Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রযুক্তি বাড়বে ভূগর্ভে পানির স্তরও

প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ৩ আগস্ট, ২০১৭

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এমনকি সিলেট, খুলনা মহানগরীতে সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা। কাদা-পানি ময়লায় চরম দুর্ভোগে নাকাল হন লাখ লাখ নগরবাসী। আর চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্ষণের সাথে জোয়ার ও পাহাড়-টিলার ঢল যোগ হলেই বিশাল এলাকা ডুবে যায়। অথচ শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই পুরো গ্রীস্মকাল পর্যন্ত বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যায়। পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে অবারিত পানি-সম্পদ বৃষ্টির পানি ধরে রাখা বা সংরক্ষণ করাসহ ভূ-উপরিভাগের পানির উপর নির্ভরতার সুযোগের সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে না। বরং কৃষিকাজ, পানীয় ও ব্যবহার্য হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত হারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এর অনিবার্য পরিণতিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, লেয়ার ও মজুদ স্থানভেদে ৫ মিটার থেকে ৩০ এমনকি ৫০ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে।
এই অবস্থার প্রেক্ষাপটে চৌকস তরুণ ও উদীয়মান প্রকৌশলীরা পানিবদ্ধতার সমস্যা-সঙ্কট নিরসনের প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি-প্রজেক্টের মূল দিকটি হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান পানিবদ্ধতা সমস্যার সমাধান। এর প্রস্তাবিত বিষয়- ‘পার্ভিয়াস কনক্রিট পেভমেন্টে’র মাধ্যমে যদি শহর-নগরের সড়ক রাস্তাসমূহ নির্মাণ করা হয় তাহলে অচিরেই পানিবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব। কেননা বর্তমানে প্রচলিত বিটুমিন পেভমেন্ট দিয়ে নির্মিত সড়ক বা রাস্তাঘাট নির্মিত হওয়ায় এর পানি শোষণ করার ক্ষমতা নেই। অন্যদিকে পার্ভিয়াস কনক্রিট পেভমেন্ট সহজেই পানিকে শোষণ করে নেবে এবং তা ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে গিয়ে পৌঁছিয়ে দেবে। এই প্রক্রিয়ায় সড়ক ও রাস্তাঘাট আর পানিবদ্ধ হয়ে থাকবে না।
এর পাশাপাশি একই প্রযুক্তি অনুসরণের মাধ্যমে ক্রমহ্রাসমান ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও ধীরে ধীরে উঁচু হয়ে উঠবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে ভূস্তরে পানির মজুদ বা স্টক। শুধুই তাই নয়; ‘পার্ভিয়াস কনক্রিট পেভমেন্ট’ প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্মিত সড়ক রাস্তাঘাট হবে বিটুমিনের পেভমেন্টের তুলনায় অনেক টেকসই। কেননা সড়ক রাস্তাঘাটে অতিবৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানি জমে থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে গতকাল (বুধবার) আলাপকালে প্রযুক্তিটির তত্ত¡াবধায়ক বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান এম আলী আশরাফ ইনকিলাবকে জানান, আমাদের দেশের আবহাওয়া-জলবায়ু ও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্যের নিরিখে বিশেষত শহর-নগরের জন্য এই প্রযুক্তি বেশ সহায়ক হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে। এর প্রায়োগিক দিককে আরও বিকশিত ও উন্নততর করা যায়। সাউদার্ন ভার্সিটির পুরকৌশল বিভাগের তরুণরা উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে পানিবদ্ধতা নিরসন, টেকসই সড়ক নির্মাণ ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পথ দেখিয়েছে। ‘জনগুরুত্বপূর্ণ সম্পন্ন’ বিষয় হওয়ার বিবেচনায় এটি সেরা প্রযুক্তির প্রজেক্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এরফলে শহর-নগরবাসী পানিবদ্ধতা থেকে একদিন মুক্তি পাবে। ভূগর্ভস্থ পানির উচ্চতাও বৃদ্ধি পাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় টিমের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটির রেপ্লিকা প্রদর্শন করা হয়। বিভাগীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় তরুণদের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানান সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ নুরুল মোস্তফা এবং উদ্যোক্তা-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সরওয়ার জাহান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ