।
অবশ্য এবারের বন্যা সম্পর্কে সবচাইতে ভয়ঙ্কর সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে গত সোমবার দৈনিক ইনকিলাব এর প্রথম পৃষ্ঠায় যার শিরোনাম ছিল : “২ শতাধিক বছরের ইতিহাসে বন্যার মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ হবে”। এটি আসলে ছিল বৈশ্বিক বন্যা সতর্কতা পদ্ধতি বিশ্লেষণ। এর বিবরনীতে বলা হয় : ‘আগামী সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণা কেন্দ্রের (জেআরসি) বৈশ্বিক বন্যা সতর্কতা পদ্ধতির (গেøা-এফএএস) বিশ্লেষণ করে এই সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চগুলোতে ১১ আগস্ট শুক্রবার থেকে পানি বাড়ছে এবং ১৯ আগস্ট পর্যন্ত এই পানি ভার্টির দিকে প্রবাহিত হবে। গত ২০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উজানে বন্যার মাত্রা সব চেয়ে ভয়াবহ হবে।
ইউরোপীয় সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাসের (ইসিএম ডবলিউএস)-এর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে হিমালয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ২০০ কিলোমিটারের বেশী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্রের ভারত ও বাংলাদেশ অংশে পানি বাড়বে।
জেআরসির বৈশ্বিক বন্যা সতর্কতা পদ্ধতির (গেøাএফএএস) গত ১০ আগস্টের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পুরো অববাহিকা এবং গঙ্গার ভাটিতে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাষ্টার ম্যানেজমেট এÐ ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের শিক্ষক গওহার নাইম ওয়ারা বলেন : বর্তমানে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে ২১ আগস্ট অমাবস্যা। অপর দিকে আসামে বড় ধরনের বন্যা হচ্ছে। এই পানি নেমে আসতে তিন চারদিন সময় লাগবে। আবার আমাদের ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি এখনও বিপদ সীমা অতিক্রম না করলেও পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে ১৯ তারিখের মধ্যে এ সীমা অতিক্রম করেত পারে।
এদিকে গত মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাব-এর প্রথম পৃষ্ঠায় যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তার শিরোনাম ছিল : দীর্ঘস্থায়ী বন্যার অশনি সংকেত। এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে : ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-মেঘনা অববাহিকার সাথে পদ্মাও বিপদ সীমার উপরে। প্রধান তিনটি অববাহিকায় একযোগে পানি বৃদ্ধি ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৭ সালের বন্যাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অশনি সংকেত বলে আশঙ্কা করছেন নদী ও পানি বিশেষজ্ঞগণ। এ বন্যা আগস্ট জুড়ে এমন কি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
গত মঙ্গলবার দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনের ৩-কলাম দীর্ঘ শিরোনাম ছিল : ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম দিশেহারা মানুষ। উপশিরোনামে বলা হয় : বন্যায় দুই দিনের মৃত্যু ২৯ জনের। ঐ একই দিন দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সচিত্র প্রতিবেদনের ৪-কলাম দীর্ঘ শিরোনাম ছিল : ২০ জেলায় বন্যা ২৬ জনের মৃত্যু। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে যে ছবি দেয়া হয় তার পরিচয় দেওয়া হয় এভাবে : দিনাজপুর শহরের চৌরঙ্গী সিনেমা হলের পাশের বড়গুড় গোলা সড়কের ওপর কোমরপানি। সেই পানি ভেঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তল্পিতল্পা নিয়ে ছুটছে বন্যার্ত মানুষরা।
বন্যা পরিস্থিতির সব চাইতে ভয়াবহ ও শোকাবহ দিক এই যে, বন্যার ফলে মারা যাচ্ছে মানুষ। অথচ লাশ দাফনের জন্য শুকনা জায়গা পাচ্ছে না মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা। এই প্রেক্ষাপটেই গত মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাব-এর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে অনেকের, যার শিরোনাম ছিল : “হে আল্লাহ! লাশ দাফনের শুকনো মাটি দাও!” প্রতিবেদনটিতে বলা হয় : ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাদের শক্তি দাও, সাহস দাও, লাশ দাফন করতে একখÐ শুকনা জমিন দাও’। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলারঘাট ইউনিয়নের পূর্ব বড়–য়া গ্রামের স্বজন হারানো আছিয়া বেগম-মনছুর মিয়া যখন স্বজনদের লাশ নিয়ে বিলাপ করছিলেন, তখন উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। প্রতিবেশী সবাই বানভাসী। দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন পানিতে। তাই শান্ত¦না দেয়া ছাড়া তাদের সামনে আর কোন পথ খোলা ছিল না। অত:পর কয়েক মাইল দূরের আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে লাশ দাফন করা হয়। স্থানীয় সাংবাদিকদের ভাষায় সেই করুণ দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। বন্যায় উত্তরাঞ্চলের সব হারানো মানুষ পানির কারণে তাদের মৃত স্বজনদের দাফনও করতে পারছেন না। অনেকেই দশ গ্রাম দূরে অথবা পার্শ্ববর্তী জেলায় গিয়ে দাফন করছেন। শোকের সঙ্গে বানভাসিদের মাতম, হে আল্লাহ, তুমি আমাদের শক্তি দাও, সাহস দাও, লাশ দাফন করতে এক খÐ শুকনা জমিন দাও।
বানের পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে ক’দিন আগেই। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গত রোববার বিকেলে কলার ভেলা বানিয়ে তাতে চেপে বসেন ৫ বছরের ছেলে নাদিম বাবুকে নিয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের পূর্ব বড়–য়া গ্রামের আবু হানিফ (৩৫), প্রতিবেশী দম্পতি মোজামউদ্দিন (৪৫) ও আসমা বেগম (৪০) ছিল ভেলায়। হঠাৎ ধরলা নদীর পানির স্রোত ভেলা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তারপর কেউ তাদের খুঁজে পায়নি। যখন পাওয়া গেল, তখন সব শেষ হয়ে গেছে। রাতেই শিশু নাদিমের মৃতুদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সোমবার বাকী তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
বানভাসীদের শোকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মরদেহ দাফন না করার কষ্ট। চতুর্দিকে পানি, শুকনা জায়গা নেই। পরে আবু হানিফ ও তার ছেলে নাদিমকে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর গ্রামে দাফন করা হয়। আর আছমা বেগম ও তার স্বামী মোজামউদ্দিনকে রংপুরে নিয়ে দাফন করা হয়। মৃতদের স্বজন আছিয়া বেগম, মনছুর মিয়া ও হামিদা আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলাপ করতে থাকেন, আল্লাহ, তুমি তো তাদের নিয়েই গেছ, বাকীদের হেফাজত কর। মালিক, বন্যার অভিশাপ থেকে আমাদের মুক্তি দাও।
এই যেখানে দেশের লাখো লাখো দুর্ভাগা বন্যার্ত জনগণের প্রকৃত অবস্থা, যেখানে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যেসব রাজনীতিকদের উপর রয়েছে তারা কি করছেন? তারা নিজেরা দু:স্থদের পাশে না দাঁড়িয়ে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহŸান জানিয়েই তাদের করণীয় শেষ করছেন। তারা যে জনগণের পাশে কখনও যান না, তাও একবারে বলা যাবে না। যাবেন ঠিকই নির্বাচনের সময় ভোট চাইতে। তবে হামলা মামলার মাধ্যমে ও কলে-কৌশলে যদি বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হন, তখন তাদেরও প্রয়োজন হবে না জনগণের কাছে যেতে। বর্তমানে যে সরকার দেশে ক্ষমতাসীন রয়েছেন, তারা ক্ষমতাসীন হন এমনি একটি নির্বাচনের মাধ্যমে, যে নির্বাচনে সুপরিকল্পিতভাবে তারা বিরোধী দলকে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। ৫ জানুয়ারী ঐ নির্বাচনকে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বয়কট করেছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অতীতের সমঝোতা আওয়ামী লীগ কর্তৃক লংখিত হওয়ার অভিযোগে। দেশের দুই প্রধান দলের অন্যতম বিএনপি সে নির্বাচন বয়কট করার সে নির্বাচনটি পরিণত হয় এক প্রহসনে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা তো দূরের কথা, সে নির্বাচনী প্রহসনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার গরজ অনুভব করেননি স্বয়ং আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও। কারণ তারা জানতেন, তারা ভোটকেন্দ্রে না গেলেও তাদের ভোট দানের ব্যবস্থা ঠিকঠিকই নিশ্চিত করবেন এ ব্যাপারে দায়িত্ব প্রাপ্ত দলীয় নেতাকর্মীরা।
বাস্তবে হয়ও সেটাই। বিরোধী দলের ভোটারদের বয়কট-জনিত অনুপস্থিতির সুযোগে আওয়ামী লীগের অল্পসংখ্যক নেতাকর্মীরাই ইচ্ছামত ব্যালট-পত্রে সীল মেরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের স্বপক্ষে প্রদত্ত ভোট সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে তোলার সুযোগ গ্রহণ করেন। অথচ ভোটদানের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ছিল প্রায় ফাঁকা। জনগণ একারণেই ভোটারদের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের নাম দেয় ভোটারবিহীন নির্বাচন। বর্তমানে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র চালনার দায়িত্ব পালন করছে যে সরকার, সে সরকার এই ভোটারবিহীন সরকারেরই ফসল।
দেশের জনগণের বিশাল অংশ যখন শতাব্দীর ভয়াবহতম বন্যার কারণে দিশেহারা তখন সরকারের পবিত্রতম কর্তব্য হচ্ছে বন্যার অভিশাপ থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে বাস্তববাদী কার্যক্রম গ্রহণ করা। সবাই জানেন বন্যা, ভূমিকম্প প্রভৃতির প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে মানুষ ইচ্ছা করলেই মুক্তি পেতে পারে না। সেটা সম্ভব নয়। তবে মানুষ আন্তরিক চেষ্টা করলে বন্যা জনিত কারণে জনগণের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে এবং বন্যা-প্রতিরোধের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে সাধারণ মানুষকে বন্যার অভিশাপ থেকে পারে মুক্তি দিতে। সে ব্যাপারে সরকারের যদি আন্তরিক চেষ্টা থাকে তবে রাজনৈতিক দলমতনির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা লাভও সহজ হতে বাধ্য। কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার বিশ্বাসযোগ্য দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করতে হবে।
তার পরিবর্তে সরকার যদি সবক্ষেত্রে বিরোধী দলকে দোষারোপ করা এবং নিজেদের গুণকীর্তনকেই তাদের প্রধান রাজনৈতিক করণীয় বলে বিবেচনা করেন, তবে তাদের দ্বারা এরকম মহৎ প্রয়াস কখনও সম্ভব হবে না। বিশেষ করে বন্যার মত বিশাল দুর্যোগকে সফলভাবে মোকাবেলার লক্ষ্যে সরকার যদি সর্বদলীয় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম হাতে নিতে আগ্রহী থাকেন, তা হলে দলমতনির্বিশেষে সমগ্র দেশবাসীর সহযোগিতায় এমন ভাবে তা সফল হয়ে উঠতে পারে যা কল্পনা করাও এখন সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের গ্রামঞ্চলে এই মর্মে একটা প্রবাদ বাক্য প্রচলিত আছে যে, দশের লাঠি একের বোঝা। এই প্রবাদ বাক্যের অন্তরনিহিত সত্য যেমন প্রযজ্য গ্রামের সীমিত পরিবেশে, তেমনি তা প্রযোজ্য হতে পারে জাতীয় বৃহত্তর পরিবেশে। শুধু প্রয়োজন দেশের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের আন্তরিকতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।