Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোরাইল বস্তি সরাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহাখালীর ৯০ একর সরকারি জমির ওপর গড়ে ওঠা রাজধানীর বৃহত্তম বস্তি হিসেবে পরিচিত কোরাইল বস্তিতে অন্তত ২০টি সিন্ডিকেট অবৈধ গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অর্থের একটা বড় অংশ স্থানীয় পুলিশ ও সেবাদানকারী সংস্থা তিনটির কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে ব্যয় করে সিন্ডিকেটগুলো। প্রায় ৩০ হাজার পরিবার ওই বস্তিতে বসবাস করে। লোকসংখ্যা প্রায় এক লাখ এবং ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজারের মতো। বস্তিবাসীদের সূত্রমতে, বস্তিতে ১০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে, ১৫ হাজার রয়েছে অবৈধ পানির সংযোগ এবং রয়েছে অনুরূপ সংখ্যার অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট প্রতি গ্যাস সংযোগে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য সংযোগে ১৫০০ টাকা আদায় করে। একটি বৈদ্যুতিক বাতির জন্য প্রতি মাসে দিতে হয় ১৭০ টাকা ও প্রতি ফ্যানের জন্য ১৭০ টাকা। পানির জন্য প্রতি মাসে প্রকারভেদে ১৫০ টাকা, ৩০০ টাকা ও ৬০০ টাকা দিতে হয়। প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে, প্রত্যেক সিন্ডিকেটের আলাদা আলাদা ম্যানেজার, কর্মচারী, লাইনম্যান ও ভাড়া আদায়কারী রয়েছে। প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে নির্ধারিত ভাড়ামূল্য পরিশোধ করতে হয়। ব্যত্যয় হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দেয়া হয়; পরিশোধ সাপেক্ষ আবার সংযোগ প্রদান করা হয়। সিন্ডিকেটগুলো তাদের এলাকা ভাগ করে নিয়ে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা তিন সেবা সংস্থার একশ্রেণীর কর্মচারীর কাছ থেকে টেকনিক্যাল সহায়তা লাভ করে থাকে। নূর বানু নামের এক সিন্ডিকেট চালনাকারী প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রতি মাসে তার কালেকশন ৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে তাকে বনানী পুলিশকে প্রতি মাসে ১ লাখ, স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসকে ৫০ হাজার এবং ওয়াসা অফিসকে ১০ হাজার টাকা গিতে হয়। আর কর্মচারীদের বেতন দিতে হয় ১ লাখ টাকা।
রাজধানীর বনানী-গুলশানের মতো স্পর্শকাতর এলাকার কাছে এত বড় একটি বস্তি কীভাবে গড়ে উঠতে ও টিকে থাকতে পারে এবং কীভাবে সরকারের সেবাসম্পদের এরূপ অবৈধ ব্যবসা কিছু সিন্ডিকেট নামের প্রভাবশালী চক্র চালিয়ে যেতে পারে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এটা শুধু বিস্ময়কর নয়, উদ্বেগজনকও বটে। রাজধানীর বস্তিগুলো সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পোষণের কোনো অবকাশ নেই। সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের আখড়া হিসেবে, মাদক ব্যবসার নিরাপদ স্থান হিসেবে, অবৈধ ও অসামাজিক কাজকর্মের অকুস্থল হিসেবে বস্তিগুলো বিশেষ পরিচিত। কোরাইল বস্তিও তার ব্যতিক্রম নয়। এর আগে এই বস্তিতে অবৈধ ব্যবসা ও প্রভাববলয় বিস্তারকে কেন্দ্র করে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে এ বস্তিতে একজন গার্মেন্ট কর্মীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। বনানী-গুলশান এলাকার নিরাপত্তা বিশেষত কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তার ব্যাপারে সব সময়ই চিন্তা করা হয়। বস্তির কারণে এই নিরাপত্তার হুমকি যে একটু বেশি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিছু লোকের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বস্তিটি বহাল ও টিকিয়ে রাখতে হবে, এর কোনো মানে হতে পারে না। প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্টই প্রতিভাত হয়েছে, বস্তি টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটগুলোর অবৈধ কারবার যেমন দায়ী তেমনি সেবা সংস্থাগুলোর ‘সহযোগিতাও’ দায়ী। এই সঙ্গে স্থানীয় পুলিশের প্রশ্রয় ও ঘুষ বাণিজ্যও দায়ী। বনানী পুলিশের তরফে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। মহাখালী ওয়াসা অফিসের পক্ষ থেকে অবৈধ সংযোগের ব্যাপারে অজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে জানানো হয়েছে, বস্তিতে ১০ হাজার সংযোগ দেয়া হয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্যদের কারো কারো দাবি, এই ১০ হাজার সংযোগের নামে ২৫ হাজার ঘরে সংযোগ দেয়া হয়েছে। গুলশানের ডেসকো কর্তৃপক্ষ বলেছে, বস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য ৩৫টি বড় ‘পোলমিটার’ বসানো হয়েছে। বস্তুত, কোনো পক্ষই অভিযোগ স্বীকার করতে চায়নি। প্রশ্ন হলো, তাহলে এই অবৈধ ব্যবসা কিভাবে চলছে?
এই বস্তিতে সাধারণত হকার, ছোট দোকানদার, রিকশা-ভ্যান-সিএনজি চালক, গৃহকর্মী ও গার্মেন্টকর্মীরা বাস করে। বাস্তুহারা মানুষও এখানে এসে আশ্রয় নেয়। মওসুমী ফকিরদেরও আশ্রয় নিতে দেখা যায়। স্বল্প ব্যয়ে বসবাস করা যায় বলেই এখানে এই সব শ্রেণীর মানুষ অবস্থান নিয়েছে। তারা কিন্তু ঘর ভাড়া ও গ্যাস-বিদ্যুৎ পানির জন্য নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করছে নিয়মিত। কিন্তু তাদের দেয় এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না। সাতে ভ‚তে তা লোপাট করছে। ওদিকে যারা গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের বৈধ গ্রাহক তারা এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, গুরুত্বপূর্ণ দু’টি এলাকার বুকের মাঝখানে এই বিরাট ক্ষতসদৃশ বস্তির অবস্থান নগর সৌন্দর্যের হানি ঘটাচ্ছে এবং নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে বিরাজ করছে। সঙ্গতকারণেই এত বড় বিশাল বস্তি এখানে থাকতে পারে না। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। কিছু লোকের অবৈধ ব্যবসা, পুলিশ ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার একশ্রেণীর কর্মকর্তার বাণিজ্য এবং ভোটের রাজনীতির জন্য এই বস্তি টিকিয়ে রাখতে হবে কেন? বস্তি সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। তার আগে বস্তিবাসীদের আশ্রয়ের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। তারও আগে সিন্ডিকেটগুলোর অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। এই সঙ্গে উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ ও সেবা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।



 

Show all comments
  • বাবুল আক্তার ১১ জুলাই, ২০১৭, ৯:৫৬ এএম says : 0
    This place is important for Dhaka. So I hope that government will take steep t o stop this basti. Actualy some Government officer take money from the basti. . Only good rule can take step.
    Total Reply(0) Reply
  • রনি ১১ জুলাই, ২০১৭, ১২:৪৩ পিএম says : 0
    এখানে ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার, তার সাঙ্গপাঙ্গরা জড়িত, যেমন, আতর আলী, শাহিন, মহিউদ্দিন, ইদ্রিস, কাউন্সিলারের দোস্তরা টাকা পায়। এটা প্রকাশ্যে ঘোষিত। সবাই জানে, আর সন্ত্রাস, মাদক, হত্যার পিছনে রয়েছে প্রত্যক্ষ মদদ। আরো অনুসন্ধান করুন। খবরের পর খবর বেড়িয়ে আসবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টাকা


আরও
আরও পড়ুন