পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মসুলের ঐতিহাসিক আল-নূরী মসজিদটি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আইএসের মধ্যে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ আনা হচ্ছে। খবরে বলা হয়, ব্যাপক আকারে বোমা হামলার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে মসজিদ ভবন ও এর মিনার। ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর দাবি, এই ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংসে বোমা হামলা চালিয়েছে আইএস। অন্যদিকে আইএসের দাবি, হামলা হয়েছে মার্কিন যুদ্ধবিমান থেকে। খবরে আরো বলা হয়, তিন বছর আগে যেখানে দাঁড়িয়ে খিলাফতের ঘোষণা দিয়েছিলেন আবু বকর আল বাগদাদি, তার দল ইসলামিক স্টেট। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বাদশ শতকের ওই প্রাচীন মসজিদটি তার দেড়শ’ ফুট উঁচু হেলানো মিনারের জন্য বিখ্যাত ছিল। প্রসঙ্গত, আল কায়েদার দলছুট একটি অংশ নিয়ে ২০০২ সালের দিকে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক (আইএসআই) গড়ে তোলেন আবু বকর আল বাগদাদি। তার নেতৃত্বে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ক্ষমতাশালী সংগঠনে পরিণত হয় আইএসআই। ২০১৪ সালে আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা এবং ইরাকের মধ্যাঞ্চলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নেয় আইএস। ওই বছর ৪ জুলাই গ্র্যান্ড আল-নূরি মসজিদের মেহরাবে দাঁড়িয়ে খিলাফত কায়েমের ঘোষণা দেন বাগদাদি, যার খলিফা তিনি নিজে। এর মধ্য দিয়ে গঠিত হয় ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ত বা আইএসআইএল, যা সংক্ষেপে আইএস নামে পরিচিতি পায়। সিরিয়া ও ইরাকে এই জঙ্গি দলটির হাতে নিহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, মিশর, জর্ডান ও তুরস্কের বহু নাগরিককে জিম্মি করার পর তাদের শিরোñেদ করে ইন্টারনেটে ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে এই সন্ত্রাসীরা। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইরাকি নাগরিক বাগদাদির প্রকৃত নাম ইব্রাহিম আল-সামারাই। তাকে ধরিয়ে দিতে গতবছর আড়াই কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে কয়েকবার তার মৃত্যুর খবর পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে এলেও পরে আবার তিনি জীবিত অবস্থায় আত্মপ্রকাশ করেছেন। ইরাকি বাহিনীর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটির এলিট কাউন্টার টেররিজম সার্ভিসের সদস্যরা মসুলের পুরনো অংশে ওই গ্র্যান্ড মসজিদের ৫০ মিটারের মধ্যে পৌঁছে যাওয়ার পর গত বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ইরাকের সেনাসূত্র জানায়, গত বুধবার মসজিদটি থেকে তাদের অবস্থান যখন ৫০ মিটার দূরে ছিল, তখনই আইএস সদস্যরা মসজিদে বোমা হামলা চালায়। এ ঘটনাকে ঐতিহাসিক ধ্বংসযজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছেন মসুলে আইএস বিরোধী অভিযানে নিয়োজিত একজন ইরাকি কমান্ডার। স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবিতেও মসজিদ ধ্বংসের প্রমাণ মিলেছে। ইরাকে থাকা ঊর্ধ্বতন মার্কিন কমান্ডার মেজর জেনারেল জোসেফ মার্টিন এ হামলাকে মসুল ও ইরাকের জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি মারাত্মক অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন। আর ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির মতে, এ ধ্বংসযজ্ঞ আইএসের আনুষ্ঠানিক পতনের সূচনা। তবে এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে আইএস। সংগঠনের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সিতে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আইএস যোদ্ধাদের বোমায় নয়, মার্কিন বাহিনীর বিমান থেকে নিক্ষেপ করা বোমার আঘাতেই ধ্বংস হয়েছে আল-নূরী মসজিদ। প্রসঙ্গত, আইএসের বিরুদ্ধে ইরাক ও সিরিয়ার ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংসের অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ পালমিরা নগরের অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করে আইএস জঙ্গিরা। এবার এ তালিকায় যুক্ত হল ১১৭২ সালে নির্মিত ঐতিহাসিক আল-নূরী মসজিদ। রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।