Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালাকুল মাউত ও সাকারাতুল মাউত

মোঃ আবদুল গনী শিব্বীর | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

অতঃপর তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তারপর তার রূহকে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তাকে দু’জন মালাক এসে তাকে উঠিয়ে বসান এবং বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার রব কে?। তখন সে উত্তরে বলে, ‘‘হায়! হায়!! আমি তো কিছুই জানি না।’’ তারপর তারা তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার দীন কী?’’ সে বলে, হায়! হায়!! তাও তো আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করেন, ‘‘এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল?’’ সে বলে, ‘‘হায়! হায়!! এটাও তো জানি না।’’ তারপর আকাশ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও। আর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও। সে অনুযায়ী তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়।

তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তার কবরকে তার জন্য সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়, যাতে তার একদিকের হাড় অপরদিকের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর একজন অন্ধ ও বধির মালাক নিযুক্ত করে দেয়া হয়, যার সাথে লোহার এক হাতুড়ি থাকে। সে হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তাহলে সে পাহাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে মাটি হয়ে যাবে। সে অন্ধ মালাক এ হাতুড়ি দিয়ে সজোরে তাকে আঘাত করতে থাকে। (তার বিকট চীৎকারের শব্দ) পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত জিন্ ও মানুষ ছাড়া সকল মাখলূক্বই শুনতে পাবে। এর সাথে সাথে সে মাটিতে মিশে যাবে। অতঃপর পুনরায় তার মধ্যে রূহ্ ফেরত দেয়া হবে (এভাবে অনবরত চলতে থাকবে)। (সুনানে আবি দাঊদ: ৪৭৫৩, সুনানে আহমাদ: ১৮০৬৩)।

কোরআন ও হাদীসে ‘সাকারাতুল মাউত’ প্রসঙ্গঃ সকল প্রাণিকে মরতে হবে, এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘সকল প্রাণিই মরণশীল।’ (সুরা আল ইমরান: আয়াত: ১৮৫)। সকল প্রাণিরই মরণকাল একেবারেই সুনির্ধারিত। যখনই নির্ধারিত সময় চলে আসবে তখন আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রাণির প্রাণবায়ু তথা ‘রূহ কবজ’ করা হবে। আল্লাহপাক বলেন, ‘আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কাহারও মৃত্যু হইতে পারে না, যেহেতু উহার মেয়াদ অবধারিত।’ (সুরা আল ইমরান: আয়াত:১৪৫)। তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে। যখন তাহাদের সময় আসিবে তখন তাহারা মৃত্যুকাল বিলম্ব করিতে পারিবে না এবং ত্বরাও করিতে পারিবে না।’ (সুরা আ’রাফ: আয়াত: ৩৪)। মৃত্যুর হাত থেকে কেউই বাঁচতে পারবে না এমনকি পালাতেও পারবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘বলুন (হে নবী), তোমরা যে মৃত্যু হইতে পলায়ন কর সেই মৃত্যু তোমাদের সঙ্গে অবশ্যই সাক্ষাৎ করিবে। অতঃপর তোমরা প্রত্যানীত হইবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহ্র নিকট এবং তিনি তোমাদেরকে জানাইয়া দিবেন যাহা তোমরা করিতে।’ (সুরা জুমআ: আয়াত: ৮)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাইবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করিলেও।’ (সুরা নিসা: আয়াত: ৭৮)। উক্ত আয়াত সমুহ একথা প্রমাণ করে মৃত্যু হবেই হবে।

প্রাণিদেহ হতে ‘রূহ কবজ’ এর সময় যে যন্ত্রণা প্রাণিদেহে অনুভুত কিংবা পরিলক্ষিত হয় তা চিরন্তন। এ ‘মৃত্যুযন্ত্রণা’ তথা সাকারাতুল মাউত থেকে বাঁচা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। আল্লাহপাক বলেন, ‘মৃত্যুযন্ত্রণা সত্যই আসবে; ইহা হইতেই তোমরা অব্যাহতি চাহিয়া আসিয়াছ।’ (সুরা ক্বাফ: আয়াত: ১৯)। তবে মহান আল্লাহপাক যাঁকে এ কল্পণাতীত কঠিন যন্ত্রণা থেকে যাকে বাঁচাবেন কেবল সেই বাঁচতে পারবে। যে ব্যক্তি বা যারা স¦াভাবিকভাবে কিংবা ‘সাকারাত’ ভোগ করে মারা যাবে তাদের সকলেরই প্রত্যাবর্তনস্থল আল্লাহরই দিকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হইবে।’ (সুরা আনকাবুত: আয়াত: ৫৭)। ‘সাকারাত’ তথা মৃত্যু যন্ত্রনার একটি সাধারণ চিত্র পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে, আল্লাহপাক বলেন,‘যদি তুমি দেখিতে পাইতে যখন জালিমরা মৃত্যুযন্ত্রণায় রহিবে এবং ফিরিশ্তাগণ হাত বাড়াইয়া বলিবে, ‘তোমাদের প্রাণ বাহির কর! তোমরা আল্লাহ্ সম্বন্ধে অন্যায় বলিতে ও তাঁহার বিধান সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করিতে, সেজন্য আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হইবে।’ (সুরা আনয়াম: আয়াত: ৯৩)।

‘সাকারাতুল মাউত’ সম্পর্কে হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই মৃত্যু যন্ত্রণা কঠিন’। (সহীহ বুখারী: হাদিস: ৪৪৪৯)। সাকারাতুল মাউতের অনভূতি প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সামনে চামড়ার অথবা (বর্ণনাকারী উমরের সন্দেহ) কাঠের একপাত্রে কিছু পানি রাখা ছিল। তিনি তাঁর হাত ঐ পানির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন। এরপর নিজ চেহারা দু’ হাত দ্বারা মাসহ(মাসেহ) করতেন আর বলতেন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ঃ নিশ্চয়ই মৃত্যুর অনেক যন্ত্রণা। এরপর দু’হাত তুলে বলতে লাগলেনঃ হে আল্লাহ্! উচ্চ মর্যাদা সম্পন্নদের সঙ্গে করে দেন। এ অবস্থাতেই তার (জান) কবয করা হলো। আর তাঁর হাত দু’টো এলিয়ে পড়ল। (সহীহ বুখারী; ইসলামিক ফাউন্ডেশন: হাদিস: ৬০৬৬)। আল্লাহপাক অগণিত ইমানদার বান্দাহকে মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে হেফাযত করবেন। কিন্তু কাফের ও মুশরিকরা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাবে মৃত্যুযন্ত্রণা কত কঠিন ও ভয়াবহ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘তুমি যদি দেখিতে পাইতে ফেরেশতাগণ কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করিয়া তাহাদের প্রাণ হরণ করিতেছে এবং বলিতেছে, ‘তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ কর। (সুরা আনফাল: আয়াত: ৫০)।
পরিশেষে আল্লাহপাক আমাদেরকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করে ইমানের উপর অটল থেকে পরকালীন পথে পাড়ি দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখকঃ মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালাকুল মাউত ও সাকারাতুল মাউত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ