পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ‘চার ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন। দিনে তিন কেজির বেশি চাল লাগে। চালের যা দাম আয়ের প্রায় পুরোটাই ভাত খেতেই চলে যাচ্ছে। চালের মান ভাল না হলেও দাম কিছুটা কম বলে ট্রাক থেকে চাল কিনছি।’ নগরীর কাটগড় মোড়ে ন্যায্যমূল্যের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়ানো ভ্যানচালক মোঃ ইদ্রিস (৫০) এভাবেই তার কষ্টের কথা বলছিলেন। তার মতো আরও অনেকে ওই ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল কিনছেন। চাল নিতে নিতে অনেকটা ক্ষোভের সাথেই মনোয়ারা বেগম নামে এক ক্রেতা বললেন, গরীবের মোটা চালের দামও যদি এতো বাড়ে তাহলে আমরা বাঁচব কিভাবে? আর চালের দাম তো কমার কোন লক্ষন নেই। পলিথিন থেকে মুঠভর্তি চাল নাকের কাছে ধরে বললেন, দেখনে কেমন গন্ধ, বাঁচার জন্যই এসব খাচ্ছি।
কাটগড়ের ওই ট্রাকের মতো চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্যান্য পয়েন্টেও ন্যায্যমূল্যে চাল কিনতে মানুষের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। চালের দাম উর্ধমুখি হয়েছে অনেক আগে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় কষ্ট বেড়েছে গরীব ও নিন্ম আয়ের মানুষের। চালের দামের লাগাম টেনে ধরতে সরকারি তরফে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা হয়েছে। আমদানি শুল্কও কমানো হয়েছে। চট্টগ্রামের ৮২ হাজার কার্ডধারীকে ১০টাকা কেজিতে চাল দেওয়া হচ্ছে পহেলা মার্চ থেকে। চট্টগ্রামসহ এই বিভাগের ১১ জেলায় এই সুবিধা পাচ্ছেন ছয় লাখ ১২ হাজার ৭৮১জন। নগরীর ৩০টি স্পটে পহেলা মার্চ থেকে ৩০টাকা দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। খাদ্য বিভাগ প্রতিদিন নগরীতে ১৫ মেট্রিকটন চাল বিক্রি করছে। পৌরসভাগুলোত প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি হচ্ছে ন্যায্যমূল্যে। খাদ্য বিভাগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও নগরীর বিভিন্ন স্পটে চালসহ বেশকিছু ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে খোলা ট্রাকে। এতকিছুর পরও চালের দাম কমার কোন লক্ষন নেই।
বলা হয়েছিলো আমন ধান উঠতেই বাজারে চালের দাম কমে যাবে। কৃষি বিভাগ বলছে আমনের ভাল ফলন হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। কিন্তু বাজারে চালের দাম কমেনি। সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র হিসাবে গতকাল শুক্রবার বাজারে মোটা চালের দাম ছিল ৪৩ থেকে ৪৬ টাকা। মাঝারি মানের চালের দাম ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা এবং সরু চালের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৭০টাকা। টিসিবির হিসাবে এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। একই সময়ে মাঝারি মানের চালের দাম ২০ শতাংশ এবং সরু চালের দাম সাড়ে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
দরিদ্র মানুষের কষ্ট লাঘব আর বাজারে চালের দামের লাগাম টানতে দেশের অন্য এলাকার মতো চট্টগ্রামেও ৩০টাকা কেজিতে মোটা চাল বিক্রি শুরু হয়। পহেলা মার্চ থেকে নগরীর ৩০জন ডিলারের মাধ্যমে এ চাল বিক্রি করা হচ্ছে। খাদ্য বিভাগ থেকে ১৫জন ডিলারের মাধ্যমে দিনে ১৫ মেট্রিক টন চাল বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হলেও বেশি মানুষকে এই সুবিধা দিতে ৩০জন ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি চলছে। একদিন পর পর এক মেট্রিক টন করে চাল পাচ্ছেন এসব ডিলাররা। তাদের দোকান থেকে লোকজন এসব চাল কিনতে পারছেন। একজন ক্রেতাকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে।
নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ডিলারদের মাধ্যমে আতপ চাল বিক্রি করছে খাদ্য বিভাগ। মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত এই চালের (স্থানীয় ভাষায় বেতিচাল) মান তেমন ভাল না। তার পরও অনেকে বাধ্য হয়ে এসব চাল কিনছেন। ডিলার ও ক্রেতারা জানান, বাজারে ঠিক এই মানের চালের দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা কম হওয়ায় অনেকে এ চাল কিনছেন। বেসরকারি উদ্যোগে ট্রাকে সেদ্ধচাল বিক্রি হচ্ছে একই দামে। তবে এসব চালের মানও এত ভাল না বলে জানান ক্রেতারা। এদিকে খাদ্য বিভাগ ট্রাকের বদলে ডিলারদের দোকানে চাল বিক্রি করায় অনেকে এই সুবিধা পাচ্ছে না। বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষ এ চাল বিক্রি খবরও জানে না। ডিলারদের দোকানও চিনে না অনেকে। নগরীতে এখন জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। এর বিরাট একটি অংশ দরিদ্র। খাদ্য বিভাগের এই আয়োজন প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য বলে মনে করেন অনেকে।
সরেজমিন দেখা যায় খাদ্য বিভাগের দেওয়া আতপ চাল অনেকে কিনছেন না। বিশেষ করে বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুুমিল্লার লোকজন পড়েছেন বিপাকে। কারণ তারা আতপ চালের ভাত খেতে পারেন না। তাদের অনেকে সেদ্ধচাল দেওয়ার দাবি করেন ডিলারদের কাছে। ডিলাররা জানান, নগরীর হালিশহর, লালখান বাজার, পাহাড়তলী এলাকায় আপত চালের চাহিদা কম। কারণ এইসব এলাকায় বৃহত্তর নোয়াখালী, বরিশাল, কুমিল্লার লোকজনের বসবাস। তবে নগরীর বাকলিয়া, সদরঘাট, পাথরঘাটা এলাকায় আতপ চালের চাহিদা আছে। এসব এলাকায় একদিনেই চাল শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আপত চালের পাশাপাশি কোন কোন এলাকায় সেদ্ধ চাল দেওয়ায় বিষয়টি আমরাও বিবেচনা করছি। এই সপ্তাহ থেকে কিছু এলাকায় সেদ্ধচাল দেওয়া হবে। তবে চালের চাহিদা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিলারদের কাছে কোন চাল অবিক্রিত থাকছে না। তিনি জানান, দরিদ্র মানুষের কষ্ট লাঘবে খাদ্য বিভাগ ডিলারদের মাধ্যমে ৩০টাকা কেজিতে চাল বিক্রি যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে অনেকে উপকৃত হচ্ছেন। এ কার্যক্রম আগামী দিনেও চলবে। একই সাথে জেলার ১৪টি উপজেলায় ৮২ হাজার কার্ডধারীকে ১০টাকায় চাল দেওয়া হচ্ছে। প্রতিজন কার্ডধারী মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। মার্চ এবং এপ্রিল মাসে এ চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর মতো চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা সদর ও পৌরসভা এলাকাতেও প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে ডিলারের মাধ্যমে ৩০টাকা কেজিতে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে পহেলা মার্চ থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।