রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : সীতাকুন্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের কলাবাড়িয়ার গ্রামের কৃষক মাসুদ এক ঝুড়ি পটল বিক্রির জন্য মোহন্তের হাটে নিয়ে আসেন। তার আশা ছিলো প্রতি কেজি পটল পাইকারীতে অন্তত ৩০ টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু বাজারে এক পাইকার প্রতি কেজি পটলের দাম দিলেন ২৩ টাকা। আশাহত মাসুদ অন্য ক্রেতাদের অপেক্ষায় বসে রইলেন। কিন্তু না, যে কয়েকজন পাইকার ছিলো সবাই তাকে ২৩ টাকাতেই বিক্রির জন্য চাপাচাপি শুরু করলেন। বাধ্য হয়ে এই দামেই ৬০ কেজি পটল বিক্রি করলেন তিনি। একই অবস্থা ঝিঙ্গারও। পাইকাররা প্রতি কেজি ঝিঙ্গা বিক্রি করতে হয়েছে ২৫ টাকায়। পাইকারদের সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে এভাবেই ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হলেন মাসুদ। গতকাল শুক্রবার সীতাকুÐের মোহান্তেরহাটে সবজি বিক্রিকালে কথা হয় এ কৃষকের সাথে। তিনি আরো বলেন, টমেটো, কাঁকরোল, বরবটি, তিতকরলা থেকে শুরু করে সব ধরণের সবজি বিক্রি করতে গিয়ে সিন্ডিকেডের কবলে পড়ে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগী পাইকাররা প্রতি কেজিতে লাভ করছেন ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর মধ্যসত্বভাগীদের কাছ থেকে কিনে আরো ১০/২০ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। যার অর্থ সবজির উৎপাদনকারী কৃষকরা প্রতি কেজি সবজি বিক্রি করছেন প্রায় অর্ধেক মূল্যে। এছাড়াও নানা ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সবজি উৎপাদনকারী কৃষকরা। মুরাদপুর ইউনিয়নের গোলাবাড়িয়া এলাকার এক কৃষক মোঃ হাছান আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনারা বাজারে সুন্দর সুন্দর সবজি দেখছেন। কিন্তু এসব সবজি উৎপাদন করতে গিয়ে আমাদের যে কত কষ্ট তা তো কল্পনাও করতে পারবেন না। তিনি বলেন, প্রত্যেক মৌসুমে আমরা সবজি উৎপাদন করি। যখন যে মৌসুম সে সবজিটি চাষের আগে ক্ষেত চাষাবাদের উপযুক্ত করতে হয়। তারপর বীজ বপন বা চারা রোপন, নিয়মিত পরিচর্যা, সার-কীটনাশক দেওয়া প্রভৃতি প্রক্রিয়া কয়েক মাস চলার পর একসময় গাছে ফুল ও ফলন আসে। এর মাঝের সময়টুকুতে আমরা রোধ ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করি। মাঝে মধ্যে রোগের উপদ্রবসহ নানান সমস্যা দেখা দেয়। তাও মোকাবিলা করতে হয়। এত কিছুর পর যখন ক্ষেতের সবজি বিক্রির উপযুক্ত হয় তখন আমরা শুধু ন্যায্য মূল্য পাবার আশায় থাকি। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে আমরা বেশিরভাগ সময়ই ন্যয্যমূল্য বঞ্চিতই রয়ে যাই। এই কৃষকরা জানান, সীতাকুÐে সবজির অন্যতম হাট হলো বড়দারোগারহাট, সীতাকুÐ পৌরসদর মোহান্তেরহাট, শুকলালহাট, কুমিরা হাট প্রভৃতি। প্রত্যেক হাটেই পাইকারদের সিন্ডিকেট আছে। কোথাও কোথাও সিন্ডিকেটের হোতা হলেন আড়ৎদাররা। কৃষকরা আরো বলেন, বাজারে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে এসব সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়তে হয় কৃষকদের। শুধু কম মূল্যে বিক্রি করা নয়, সবজি বিক্রির সময় তারা কৃষকের ঝুড়ি, টুকরিও নিয়ে চলে যায়। এতে তারা চতুর্দিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। এ পরিস্থিতিতে কোন কৃষক যদি পাইকারদের কাছে বিক্রি না করে খুচরা বিক্রি করতে চান তাতেও সফল হওয়া কঠিন। কারণ, সিন্ডিকেটের সদস্যরা নির্দিষ্ট কৃষক বা ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কৃষকদের বহিরাগত বলে সবজি বিক্রির সুযোগ দেন না। এভাবে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করে প্রায় ৯ হাজার কৃষক উপযুক্ত লাভ পাচ্ছেন না। এদিকে সবজির বাজার সিন্ডিকেটের কবলে বলে কৃষকরা অভিযোগ করলেও সীতাকুÐ বাজারে সবজি কিনতে আসা পাইকাররা তা স্বীকার করতে রাজি নন। চট্টগ্রামের পাহাড় তলী বাজার থেকে আসা সবজি ব্যবসায়ী মোঃ হোসেন বলেন, কৃষকদের অভিযোগ সঠিক নয়। রিয়াজ উদ্দিন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাগর বলেন, আমরা সিন্ডিকেট করে তাদেরকে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত করছি না। তবে কম মূল্যে সবজি কিনে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে কে চাইবে না। আমরাও চাই কৃষকদের কাছ থেকে দরদাম করে যতটুকু কম মূল্যে কিনে বেশি মূল্যে বিক্রি করা যায়। লাভই যদি না করি তাহলে চট্টগ্রাম থেকে এখানে এসে ব্যবসা করছি কেন? তিনি বলেন, এটা তো শুধু সীতাকুÐে না সারাদেশের পাইকাররা এভাবেই সবজি ক্রয় বিক্রয় করেন। কৃষক যেমন কৃষকদের লাভ চান আমরাও চাই আমাদের যেভাবে লাভ হয় সেভাবে ব্যবসা করতে। তবে একজন পাইকার যে দাম দেয় অন্য পাইকাররাও সেই দামেই কেনে বা কৃষককে বিক্রি করতে বাধ্য করে বলে যা বলা হচ্ছে তা ঠিক না। তিনি বলেন, এক কেজি টমেটো এক পাইকার ১৮/২০ টাকায় কিনছেন আবার অন্য কেউ তা ২২/২৩ টাকায়ও কিনছেন। সর্বশেষ যত টাকায় কিনলে অল্প হলেও লাভ করা যাবে তত টাকায় সবজি কিনি আমরা। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা বলেন, চলতি গ্রীষ্মের মৌসুমে ১২৬০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন নানান সবজি চাষ করেছেন ৮৮২০জন কৃষক। তারা জমিতে উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রি করছে। বাজারে সিন্ডিকেড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষকরা নিজের অধিকার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তারপর ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবজি বিক্রি করলে কেউ তাদের বঞ্চিত করতে পারবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।