Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হারলেও রাজা তো বোল্ট-ই

| প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : ইতিহাসের স্বপ্নীল সমাপ্তির সাক্ষী হতে পরশু লন্ডন স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলেন হাজারো ভক্ত-সমর্থক। মাত্র ১০ সেকেন্ডর লড়াই দেখতে আর এর জীবন্ত কিংবদন্তিকে মাঠে থেকে বিদায় জানাতে কোন কিছুরই কার্পন্য করেনি তারা। ‘স্টার্স’ রাইফেল থেকে আওয়াজ বের হওয়ার আগে থেকেই পুরো স্টেডিয়াম ছিল ‘উসাইন বোল্ট’, ‘উসাইন বোল্ট’ ¯েøাগানে মুখর।
কিন্তু দৌড় শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে হঠাৎই ‘শান্ত ও নীরব’ রুপ নিলো পুরো স্টেডিয়াম। ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়ন্সশিপ তার পুরুষ ১০০ মিটারের রাজাকে খুঁজে নিয়েছে। কিন্তু সেই রাজা যে বোল্ট নয়, এমনকি দুইয়েও পাওয়া গেল না বোল্টের নাম! তিন নম্বরে থেকে প্রিয় ইভেন্টের সমাপ্তিরেখা ছুঁয়েছেন জ্যামাইকান ‘বজ্র বিদ্যুৎ’!
ভক্তদের উদযাপন হঠাৎ থেমে গিয়েছিল শুধু যে বোল্টর কারণে তা নয়। দুই দু’বার ড্রাগ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িয়ে পড়া আমেরিকান জাস্টিন গ্যাটলিনের বিজয়কে অবজ্ঞা করতেও। বিজয়ী হয়েও দর্শকদের অভ্যর্থনা তো পান-ই নি উল্টো দুয়োও শুনতে হয়েছে গ্যাটলিনকে। উর্ধ¦পানে তীর ছুড়ে ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ডের রাজার বিদায়ী উদযাপনটা তো করতে দিলেন না গ্যাটলিনই। ডোপ পাপী হওয়ার চেয়ে দর্শকদের মনে এই রেশও হয়তো কাজ করতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে পারেন ৩৫ বছর বয়সী গ্যাটলিন। ৯.৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সবার আগে দৌড় শেষ করেছেন ২০০৪ অলিম্পিক ১০০ মিটার চ্যাম্পিয়ন। আরেক আমেরিকান ক্রিশ্চিয়ান কোলেম্যানকেও তো ছাড়াতে পারেননি বোল্ট, যার কাছে কয়েক ঘন্টা আগেও হিটে পিছিয়ে ছিলেন। কোলেম্যান ৯.৯৪ সেকেন্ড সময়ে নিয়ে হয়েছেন দ্বিতীয়। ৯.৯৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে তা¤্র পদক জিতে প্রিয় ইভেন্ট শেষ করতে হল বোল্টকে।
কিন্তু তাতে কি মহত্ব একটুও কমে বিশ্বের দ্রæততম মানবের। অলিম্পিকে ডাবলের ট্রিপল জিতে আগেই নিজেকে নিয়ে গেছেন কিংবদন্তির আসনে। সতীর্থ নেস্তা কার্টারের ডোপ পাপে ‘ট্রিপলের ট্রিপল’ রেকর্ডটা হাতছাড়া হয়ে গেছে। তাতে কি, ‘ডাবলের ডাবল’ই যে নেই কারো। গড়েছেন অবিশ্বাস্য সব কীর্তি। ১০০ ও ২০০ মিটারে রেকর্ড ভেঙেছেন দুইবার। দুইবারই ফিনিশিং টাচ এমন হেলে-দুলে আর প্রতিপক্ষকে ভেংচি কেটে ছূঁয়েছেন যে, ওদিকে আরেকটু মন দিলে রেকর্ডটাকে আরো উঁচুতে নিতে পারতেন ৩০ বছর বয়সী বোল্ট। এই প্রথম পেশাদার ক্যারিয়ারে প্রথমে না থেকে দৌড় শেষ করলেন তিনি। এ নিয়ে অবশ্য তার কোন আক্ষেপ নেই, ‘আমি দুঃখিত যে জয় দিয়ে শেষ করতে পারলাম না। কিন্তু সবাইকে এমন সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।’
এর আগে ২০০৯ সাল থেকে আসরে অংশ নিয়ে প্রতিবারই ১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ৪*১০০ মিটার রিলেতে সেরা হয়েছেন বোল্ট (মাঝে ২০১১ সালে ১০০ মিটারে অবশ্য ডিসকোয়লিফাইড হয়ে গিয়েছিলেন)। নিশ্চয় চেয়েছিলেন বিজয়ীর বেশেই প্রিয় ভক্তদের কাছ থেকে বিদায় নিতে কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে হার মেনে হয়তো বুঝিয়ে দিলেন তিনি মর্তেরই একজন।
বোল্ট শোকে হয়তো অনেকে গ্যাটলিনকে ভুলে গিয়েই থাকবেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য যে তাকেই সামনে নিয়ে আসে। দুবারের ডোপ পাপী হলেও চার বছরের নিষেধাজ্ঞাদেশ কাটিয়ে নিয়ম মেনেই তো ট্রাকে ফিরেছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম করে ফিরেছেন শীর্ষ প্রতিযোগীতায়। সম্মানের আশা তো তিনি করতেই পারেন। কিন্তু জয়ের পর দর্শকদের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান না পাওয়ার আক্ষেপ বুকে নিয়ে গ্যাটলিন বলেন, ‘আমি খারাপ কেউ নই। আমি একজন দৌড়বিদ। আমি আমার শাস্তির মেয়াদ কাটিয়ে খেলায় ফিরেছি, সামাজিক দায়ীত্ব পালন করেছি, বাচ্চাদের সাখে কথা বলছি, তাদের সঠিক পথে থাকার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। এর চেয়ে বেশি আমি আর কী করতে পারি। যারা ভুল করে তাদের জন্যেও সমাজ এগুলোই করে। এখনো নিজের সামর্থ্যরে প্রতি আস্থা রেখে দৌড়ে যাচ্ছি।’ জিতলেও বোল্ট-ই যে ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ডের সর্বকালের সেরা তা স্বীকার করে ট্রাকেই বোল্টকে কুর্নিশ করেছেন গ্যাটলিন।
বোল্টও গ্যাটলিনকে তার প্রাপ্য সম্মান বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষেই বললেন, ‘সে তার শাস্তির মেয়াদ শেষ করেছে। সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্সশিপে এসেছে, এর মানে তার কোন সমস্যা নেই।’ গ্যাটলিকে নিজেও সম্মান জানাতে ভোলেননি ৩০ বছর বয়সী বোল্ট, ‘আমি সব সময়ই প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা করি। ক্যারিয়ারে আমি যতজনের সাথে লড়েছি তাদের মধ্যে গ্যাটলিন অন্যতম সেরা। অনেক কষ্ট করে সে নিজের জায়গা ফিরে পেয়েছে।’
১০০ মিটার থেকে বিদায় নিলেও ট্র্যাক থেকে বোল্ট বিদায় নেবেন আগামী ১২ আগস্ট। এদিন চার গুনন একশ মিটারে দৌড়ের মাধ্যমে পেশাদারী ক্যারিয়ার শেষ করবেন উসাইন বোল্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ