Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনদুর্ভোগের মূলে সমন্বয়হীনতা চট্টগ্রামে নাগরিক সংলাপে বক্তারা

| প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


চট্টগ্রাম ব্যুরো : অপরিকল্পিত নগরায়নের পাশপাশি সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা চট্টগ্রামে জনদূর্ভোগের মূল কারণ উল্লেখ করে বক্তারা বলেছেন, এ থেকে মুক্তি পেতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। গতকাল শনিবার নগরীর জামালখানস্থ চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি কনফারেন্স হলে ‘নাগরিক সংলাপ: চট্টগ্রাম মহানগরে পানিবদ্ধতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার এম আলী আশরাফ। উদ্বোধক ছিলেন চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. মাহফুজুল হক চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর শফিক হায়দার চৌধুরী। চিটাগাং সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সদস্য সচিব ড. শামসুল হোসাইনের সঞ্চালনায় নাগরিক সংলাপে বক্তব্য রাখেন স্থপতি জেরিনা হোসেন, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, প্রকৌশলী দেলাওয়ার হোসেন, ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আবছার, অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন খালেদ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে ইঞ্জিনিয়ার এম আলী আশরাফ বলেন, চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতার ইতিহাস রয়েছে। নতুন রাস্তা হলে ড্রেন লাগবে। শহর বাড়লে পাশে খাল বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমরা প্লান তৈরিতে আগ্রহী কিন্তু বাস্তবায়নে আগ্রহী নই। নগরীর নালা-নর্দমাগুলো লাওয়ারিশ। ডাস্টবিনে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে নালা-নর্দমায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। খাল খননের এক বছরের মধ্যে পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনায় খাল ভরে যায়। কালুরঘাট সেতু থেকে নেভাল এভিনিউ পর্যন্ত ৩৪টি খাল ছিল। বর্তমানে ২২টি খাল আছে। ১২টি খাল মরে গেছে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে নতুন করে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার নিয়োজিত একটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জরিপে ৩৪টি খালের মধ্যে ২২টি খালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব খালের ভেতরে ১৩৯টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানের সাথে সমন্বয় করে চট্টগ্রাম ওয়াসা নতুন মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। এ মাস্টার প্ল্যানে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৪১টি পাম্প মেশিন বসানোর কথা বলা হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকা থেকে পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে অন্যত্র ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে মাস্টার প্ল্যানে খাল খননের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। প্রকৌশলী আশরাফ বলেন, চট্টগ্রামে ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রতিবছর পানিবদ্ধতার কারণে একশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। নগরীর চাক্তাই খালের সাথে সংযুক্ত ১০-১২টি উপখাল, ছরা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, পানিবদ্ধতার জন্য নগরীর খাল দখল এবং নালা-নর্দমার উপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ অনেকাংশে দায়ী। আরএস খতিয়ান মূলে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করা সম্ভব।
উদ্বোধনী বক্তব্যে চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা ড্রেনের ব্যবহার জানি না। ময়লা-আবর্জনা ফেলে ড্রেনগুলো ভরাট করে ফেলা হয়। এতে হঠাৎ বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে তিনি নাগরিক সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, আগে মহানগরীতে পানিবদ্ধতা ছিল না। বর্তমানে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এখন দোকান উঁচু হচ্ছে, রাস্তা নিচু হচ্ছে। ফলে অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় বৃষ্টি হলে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
প্রকৌশলী দেলাওয়ার হোসেন বলেন, পৃথিবীর অনেক বড় বড় শহরে ২-৩ বার পানি জমে। জনগণকে দোষী করি নালা-নর্দমা ব্যবহার করতে জানে না। জনগণকে পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগ নেয়া দরকার। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। তা থেকে বালি নেমে নালা-খাল ভরে যাচ্ছে। ১৯৯৫ সালের মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করলে পানিবদ্ধতা অনেকাংশে নিরসন হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে না উঠায় পানিবদ্ধতার কারণ। কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং করার সময় দেখা যায় সব পলিথিন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন সেবকনির্ভর। একে প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।
স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, সিটি মেয়রের একার পক্ষে চট্টগ্রামের ড্রেনেজ সমস্যা নিরসন করা সম্ভব নয়। এ সমস্যা নিরসনে মেজর ক্যাপিটাল ওয়ার্ক লাগবে। মেজর ক্যাপিটাল ওয়ার্ক শুধু মেয়র করেন না। যেকোন মেজর ডেভলপমেন্ট অথরিটি মেজর ক্যাপিটাল ওয়ার্ক করেন। তিনি বলেন, প্রাইমারি লেভেলের একটা নগর এবং নগরায়ন করতে হলে প্রাইমারি লেভেলের যে ক্যাপিটাল ওয়ার্ক থাকে, সেগুলো বিশাল। সিডিএ এসব করার সময় কোন নিয়ম মেনে করে না। এসব মেজর ক্যাপিটাল ওয়ার্কগুলো করা তো তাদের দায়িত্ব। তাকে তো ফ্লাইওভার করতে বলেনি। তিনি বলেন, সুন্দর নগরায়নের জন্য সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম ওয়াসাকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আবছার বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে চট্টগ্রাম ওয়াসা নতুন মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। তবে ড্রেনেজ সিটি কর্পোরেশন করবে, আমরা স্যুয়ারেজ করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ