নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
মোঃ আলতাফ হোসেন : প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন কৌশল আবিষ্কার করে আসছে এবং ক্রমেই তা আধুনিকতর হয়েছে। খালি হাতে নিজেকে বাঁচানোর একটি কৌশল এবং অন্যতম কৌশল হচ্ছে কারাতে। কারাতে আক্রমন প্রতিরোধ কৌশল সম্বলিত একজাতীয় এশীয় খেলা। এ খেলায় হাত ও পায়ের ব্যবহার মুখ্য। আর কংফুতে পায়ের চেয়ে হাতের ব্যবহার বেশি। বিশ্বব্যাপী নারী, পুরুষ ও শিশুরা প্রতিযোগিতা কিংবা আত্মরক্ষার জন্য কারাতে চর্চা করে। এ খেলা শুধু আত্মরক্ষামূলক নয়, প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করা এবং পাল্টা প্রতিঘাত করে তাকে দুর্বল করাই এ খেলার মুলমন্ত্র। যারা কারাতে খেলে থাকেন তাদের কোনো রকম অস্ত্র ব্যবহার না করে খালি হাতে লড়তে হয়। কারাতে বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক খেলা। স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশে কারাতের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে জুডো এন্ড কারাতে ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে দেশে কারাতের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। প্রিয় পাঠক ‘আত্মরক্ষায় কারাতে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ১২তম পর্বে আজ আমরা আলোচনা করবো আচমকা (বøক)’র প্রথম ইভেন্ট ‘ডোডকী’ নিয়ে।
শুরুতেই আমরা ডোডকীর ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্পর্কে জেনে নেবো। কারাতে প্রশিক্ষনে শিক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে যে, আঘাত করা এবং প্রতিরক্ষা করা দুটোই আয়ত্ব করতে হবে। আর আঘাত করার পাশাপাশি যদি নিজেকে রক্ষা করার কৌশল জানা না থাকে তাহলে প্রতিপক্ষের কাছে হারতে হবে। নিজেকে রক্ষা করার জন্য কারাতে প্রশিক্ষণে আচমকা অর্থাৎ বøকের ব্যবহার প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে রপ্ত করে নিতে হবে। যাতে সে আক্রমণের পাশাপাশি নিজেকে রক্ষা করতে পারে। আর এ রক্ষা করার মূলমন্ত্রই হচ্ছে আচমকা অর্থাৎ বøক। ডোডকী প্রশিক্ষণের পূর্বে শিক্ষার্থী অন্যান্য দিনের ন্যায় ওয়ার্মআপ ও ব্যায়াম করে নিতে হবে। যে কোনো খেলাধুলা করার পূর্বেই ওয়ার্ম আপ ও ব্যায়াম করে নিতে হয়। ব্যায়াম বা ওয়ার্মআপের ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়,শরীর ও মাসেলের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে; মাসেলের কাজ করার গতিও বাড়ে, শ্বাস প্রশাস গতিতে সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ব্যায়ামের ফলে ইনজুরি, মাসেলপুল,হার্ট অ্যাটাকসহ নানা সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
আমাদের গত লেসনে ছিল ইচাগিরী। আজের আচমকা (বøক)’র ডোডকী ইভেন্টে ঠিক আগের মতই শিক্ষার্থীকে প্রথমে সালাম বা বো করে কিবাডাসী পজিশনে দাঁড়াতে হবে। হাত দুটি কোমড়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকবে। এবার মুষ্টিবদ্ধ থাকা দু’হাতের মধ্যে বাম হাতে প্রথমে ডোডকী করতে হবে এবং সেই সাথে ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায়ই থাকবে। এবার ডোডকী মারার কৌশলটি শিক্ষার্থীকে ভালভাবে শিখে নিতে হবে। বাম হাতটি কোমড় থেকে বুকের সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে মাথার তালু বরাবর নাকের সামনে ২/৩ ইঞ্চি ফাঁক করে মারতে হবে। আর হাতের পজিশনটি তালুর অংশটি মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকা অংশ বুকের বরাবর থাকবে। এর পরে ডান হাতে ডোডকী মারার সময় বাম হাত চলে যাবে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় বাম কোমড়ে। আর ডান হাত মারতে হবে ঠিক বাম হাতের ন্যায় একই কায়দায় অর্থাৎ বুকের সামনে দিয়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় ঘুরিয়ে মাথার তালু বরাবর নাকের ২/৩ ইঞ্চি ফাঁক করে মারতে হবে। আর হাতের পজিশনটি তালুর অংশটি মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকা বুক বরাবর থাকবে। ডোডকী মারার সময় শিক্ষার্র্থীকে অবশ্যই ‘হোইচ’ শব্দ করে মারতে হবে। এভাবে একবার বাম হাতে একবার ডান হাতে বেশ কয়েকবার ডোডকী করা যেতে পারে। ডোডকী করার সময় শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন উভয় হাতই আর্ট ফুল অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ যখন বাম হাতে ডোডকী করা হবে তখন ডান হাতটি মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় ডান কোমড়ে থাকবে । পরে যখন ডান হাতে ডোডকী করা হবে তখন ডান হাতটি বাম হাতের সামনে দিয়ে ক্রস করে তবে সেটি কোমড়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় চলে যাবে। এভাবে বাম হাতেও যখন ডোডকী করা হবে তখন একই কায়দায় ডান হাতের সামনে দিয়ে বাম হাত ক্রস করে তবেই বাম কোমড়ে চলে যাবে। এভাবে ডোডকী বেশ কয়েকবার করা যেতে পারে।
ডোডকী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী আত্মরক্ষায় আরো পটু হয়ে ওঠতে পারে। কারাতে প্রশিক্ষণে শুধু আঘাত করার কৌশল জানলেই হবে না সেই সঙ্গে প্রতিটি মারেরই বøক জানা এবং আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশলও রপ্ত করে নিতে হবে । তা না হলে প্রতিপক্ষের আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে না । ডোডকী’র মাধ্যমে প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে শিক্ষার্থী তার মুখের ও বুকের আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল শিখতে পারবে। এছাড়াও হাতের
শক্তি বৃদ্ধিতে এই ইভেন্টটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
লেখক : সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ, কারাতে কোচ ও চেয়ারম্যান, মানিকগঞ্জ গ্রীণ ক্লাব
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।