Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিওএ’কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন আলিদা!

| প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রবাসী অ্যাথলেট আলিদা শিকদার এবার বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে (বিওএ) বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন। চতুর্থ ইসলামীক সলিডারিটি গেমসে লাল-সবুজের পক্ষে খেলার জন্য আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে আসলেও ট্র্যাকে নামেননি আলিদা। না খেলেই ফিরে যান আমেরিকা। অথচ তার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে বিওএ’কে। আমেরিকা থেকে বাকুতে এসে বিওএ’র অর্থে থেকেছেন, খেয়েছেন। কিন্তু খেলেননি। বলা যায়, ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে এক রকম ছিনিমিনিই খেলেছেন আলিদা। ঢাকার আরামবাগ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মোমিন শিকদারের মেয়ে আলিদা শিকদার বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত অ্যাথলেট হলেও তিনি যে বাংলাদেশী হতে পারেননি তার প্রমাণ পাওয়া গেল। বাকুতে না খেলে সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন, বাংলাদেশটা তার বাবা মোমিন শিকদারের মাতৃভূমি, তার নয়। আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী এই অ্যাথলেট লাল-সবুজ পতাকার সম্মান কিভাবে দেবেন?
বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাওয়ার কারণে গত বছর গৌহাটি-শিলং সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে প্রথমবার আলিদাকে আনার চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম চেঙ্গিস। তখন আমেরকিায় আলিদার প্রশিক্ষণ বাবদ লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছিল বাংলাদেশের। ঢাকায় আসার পর বাবা মোমিন শিকদার ও মেয়ে আলিদা শিকদারকে তিন হাজার ডলারের উপহারও দিয়েছিলেন বিওএ’র  সহ-সভাপতি শেখ বশির আহমেদ মামুন। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত ক্রীড়া আসর এসএ গেমসে পদকের আশায় তাকে খেলাতে চেয়েছিল বিওএ। যে কারণে ইব্রাহিম চেঙ্গিস নিয়মিত তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি আলিদা বা তার বাবা। বাংলাদেশের সব আশা নিরাশায় বদলে দিয়ে গৌহাটিতে যাননি এই অ্যাথলেট।
অতীত ভুলে গিয়েআবারও আলিদার দিকে নজর দেয় বিওএ। এবারের লক্ষ্য তাকে চতুর্থ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে খেলানো। গেমস শুরু হওয়ার আগে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিওএ। বাকুতে যেতে রাজী হন আলিদা। শেষ পর্যন্ত বাকুতে যানও তিনি। প্রায় দু’সপ্তাহ থাকেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি নানা জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন। আনন্দ করেছেন, এমনকি ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ও লংজাম্পে নাম নিবন্ধনও করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্র্যাকে নামেননি। গেমসের দু’টি ইভেন্টে বাংলাদেশের অ্যাথলেট হিসেবে নাম অন্তর্ভূক্ত করেও খেলেননি এই অ্যাথলেট। এতে গেমসে অংশ নেয়া বিশ্বের ৫৬ টি দেশের ক্রীড়াবিদ ও কর্মকর্তাদের সামনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যে ক্ষুণœ হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের দ্রæততম মানবী শিরিন আক্তারকে অবহেলা করে আলিদা শিকদারকে বাকুতে পাঠিয়ে দেশের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন ক্রীড়ামোদী মহল।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিস বলেন, ‘এসএ গেমসেই বুঝা গেছে আলিদা শিকদারের মতিগতি। সে সময় আমরা শত চেষ্টা করে এবং কয়েক লাখ টাকা খরচ করেও দেশের জন্য তাকে খেলাতে পারিনি। এমন অ্যাথলেটকেই কেন যে বিওএ আবার পছন্দ করলো তা আমার বোধগম্য নয়। যে একবার দেশের সঙ্গে প্রহসন করেছে, সে বার বার করবে এটাই স্বাভাবিক।’
গেমসের আগে আলিদাকে উৎসাহ যোগাতে আমেরিকায় গিয়েছিলেন ফেডারেশনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদ্রু রকিব মন্টু। সেখানে গিয়ে তিনি আলিদার মাধ্যমে দেশকে সোনার পদক উপহার দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু সবই ফাঁকা বুলি। মন্টু বলেন, ‘আমি  ফেডারেশনের নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এর আগেই বিওএ তাকে (আলিদা) পছন্দ করেছে। এতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। আসলে সে অসুস্থতার কথা বলেছিল। আর তাতেই ট্র্যাকে নামতে পারেনি।’ তবে বাকুতে না খেলে আলিদা যে দেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তা স্পষ্ট  গেমসে বাংলাদেশ দলের শেফ দ্যা মিশন একেএম নুরুল ফজল বুলবুলের কথায়। তিনি বলেন, ‘পেটের পীড়ায় খেলতে চায়নি আলিদা। আমরা তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর দেখা গেছে, আসলে তার কোন শারীরিক সমস্যাই ছিল না। সে ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে। কেন করেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
এভাবে দেশের ক্রীড়াবিদদের বঞ্চিত করে প্রবাসী অ্যাথলেটদের এনে না খেলাতে পারায় ক্ষুণœ হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি। যে কারণে এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিওএ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিওএ

২৭ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ