নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : তার হাতে জোর আছে, মার আছে- জানত সবাই। নিজেও সবসময় বলতেন, আক্রমণাত্মক খেলতেই পছন্দ করেন। কিন্তু হারমানপ্রিত কৌর এদিন যেন ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকেও। বিস্ময় আর মুগ্ধতার ইন্দ্রজালে মোহিত করলেন ক্রিকেট বিশ্বকে। ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা সাবেক ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপ বলছেন, ‘মেয়েদের ক্রিকেটে আমার দেখা সর্বকালের সেরা ইনিংস।’ ২০ চার ও ৭ ছক্কায় ১১৫ বলে অপরাজিত ১৭১ রানের এই ইনিংস ভারতকে নিয়ে গেছে মেয়েদের বিশ্বকাপের ফাইনালে। গেলপরশু ডার্বির সেমিফাইনালে ভারত ৪৫ রানে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও মেয়েদের ক্রিকেটের প্রবল পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে। এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ভারত। সেটিও এক যুগ পর! কিন্তু দলের এমন সাফল্যও আড়াল হয়ে গেছে হারমানপ্রিতের বীরত্বগাঁথায়।
এবারের বিশ্বকাপে আগের ম্যাচগুলিতে প্রত্যাশা মতো পারফর্ম করতে পারেননি হারমানপ্রিত। একটি মাত্র অর্ধশতক করেছিলেন গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচ নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। এদিন যখন উইকেটে যান, দল তখন ধুঁকছে। বৃষ্টিতে ম্যাচ নেমে আসে ৪২ ওভারে। দশম ওভারে হারমানপ্রিত যখন উইকেটে যান, ভারতের রান ২ উইকেটে ৩৫। শুরুতে একটু সময় নিয়ে থিতু হয়েছেন হারমানপ্রিত, টেনে নিয়েছেন দলকে সময়ের সঙ্গে ব্যাট হয়ে উঠেছে বিধ্বংসী। প্রথম পঞ্চাশে লেগেছিল ৬৪ বল। পরের পঞ্চাশে ২৬ বল। সেঞ্চুরি থেকে দেড়শ ছুঁয়েছেন মাত্র ১৭ বলে। দলের রান একশ হতেই ভারতের লাগে ২৫ ওভার। ৩০ ওভারে ছিল ১৩২। হারমানপ্রিতের তাÐবে সেই দল শেষ ১২ ওভারে তুলেছে ১৪৯ রান!
ভারত থামে ৪২ ওভারে ৪ উইকেটে ২৮১ রানে। হারমানপ্রিতের ব্যাটে ভড়কে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া রান তাড়ায় ৩ উইকেট হারিয়ে বসে ২১ রানেই। পরে এলিস ভিলানি করেছেন ৫৮ বলে ৭৫। অ্যালেক্স বø্যাকওয়েল ৫৬ বলে ৯০। ক্রিস্টেন বিমসকে নিয়ে শেষ জুটিতে বø্যাকওয়েল তুলেছেন রেকর্ড ৯৬ রান। তাতে শুধু পরাজয়ের ব্যবধান কেবল কমেছে। অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে যায় ২৪৫ রানে।
পুরো ৫০ ওভারের খেলা হলে হয়ত মেয়েদের ক্রিকেট দেখে ফেলত দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। সেই সুযোগ পাননি হারমানপ্রিত। তবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের মত ম্যাচে মেঘলা আকাশের নিচে ফেবারিট দলের বিপক্ষে ১১৫ বলে অপরাজিত ১৭১ রানের ইনিংসটি অনেকের মতেই সেরাদের সেরা ইনিংস। ২৮ বছর বয়সী ব্যাটার খেলেছেন কব্জির চোট নিয়ে, তাতে আরও বেড়ে যাচ্ছে ইনিংসের মাহাত্ম।
বিশপের মত অনেকেই হারমানপ্রিতের ইনিংস দেখে নিজেদের মুগ্ধতা জানিয়েছেন টুইটারে। মেয়েদের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ব্যাটারদের একজন, অনেক রেকর্ড গড়া শার্লট এডওয়ার্ডস যেমন বলছেন, ‘হারমানপ্রিতকে কুর্নিশ, আমার দেখা সবসময়ের সেরা ইনিংস।’ নিজে অনেক অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়া শচীন টেন্ডুলকারও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, ‘হারমানপ্রিতের অবিশ্বাস্য ইনিংস!’ একরকম প্রতিক্রিয়া যুবরাজ সিংয়ের, ‘অবিশ্বাস্য ইনিংস। এই ধরনের ইনিংস সব ধরণের ক্রিকেট মিলিয়েও সবসময় দেখা যায় না।’ ভারতের নতুন কোচ রবি শাস্ত্রি লিখেছেন, ‘হারমানপ্রিত, তুমি রকস্টার! ¯্রফে অসাধারণ।’
একরকম উচ্ছ¡াসর প্রকাশ ছিল ভিভিএস লক্ষন, মাইকেল ভন, রোহিত শর্মা, কপিল দেব, অনিল কুম্বলে, হরভজন সিং, মোহাম্মদ কাইফ, সুরেশ রায়না, চেতেশ্বর পূজারা, হার্শা ভোগলেদের টুইটেও। হারমানপ্রিত ঝড় বইয়ে দিয়েছেন গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায়।
আগামীকাল লর্ডসের ফাইনালে এই ঝড় সামলানোর চ্যালেঞ্জ থাকবে ইংলিশ মেয়েদের সামনে। ইংল্যান্ডের লক্ষ্য থাকবে চতুর্থ শিরোপা, ভারতের প্রথম!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।