Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় ম্যাটস ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

রহস্য উদঘাটনের দাবী ড. হোসনে আরার

| প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়া টিএমএসএস মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) ছাত্রী ইসমত আরা পারভীন মুনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি বা এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যাকান্ড তা উদঘাটন করতে পারেনি। সোমবার গভীর রাতে সদর থানা পুলিশ শহরতলির ঠেঙ্গামারা এলাকায় টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ভবনের লিফটের নিচ থেকে মুনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে।
নিহত মুনের বাবা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি )’র সদস্য গাজিউল ইসলাম ঘটনার জন্য তার মেয়ের যৌতুক লোভী জামাই মেডিকেল অ্যাসিটেন্ট এসএম সায়েম ওরফে রাহাতকে আসামী করে বগুড়া সদর থানায় একটি আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার এজাহার দাখিল করেছেন । বুধবার বিকেলে এই এজাহার দায়েরের বিষয়টি স্বীকার করে বগুড়া সদর থানার ওসি ( তদন্ত ) আসলাম আলী জানিয়েছেন, রাতেই এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে ।
চট্টগ্রামে কর্মরত বিজিবি সদস্য বগুড়ার সোনাতলার হলিদাবগা গ্রামের গাজিউল ইসলাম জানান, তার মেয়ে ইসমত আরা পারভীন মুন গত ২০১৪ সালে এসএসসি পাশ করার পর টিএমএসএস ম্যাটসে ভর্তি হয়। সম্প্রতি চুড়ান্ত পরীক্ষা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কাছে ঠেঙ্গামারা গ্রামের জনৈক মন্টুর মেসে থাকতো। সোনাতলার মধুপুর গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের ছেলে এস এম সায়েম রাহাত তার মেয়েকে গত বছরের ২৪ অক্টোবর জোরপূর্বক বিয়ে করেন। পরে যৌতুক না পেয়ে তার মেয়েকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে মুন আদালতে রাহাতের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেন। ওই মামলায় রাহাত গ্রেফতার হন। তিনি দাবি করেন, রাহাতই প্রতিশোধ নিতে তার মেয়ে মুনকে ভবন থেকে ফেলে হত্যা করেছে।
অন্যদিকে মুনের শ্বশুর ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, একাধিক ব্যক্তির সাথে মুনের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ঘটনার সময়ে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও মুনের দুটি মোবাইল ফোনের কললিষ্ট যাচাই করলে পুলিশ এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারনা পাবে। তিনি আরও বলেন, অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জে মুনের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর বন্ধুর সাথে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক  জানাজানি হলে তাকে তালাক দেয়া হয়। মুন ওই স্বামীর কাছে থেকে মোহরানার সাড়ে ৩ লাখ টাকা আদায় করে। এছাড়া যৌণ হয়রানি মামলার ভয় দেখিয়েও অপর এক ব্যক্তির কাছে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছিল। এসএসসি পাশ করার পর মুন টিএমএসএস ম্যাটসে ভর্তি হয়। তার ছেলে এসএম সায়েম রাহাতও ২০১১ সালে একই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলো। একই উপজেলার মানুষ হিসেবে মুনের সাথে রাহাতের পরিচয় হয়। মুন তাকে বড় ভাই হিসেবে সম্বোধন করতো। পরবর্তীতে মুন তার ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। গত বছরের ২৪ অক্টোবর মুন মোবাইল ফোনে রাহাতকে জানায়, তার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের মিষ্টি খেতে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে আকবরিয়া মিস্টি মেলায় যেতে অনুরোধ করে।  রাহাত ইতস্তত করলে ফোনে মুনের মা রওশন আরা পারভিনও একই কথা বলে রাহাতকে সেখানে যেতে বিশেষ অনুরোধ করে। তাদের ( মুন ও তার মা ) এর কথায় বিশ্বাস করে রাহাত সেখানে গেলে বেশ কয়েকজন অজ্ঞাত যুবক তাকে জিম্মি করে এবং কাজী অফিসে নিয়ে আড়াই লাখ টাকা মোহরানায় মুনকে বিয়ে করতে কাবিননামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। তিনি বিষয়টি জানতে পেরে টিএমএসএস ম্যাটসের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত নালিশ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মুনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এরপর তিনি ৩ নভেম্বর বগুড়া সদর জুডিশিয়াল আদালতে মুন ও তার মায়ের বিরুদ্ধে একটি এবং ওই কাবিননামা বাতিলের দাবিতে চলতিবছরের ৫ জানুয়ারি বগুড়া জেলা জজ আদালতে অপর একটি মামলা দায়ের করেন। দুটি মামলাই তদন্তাধীন রয়েছে।
অন্যদিকে ৯ ডিসেম্বর নিহত ইসমত আরা মুন  রাহাতের বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি, নির্যাতন ও ধার হিসেবে নেয়া  ৩ লাখ টাকা আদায়ের মামলা করেন। ওই মামলায় গত ১৭ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে রাহাতকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। ১৬ মে হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। জামিনের ১দিন পর রাহাতকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। রফিকুল ইসলামের দাবি একাধিক ব্যক্তির অনৈতিক সম্পর্ক ছিল মুনের সাথে। ওইসব ব্যক্তির সাথেই মুন আদালতে আসতো। তার বিশ্বাস তারাই নিজেদের অপরাধ গোপন করতে মুনকে ভবন থেকে ফেলে হত্যা করেছে।
এদিকে টিএমএসএসএর নির্বাহী পরিচালক রোটারিয়ান ড. হোসনে আরা জানান , ঘটনার সময় তিনি ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবস্থান করছিলেন , মুনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ শুনে কাজ অসমাপ্ত রেখেই বগুড়ায় এসেছেন । সংশ্লিস্ট সবার সংগে কথা বলেছেন , ঘটনার সময়ের সিসি ক্যামেরায় ধারণ কৃত ছবি দেখেছেন । সেই সাথে বৃহষ্পতিবার একটি বিশেষ সভাও আয়োজন করেছেন যেখানে পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে । সেই সাথে তিনি তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের পুরো সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছেন । প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই তিনিও মুনের মৃত্যু রহস্য সঠিকভাবে উদঘাটন এবং এই ঘটনায় কারো সংশ্লিষ্টতা থাকলে তা’ শনাক্ত করার জন্য পুলিশের প্রতি আহŸান জানান ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ