Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীন কি সত্যই বিশ্ব নেতা হতে চলেছে

| প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ডিপিএ : বাণিজ্য ও পরিবেশ রক্ষার মত ক্ষেত্রগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করার পর সৃষ্ট শূন্যতা পূরণে এগিয়ে এসেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে দেশটি বিশ্ব ব্যবস্থার এক অপছন্দনীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। হামবুর্গে জি ২০ শীর্ষ বৈঠকের আগে পর্যবেক্ষকরা চীনা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বিশ্বায়নের দিকে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন।
জুনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার পর সবার নজর গিয়ে পড়ে চীনের উপর। বিশে^র বৃহত্তম গ্রীনহাউস গাস নির্গমনকারী কিন্তু নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে বৃহত্তম বিনিয়োগকারী চীন প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করার অঙ্গীকারের জন্য প্রশংসিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র যখন প্যারিস চুক্তি থেকে পিছিয়ে যায়, তখন এ চুক্তির পাশে দাঁড়ানোর জন্য চীন আরেকবার প্রশংসা লাভ করে। বিশ্লেষক ও মিডিয়া ভবিষ্যদ্বাণী করে যে চীন বিশে^র নয়া জলবায়ু নেতা হতে চলেছে। তারা সম্ভবত বেশী আশাবাদী হয়েছিলেন।
ট্রাস্প যখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন চীনা নেতৃত্ব তখন চীন-ইইউ শীর্ষ বৈঠকে ব্রাসেলসে ছিলেন। তাদের ইউরোপীয় প্রতিপক্ষের সাথে প্যারিস চুক্তির প্রতি জোর সমর্থন জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করেন। সেই খসড়া বিবৃতি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।
পরিবেশবিদরা এতে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেন এবং তা ঘোষণার জন্য দু’ পক্ষের অপেক্ষায় থাকেন।
কিন্তু তারা কখনোই তা ঘোষণা করেনি।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিকিয়াং বিশ^ বাণিজ্য সংস্থার সাথে ‘বাজার অর্থনীতি মর্যাদা’য় চীনের প্রবেশ লাভের জন্য ইইউ-র সমর্থন লাভ করতে এ বিবৃতিকে দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তা যখন হল না তখন তিনি জলবায়ু বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান।
ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র অধিকতর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকায় চীন জলবায়ু ও বাণিজ্যের মত ক্ষেত্রগুলোতে এক অপছন্দনীয় বিশ^নেতা হিসেবে আলোচনায় প্রবেশ করে। এ জুলাইতে হামবুর্গে প্রধান শিল্পোন্নত ও উদীয়মান  অর্থনীতির জি ২০ শীর্ষ বৈঠককালে চীনের অবস্থান পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে ব্রাসেলস অধ্যায়ের মত বিশ^ নেতৃত্বের পথে চীনের যাত্রা হচ্ছে দু’পা এগোনো আর এক পা পিছানোর মত। পর্যবেক্ষকরা বলেন, স্বচ্ছতার অভাব ও আইনের বন্ধন প্রবণতার কারণে তার উচ্চাকাক্সক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সাংহাই বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাপক জিয়াং শিজু জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তার দেশের লড়াই প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত গেøাবাল টাইমসকে বলেন, চীনের জন্য বিশ^ নেতৃত্ব গ্রহণ খুব বেশী, খুব দ্রæত হয়ে যায়।
চীন গত বছর নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে ৭৮.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে যা ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের চেয়ে  বেশী। ২০২০ সাল নাগাদ সে অতিরিক্ত ৩৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে এবং ইতোমধ্যে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির বিশ^ব্যাপী কর্মশক্তির ৪০ শতাংশেরও বেশী নিয়োগ করেছে।
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, চীন পরামর্শ প্রদান, অন্যদের বোঝানো, অথবা আরো উপরে যাওয়া ও তার নিজের নির্ধারিত লক্ষ্য অতিক্রমের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয় না।
বিশ^ যখন নেতা হিসেবে চীনের ব্যাপারে কথা বলছে তখন সে অর্ধেক পথে রয়েছে।
বার্লিনে চায়না ইনসিটিউট মেরিকস-এর মিক্কো হুয়োতারি বলেন, আমরা উপলব্ধির শক্তির অবমূল্যায়ন করেছি।
ট্রাম্পের সংরক্ষণশীল ব্যবস্থার বিপরীতে চীন মুক্ত বাণিজ্যের একজন রক্ষক হিসেবে নিজেকে তৈরি করছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানুয়ারিতে মুক্ত বাণিজ্য ও বিশ^ায়নের পক্ষে দাভোসে এক স্মরণীয় বক্তৃতা দেন যা তখন থেকে ‘সারমন অন দি মাউন্ট’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে।
মঙ্গলবার চীনের দালিয়ান শহরে সামার দাভোস নামে পরিচিত এক অনুষ্ঠান উদ্বোধনের সময় বক্তৃতায় একই ধারণার পুনরাবৃত্তি করেন। ট্রাম্পের সুষ্ঠু বাণিজ্য চুক্তি ও অতিরিক্ত শুল্ক বিষয়ে ট্রাম্পের উদ্যোগ প্রসঙ্গে লি বলেন, মুক্ত বাণিজ্যের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু বাণিজ্য। লি অঙ্গীকার করেন যে চীন তার নির্মাণ ও সেবা খাতে আরো উন্মুক্ত প্রবেশাকিার দেবে এবং বিদেশী ও দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সমমর্যাদা দেবে।
সমালোচকরা বলেন, বাস্তবে চীন তার নিজের বাজারে অত্যধিক প্রতিবন্ধকতা বজায় রেখেছে। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো গত মাসে বলে, তারা চীনে ব্যবসা করাকে কঠিন মনে করে এবং তাদেরকে আগের চেয়ে কম স্বাগত জানানো হচ্ছে বলে দেখছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উনানয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-র উপদেষ্টা জোয়ার্গ উটকি বলেন, ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে একটি বাণিজ্য কাঠামো তৈরি করেছে এবং আমরা এখন তা থেকে সরে আসছি।
তিনি বলেন, এ প্রেক্ষিতে চীন কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে ঐকমত্য লাভের চেষ্টায় হয়ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পছন্দ করতে পারে।
হুয়োতারি বলেন, চীন তার নিজের জন্য যেখানে প্রয়োজন সেখানে দায়িত্ব নেয় এবং তা নিজের শর্তে। তিনি বলেন, চীনের দৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হবে দ্বিপাক্ষিক, অস্পষ্ট, ক্ষুদ্র দেশগুলোকে রক্ষার জন্য বেশী আইন বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া, তবে সে কøাবগুলোর সাথে যেগুলোর চালিকা শক্তি হিসেবে আছে চীন।
এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) এবং জাতিসংঘ শান্তি মিশনে চীনের অংশগ্রহণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে চীনা নেতৃত্বের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।   
চীনের সর্বাপেক্ষা উচ্চাভিলাষী বিদেশ ও অর্থনৈতিক নীতি হচ্ছে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ যার লক্ষ্য ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা বরাবর বাণিজ্য ও অবকাঠামো সৃষ্টি।
চীনে জার্মানির রাষ্ট্রদূত মাইকেল ক্লাউস চীনের বিদেশী সংবাদদাতা ক্লাবের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, এ উদ্যোগ নীতিগত ভাবে ইতিবাচক , কারণ তা বিশ^ায়নের বিস্তার করছে। এটা সে সব দেশের জন্য বিনিয়োগ নিয়ে আসছে যেগুলো ঐতিহ্যগতভাবে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় নয়। বেল্ট অ্যান্ড রোড দেশগুলোর দু’তৃতীয়াংশের বিনিয়োগ গ্রেডের  নীচে সার্বভৌম ঋণ হার রয়েছে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের ব্যাপারে রক্ষণশীল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের এর সাথে অধিকভাবে জড়িত হওয়া এবং একে এক স্বচ্ছ, আইন ভিত্তিক ব্যবস্থায় আনা উচিত যা সামাজিক ও পরিবেশগত মানকে বিবেচনায় নেবে।   
ক্লাউস বলেন, এটি হচ্ছে চীনা বৈশিষ্ট্যের বিশ^ায়ন, অনুক্রমিক ও বেইজিং-এর সাথে বলিষ্ঠ ভাবে সংযুক্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ