বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লাখ লাখ নগরবাসীর ‘অক্সিজেন কারখানা’ : পারিবারিক বিনোদনের ঠিকানা
আইয়ুব আলী : বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ছাদ বাগান। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির মালিক এমনকি ভাড়াটিয়ারাও শখের বশে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। সেখানে লাগানো হচ্ছে ফুল, বিভিন্ন ফলমূল ও ঔষধি ছোট-মাঝারি গাছ নিয়ে বাগান। সতেজ-সবুজ এ বাগানগুলো এখন পরিবেশবান্ধব হিসেবে এই নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি পারিবারিক বিনোদনের ঠিকানা। ভয়াবহ দূষণে বাতাসে যেখানে বদ্ধ বিকার, ছাদ বাগানগুলো হয়ে উঠতে পারে বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহে লাখ লাখ নগরবাসীর জন্য ‘অক্সিজেন কারখানা’। ক্রমবর্ধমান নগরায়ন ও বৃক্ষনিধনে চট্টগ্রাম নগরী ভারসাম্যহীন ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পরিণত হচ্ছে তপ্ত নগরদ্বীপে। এমনকি একখÐ মাটি খুঁজে নিয়ে গাছ লাগানোর মতো জায়গারই অভাব। অপরিকল্পিত আবাসনে নগরীর অধিকাংশ জায়গায়ই ভরে গেছে।
বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গা, বাড়ির ছাদ, ব্যালকনি কিংবা ঘরের ভেতরে গাছ লাগিয়ে যেমন অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ সম্ভব, তেমনি ঘরের দূষিত বাতাসকে বিশুদ্ধ করা যায়। নদী-খাল দখল, গাছ কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে নগরীতে বনায়ন করার জায়গা নেই। ভবনের উপর ছাদ বাগানে টমেটো, কাঁচামরিচ ও শাকসবজি করা যায়। এগুলো অর্গানিক নির্ভেজাল। সমস্ত ছাদ সবুজ দেখা যাবে। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ায় বসবাসের মাধ্যমে উপকারভোগী হবেন ছাদ বাগান আছে এমন সব বাড়িঘরের বাসিন্দারা।
নগরীতে জনসংখ্যার চাপ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। গ্রাম থেকে আসা শহরমুখো মানুষের ঢল এবং তাদের জন্য বাসস্থান ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে শহরগুলোর পরিধিও দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কঠিন বাস্তবার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নগরী দিন দিন কনক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ পার্ক, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পুকুর, দীঘি, কুয়া, ঝরণা, লেক, নদী, খাল ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের ধারণা, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই শহরে আশ্রয় নেবে।
এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিদ্যমান রোড-আইল্যান্ড, মিড-আইল্যান্ড ও ফুটপাত ইত্যাদির পাশাপাশি সমন্বিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘গ্রীনসিটি ও ক্লিনসিটি’ ধারণার আলোকে ৪১টি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড অফিস, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল এবং বাড়িঘরে ‘ছাদ বাগান’ গড়ে তুলতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ নিয়েছে।
জীববৈচিত্র্য দিক থেকে চট্টগ্রাম নগরী বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। চট্টগ্রাম নগরী সমুদ্র ও পাহাড় বেষ্টিত। তবুও প্রতিনিয়ত জনসাধারণের চাপে বিভিন্নভাবে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। এর মধ্যে ছাদ বাগান একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নগরবাসীকে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারলে চট্টগ্রাম হয়ে উঠবে সবুজের অনন্য নিসর্গ।
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রাথমিকভাবে ১শ’টি স্কুল-কলেজ ভবনে এবং ৫০টি আবাসিক ভবনে ‘ছাদ বাগান’ সৃজনের উদ্যোগ নিয়েছে চসিক। ছাদ বাগানের জন্য বিনামূল্যে বীজ, গাছ, সার, মাটি বিতরণ করা হবে। ছাদ বাগান করার জন্য বাড়ির মালিকদের উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণ এবং শ্রেষ্ঠ বাগান মালিকদের উৎসাহিত করে পুরস্কার প্রদান করা হবে। আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল এন্ড কলেজ (বাওয়া) ভবনে ‘ছাদ বাগান’ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। তিলোত্তমা চট্টগ্রাম বাস্তবায়নে চসিক শুরু করেছে এ ‘ছাদ বাগান’ কর্মসূচি। এর সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নগরীর প্রতিটি স্কুলে প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সফিউল আলম গতকাল ইনকিলাবকে বলেছেন, মহানগরী এলাকায় খালি জায়গার অভাবে গাছপালা কমে যাচ্ছে। পরিবেশগতভাবে ২৫ শতাংশ সবুজ দরকার। সবুজ আছে ১০ শতাংশেরও কম। বিকল্প পরিবেশের জন্য ছাদের খালি জায়গায় সবুজ এরিয়া দরকার। এতে ছাদ বাগান করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। ভবনে বসবাসরত লোকদের পারিবারিকভাবে চিত্ত বিনোদনের সুবিধা হবে। এ বিশেষজ্ঞ সিটি কর্পোরেশনের ‘ছাদ বাগান’ সৃজনের উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার তিলোত্তমা চট্টগ্রাম বাস্তবায়নে গ্রিনসিটি ক্যাম্পেইন ‘ছাদ বাগান’ কর্মসূচি উপলক্ষে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নগরীর সব উপযোগী ভবনে পর্যায়ক্রমে ছাদ বাগান সৃজন করা হবে। আগ্রহীদের জন্য সবধরনের সহযোগিতায় চসিকে যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, নগরীর সব দেয়ালে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর খুব কম শহর আছে যেখানে চট্টগ্রামের মতো সমুদ্র, পাহাড়, নদী, সমতল রয়েছে। এখন দখল, দূষণে নান্দনিক চট্টগ্রাম কনক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম, তিলোত্তমা চট্টগ্রামের উপদেষ্টা আমিনুল হক বাবু। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক আলী মর্তুজা। উপস্থিত ছিলেন চসিকের সচিব মোঃ আবুল হোসেন, মেয়রের একান্ত সচিব মঞ্জুরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহিম, প্রকল্প ব্যবস্থাপক আসিফুল ইসলাম চৌধুরী, মাঠ সংগঠক মোঃ গিয়াস উদ্দিন, মোঃ রাফি উদ্দিন প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।