পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা
নদ-নদীর নাব্য হ্রাসে ধেয়ে আসছে লোনা পানি। লোনা পানিতে গ্রাস করছে আবাদী জমি, গাছপালা ও ঘরবাড়ি। নষ্ট করছে পরিবেশ। বিস্তীর্ণ এলাকা চোখের সামনে হচ্ছে বিরাণভূমি। এই চিত্র সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট উপকুলীয় এলাকার। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে চলছে মানবসৃষ্ট চিংড়ি ঘেরের দুর্যোগ। চিংড়ি ঘের মালিকরা লোনা পানি ঢুকিয়ে আবাদী জমি নষ্ট করে ঘেরের আওতায় নিয়ে আসে। তারপর একসময় জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে কৃষকের। এভাবে ঘের ব্যবসা বাড়ছে। কমছে আবাদী জমি। কৃষক হচ্ছেন ভুমিহীন। লেখালেখি হয় কিন্তু জোরালো বাদ- প্রতিবাদ নেই। বরং ঘের মালিকদের লাগামহীন দাপটে জমির মালিকরা থাকেন ভীত-সন্ত্রস্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই তার উপর মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হয়েছে উপকুলবাসির নিত্যসঙ্গী। উপকুলে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়ী বাঁধ প্রায়ই ভেঙ্গে লোনাপানি ঢোকে। ভেড়ী বাঁধ ছিদ্র করে পাইপে ঘেরে লোনাপানি ঢুকানোর রমরমা ব্যবসা করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণীর কর্মকর্তা।
সর্বশেষ ঈদের আগে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বন্যাতলা ভেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে এলাকার মানুষের ঈদ আনান্দ মাটি করে দেয়। এরকম ঘটনা প্রায় ঘটে উপকুলীয় এলাকায়। ঘেরের কারণে সাতক্ষীরা. শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, তালা, বাগেরহাট, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলাসহ উপকুলের হাজার হাজার হেক্টর আবাদী জমি যা চাষীদের বেঁচে থাকার অবলম্বন তা ধ্বংস করা হয়েছে। লবনাক্ত এলাকায় সবুজের চিহ্ন নেই, শ্যাওলাও পচে কালো হয়ে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মানবসৃষ্ট দুর্যোগ উপকুলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করছে।
সরেজমিনে যশোর থেকে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলকায় ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের এলাকা কমছে। বাড়ছে ঘেরের সংখ্যা। ঘেরের পাশের বহু আবাদী জমিতে চাষাবাদ হয় না বললেই চলে। আশাশুনি ও শ্যামনগর এলাকায় একটি চিত্র রাস্তার একপাশে সবুজঘেরা মাঠ আরেকপাশে লবণাক্তায় গ্রাস করা বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠ। যেসব কৃষকের ২/১ বিঘা জমি ছিল, আবাদ করে বছরের খাদ্য চাহিদা পুরণ করতেন, তারা আজ ভিন্ন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন ঘের মালিকদের কারণে। মাঠের পর মাঠ লোনা পানি ঢুকিয়ে একরকম জমি দখল করে নেয়া হয়েছে। মিঠা পানির অভাবে মাঠের পর মাঠ আবাদী জমি থাকছে অনাবাদী।
মাঠে কর্মরত চাষীরা জানালেন, ঘের মালিকরা নানা কৌশলে ও জোরজবরদস্তি ঢালাওভাবে আবাদী জমি দখল করছে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে। কেউ রুখে দাঁড়ালে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করা হয়। তাদের কথা দখলের পর দখলে আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। যা একটু জমি আছে তাতে চাষাবাদ করে বাঁচার চেষ্টা করছি, তাও সর্বনাশ হচ্ছে লবনাক্ততায়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, চোখের সামনে সর্বনাশ দেখছি, কিছুই বলতে পারছি না। লোনা পানির কারণে ধানের চারা লাল হয়ে যায়। অন্য কোন আবাদও করতে পারি না। শ্যামনগরের খাটিকাটা ও কাশিমারী মাঠসহ উপজেলাটির ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতেই বিরাজ করছে একই অবস্থা। অভিনব সব পন্থায় লোনা পানি ঢুকিয়ে একপর্যায়ে পানির দামে আবাদী জমি ক্রয় করে চিংড়ি ঘের করা হয়। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মহেশ্বরকাটি ¯ুইস গেট দিয়ে লোনা পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকার আবাদী জমি নষ্ট হয়েছে। ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট লবনসহিঞ্চু জাত আবিস্কার করে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ঠিকই। কিন্তু তা জোরদার নয়। কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের কথা, মৎস্য জোন হিসেবে চিহ্নিত চিংড়ি ঘের এলাকায় লবন পানিতে মাছ চাষ হোক, তাতে কোন চাষী বিরোধীতা করবে না। কিন্তু চিংড়ি ঘেরের কারণে আবাদী জমি বিরাণভুমিতে পরিণত হবে এটি মেনে নেয়া যায় না।
খুলনার কয়রা এলাকার চিত্র সবচেয়ে ভয়াবহ। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপজেলবাসি একরকম যুদ্ধ তরে টিকে আছেন। কয়রার সদর, বেতবুনিয়া, মহারাজপুরসহ ৬টি ইউনিয়নের চারপাশে ভেড়ীবাঁধ। ইউনিয়নগুলোতে প্রায় ১০হাজার ঘের রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৩/১ ও ১৪/২ পোল্ডার দিয়ে লোনা পানি ঢুকানো সম্পূর্ণ নিষেধ। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ঘের মালিকদের সঙ্গে গোপন আতাত করে লোনা পানি ঢুকাচ্ছে। এলাকায় রীতিমতো লোনা পানি ব্যবসা চলছে। এর কারণে উপকুলীয় অঞ্চলের বহু চাষী ভূমিহীন হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। শুধু উপুকলীয় অঞ্চলেই নয়, নড়াইলসহ বিভিন্ন এলাকায় লবণাক্ততা এমনিতেই ধেয়ে আসছে। দিনে দিনে এর মাত্রা বাড়ছেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।