পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার বাড়ছে। ঠুনকো অভিযোগেই মামলা হচ্ছে। ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও মানহানি শব্দগুলো ব্যবহার করে দায়ের হচ্ছে এসব মামলা। গত এক বছরে সারা দেশে অন্তত ৫০টি মামলা হয়। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২০টি মামলা হয়। এতে আসামি হয়েছেন ছাত্র, শিক্ষক ও সাংবাদিক। অনেক আবার জেলও খাটছেন। মামলা থেকে মুক্তি পেতে আদালত প্রাঙ্গণে দিন রাত ঘুরছেন। আইনটি যেন সবার কাছে এক ধরনের আতঙ্কের নাম। ৫৭ ধারার মামলা নিয়ে সব থেকে বেশি আতঙ্কে মধ্যে রয়েছেন মানবাধিকার কর্মী, প্রগতিশীল লেখক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সরকার বিরোধীরা।
আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ধারার ফলে বাক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। যারা গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, সুশাসনের কথা বলেন তাদের বিরুদ্ধেই এই ধারার প্রয়োগ হচ্ছে বেশি। এটা স্পষ্ট সরকার কর্তৃত্ববাদী লোকজনদের হাতে মোক্ষম অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন। শুরু থেকে এ ধারা নিয়ে মানবাধিকার কর্মীর্দের মধ্যে অসস্তোষ ছিলো। একই সঙ্গে অবিলম্বের আইনটি বাতিলেরও দাবি জানানো হয়। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আসিনুল হক বলেছিলেন, এ ধারার আপত্তিকর শব্দগুলো বাদ দেয়া হবে। এরপর তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। উল্টো এখন ওই ধারার মামলা করার প্রতিযোগিত চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইন মন্ত্রী ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ৫৭ ধারার আইনের কতগুলো বিষয় সংশোধন করা উচিত। কারণ এটা এখন ব্যাপকহারে অপব্যহার হচ্ছে। বিশেষ করে মামলা হওয়ার আগে অভিযোগের বিষয়ে ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। তিনি বলেন, ৫৭ ধারায় হয়রানির আশঙ্কা তো বাস্তবেই আমরা দেখছি। ে ফেসবুকে কেউ একটা স্ট্যাটাস দিল, তাতে কি বলা হল, কেউ কারও অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কিছু লিখে দিল কিনা বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টটি সত্য ছিল কিনা- এসব তদন্ত না করে তো মামলা নেয়া উচিত নয়। তনি আরো বলেন, তদন্তে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে কোন ব্যক্তির মান মর্যাদা ক্ষুন্ন করার চেস্টা সঠিক বলে প্রতিয়মান হয়, তাহলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ৫৭ ধারার মামলা গ্রহণ করবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ৫৭ ধারা জনগণের কন্ঠরোধ এবং হরয়ানী মোক্ষম অস্ত্র। আইনটি অসম্পূন্ন। এ আইনের কতগুলো ধারা যে অপরাধ বলা হয়েছে সেুগলো কোন ব্যাখ্যা নাই। যার ফলে এই আইনটি বিশেষ করে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করা একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। যে কোন সাংবাদিক ও বৃদ্ধিজীবী মহলের যে কোন সংবাদ ও বক্তব্য ৫৭ ধারা বদলতে মামলা করা যায়। একই সঙ্গে সঙ্গে সে গ্রেফতার হন। এটা অজামিন অযোগ্য অপরাধ। সেজন্যই আদালত এই মামলা জামিন দিবেন কিনা দ্বিদ্ধাগ্রস্থ থাকেন। তাই আমি মনে করি এই আইনটি অবিলম্বে বাতিল করা দরকার। তিনি আরো বলেন, আগে সম্পাদকদের বলা হয়েছিল আইনটি বাতিল করা হবে কিন্তু অদৃশ্য কারণে আইনটি আর বাতিল হয়নি। আইনটি এখন সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের জন্য বাক স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। আইনটি দেশের গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরুপ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শাহদীন মালিক ইনকিলাবকে বলেন, অপরাধগুলো এত ঢালাভাবে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিই প্রায় নো কোন বক্তব্যে জন্য এই্ আইনে আওতায় আনা যায়। এখন সেসবই হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সব সময় ক্ষমতাসী দল কালো আইন প্রয়োগ করে খুব মজা পায়। এজন্য কালো কখনো বাতিল করে না। অতএত আমি মনে করি এই আইন বহাল থাকবে। এই আইন সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীসহ অনেকেই এই আইনের অপ্রয়োগ শিকার হচ্ছেন ও হবেন। এটা কালো আইন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করে রাজি হননি।
২০০৬ সালে প্রথম তথ্যপ্রযুক্তি আইন তৈরি করা হয়।ওই আইনে নয়টি অধ্যায়ে মোট ৯০টি ধারা যুক্ত করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি অনুধাবণ করে সরকার ২০১১ সালে আইনটি সংশোধন আনার চিন্তা শুরু করে। ২০১৩ সালে আইন সংশোধন করে আইন প্রণয়ন করা হয়। একই বছরের ৮ অক্টোবর সংসদে সংশোধিত আকারে পাস করা হয়। এরপর থেকে সমালোচনা শুরু হয়। মানবাধিকারকর্মী অনলাইন ব্যবহারকারীদের অনেকেই মনে করছেন, এ আইনের অপব্যবহার হতে পারে। কারণ আইনটিতে পুলিশকে সরাসরি মামলা করার ও পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
৫৭ ধারার ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়, কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং ন্যুনতম সাত বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন।
২০১৫ সালে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের ও তাঁকে গ্রেফতারের পর ধারাটি বাতিলের জন্য সর্বপ্রথম বিভিন্ন পক্ষ থেকে দাবি ওঠে। পরবর্তীতে আইনমন্ত্রী ধারাটি সংশোধন করা হবে এমন প্রতিশ্রæতি দেন। এখন পর্যন্ত এটি বহাল আছে এবং এর অপব্যবহারও হচ্ছে। গত বছর ৫৭ ধারার ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আসামি হয়ে কমপক্ষে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জেল খেটেছেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছেন। সমালোচনা করে মামলার আসামি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভুক্তভোগীদের তালিকায় মৎস্যজীবী এবং সাংবাদিকও রয়েছেন।
সর্বশেষ মামলাটি হয় গত ১৩ জুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক গোলাম মুজতবার বিরুদ্ধে। মানিকগঞ্জে মালবাহী ট্রাকের কারণে একটি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে নেয়ার পথ আটকে যাওয়া সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন একজন বিচারক।
এর আগে মুক্তিযোদ্ধা ও হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা রফিকের মালিকানাধীন স্থানীয় দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকায় আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না মজিদ খান শিরোনামে সংবাদের জের ধরে মামলা করা হয় গোলাম মোস্তফা রফিকের বিরুদ্ধে।
এছাড়া খুলনায় সিএমএম আদালতের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দৈনিক সময়ের খবর পত্রিকার সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ান এবং দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার প্রধান কাজী মোতাহার রহমানের বিরুদ্ধে ১৪ই জুন খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মামলা করেন।
গত ৩০শে মার্চ তথ্যপ্রযুক্তির আইনের ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করা হয় বেসরকারি বাংলাভিশন চ্যানেল কুষ্টিয়া প্রতিনিধি হাসান আলী এবং দৈনিক কুষ্টিয়া দর্পণের স্টাফ রিপোর্টার আসলাম আলীকে। গত ২৮ জানুয়ারি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সদ্য স্থগিত কমিটির সভাপতি মেহেদি হাসান শিশির ডলার নামের এক ব্যক্তিসহ সাত-আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে মেহেদি ইউটিউব ও ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁর ‘মানহানি ও ভাবমূর্তি’ ক্ষুন্ন করার অভিযোগ আনেন। এছাড়াও ফেসবুকে সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে জড়িয়ে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন এমন অভিযোগে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আফসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। পরে আফসান চৌধুরীর হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৬ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে দেখা যায়, তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে ৩৫টি মামলা দায়েরের তথ্য দেয়া হয়। মামলাগুলো দায়ের করেছেন মূলত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
######
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।