বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আবু হেনা মুক্তি : শ্রাবণের ধারায় বন্দর ও শিল্প নগরী খুলনা এখন পানিতে টইটুম্বুর। পানিবদ্ধতা এখন অভিশাপ হয়ে নগরবাসীকে দানবের মত চেপে ধরেছে। গত সপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণে খুলনার জীবনযাত্রা যেন অচল। রাস্তাঘাটে পানি আর পানি। সরকার আসে সরকার যায়, মেয়র আসে মেয়র যায় তবু জলবদ্ধা থেকে নিস্তার পায়না নগরবাসী। কথা রাখে না কেউই। ভরা বর্ষা মৌসুমের এখনতো অনেক বাকি। মহানগরী ও সংলগ্ন এলাকার ৩৪টি খালের মধ্যে এ যাবত মাত্র ১১টি খাল খনন ও সংস্কার করা হয়েছে। আর এতেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬২ কোটি টাকা। অথচ ৬ দিনের বৃষ্টি পাতে রাস্তাঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজ, ঘর বাড়ি সর্বত্র পানি আর পানি। এক তলা ও নিচু ঘর বাড়িতে পানি ওঠেনি এমন এলাকা খুব কম ছিল।
সূত্রমতে, নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন খুলনা নগরবাসী। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, গত শুক্রবার ভোর ৬টা গত সোমবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবারই হয়েছে ১২৯ মিলিমিটার। এছাড়া গত সোমবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত হয়েছে ৮৪ মিলিমিটার। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই খুলনা শহরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে; পরিমাণে কখনও কম, আবার কখনও বেশি। তবে এই বৃষ্টিতে একপ্রকার গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে নগরবাসী। খুব প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ বের হচ্ছেন না। পেশার তাগিদে বা জরুরি কাজে যারা বের হচ্ছেন, পানিবদ্ধতার কারণে গাড়ি না পেয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনা নগরীর রয়্যাল মোড়, বাইতি পাড়া, তালতলা, শান্তিধাম মোড়, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, পিকচার প্যালেসের মোড়, পিটিআই মোড়, সাতরাস্তার মোড়, শামসুর রহমান রোড, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, ময়লা পোতা, শিববাড়ী মোড়, বড়বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, খালিশপুর, দৌলতপুর, নতুনবাজার, পশ্চিম রূপসা, আহসান আহমেদ রোড, দোলখোলা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, বাবুখান রোড, লবণচরা বান্দা বাজার, পশ্চিম রূপসা, খালিশপুর, দৌলতপুর, খানাজাহান আলী, আড়ংঘাটা এলাকার রাস্তায় পানিবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। নিন্মাঞ্চলের বস্তি ঘরগুলোতে দেখা গেছে হাঁটু পানি। বন্ধ দেখা গেছে বড়বাজারসহ অভিজাত অনেক বিপণীবিতান।
এদিকে বৃষ্টি ও পানিবদ্ধতার কারণে রিকশা, মাহেন্দ্র ও ইজিবাইক চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান বলেন, অবিরাম বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে নাগরিকদের সমস্যা হচ্ছে। তবে নয় উপজেলার কোথায় কোনো বাঁধে ভাঙন বা উল্লেখেযোগ্য ক্ষয়-ক্ষতির তথ্য আসেনি।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু। শুক্রবার সকালে ঘুম ভেঙে নগরীর বাস্তুহারা কলোনীর বাসিন্দারা দেখেন রাস্তা ঘাট সব পানিতে তলিয়ে গেছে। একরাতের বৃষ্টির পানি গত ৭ দিনেও নামেনি। গত কয়েকদিন ধরে খুলনায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে আর পানি বাড়ছে। গত মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত পানিবন্দি ছিলো ওই এলাকার ১০ হাজার মানুষ।
গতকাল নগরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে পানি নামলেও বাস্তুহারা এলাকা এখনও জলমগ্ন। পুলিশ লাইন থেকে আবু নাসের হাসপাতাল পর্যন্ত সড়ক, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখনও হাঁটু পানি।
বাস্তুহারা এলাকার বাসিন্দা ও খালিশপুর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জানান, গত শনিবার বিকালে কোমর সমান পানি ছিল। গত রোববার পানি কমে হাঁটু পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছিলো। এর মধ্যে গত সোমবারের বৃষ্টিতে পানি আবার বেড়েছে। তিনি বলেন, পানিবদ্ধতা এই এলাকার মানুষের বার্ষিক দুর্ভোগ। তবে এ বছর কষ্ট বাড়ছে। আশপাশের সব এলাকার পানি নামলেও বাস্তুহারা ও আশপাশ এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখনও পানির নিচে। এই এলাকায় পানি নিষ্কাশনের খালটি বন্ধ। এছাড়া কিছু কিছু অপরিকল্পিত বাড়ি হওয়ায় পানি নামতে পারে না। অন্য এলাকার পানি এই অঞ্চলে এসে জমা হচ্ছে।
সূত্রমতে, পানিবদ্ধতা রোধে কেসিসি গত ৩ বছর আগে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছিল। যা এখন আবার ঝিমিয়ে গেছে। কারণ নগরীর ৩৪টিসহ ছোট বড় মোট ৫০টি খালের অধিকাংশই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। এর মধ্যে ১১টি খালের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পানি নিষ্কাশনের বন্দবস্ত না থাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর রাস্তাঘাট পানিতে টইটুম্বর হবেই। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ কিছু জায়গায় তড়িৎ পদক্ষেপ না নিলে আসছে বর্ষায় নগরীর অধিকাংশ স্থান পানিতে তলিয়ে যাবে। কেসিসি সূত্র বলছে দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল ১ দিনে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়রের নেতেৃত্বে আশু কিছু তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তার কিছু সুফল এই বর্ষাকালেই পাওয়া যাবে।
সূত্রমতে, গত ১ যুগে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাপক হারে জনবসতি বৃদ্ধি পায়। আবাসনের প্রয়োজনে নগরীর পরিধিও বাড়তে থাকে। গত দু’দশকে বিভিন্ন সরকারের আমলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির দরুন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলতে থাকে খাস জমিও খাল দখলের প্রতিযোগিতা। এসকল কর্মকান্ডে থেমে নেই ভূমি ও জরিপ অফিসের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালীরা যেভাবে পেরেছে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরির পাশাপাশি নিজ নামে রেকর্ড করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। নিজেরাও মালিক হয়েছে। অনেক ভূমি অফিসের কর্মচারী এ সকল অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অনেক জমি জায়গা ও অর্থকড়ির মালিক হয়েছে। ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট ছা-পোষা কর্মচারীরা এখন বিপুল বিত্তবৈভাবের মালিক। অবসরপ্রাপ্ত কাননগো এবং সার্ভেয়ারদের খুলনা মহানগরীতে ৩ তলা ৫ তলা অট্রালিকা ও অনেক জমি জায়গা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।