পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : ‘অজানা’ কারণে আটকে গেছে বাংলাদেশে সাত বিলিয়ন ডলারের (৫৭ হাজার কোটি টাকা) সউদী বিনিয়োগ। শিগগির এ বিনিয়োগ আসবে কিনা তা এক প্রকার অনিশ্চিত। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানী, সার, অবকাঠামো ও নির্মাণ খাতে বিনিয়োগের কথা ছিল দেশটির। এ লক্ষ্যে গতবছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাপক তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেলেও এবছরের জানুয়ারি থেকে তা স্থিমিত হয়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারিতে সউদী অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংক একটি গ্রুপের হাতে ‘দখল’ হয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন সউদী উদ্যোক্তারা।
গতবছরের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজকীয় আমন্ত্রণে সউদী সফরে গেলে সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আসে। এ বিষয়ে ব্যাপক পদক্ষেপও লক্ষ্য করা যায়। বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সউদী আরবের বিশাল ব্যবসায়ী বহরের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। হঠাৎ এই সফর পিছিয়ে নির্ধারণ করা হয় মে মাসে। তবে মে মাসে এসে এই সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সউদী আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি আল রাজি থেকে শুরু করে শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ আল জামিল, আল বাওয়ানি, আল ফানার সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা ঘন ঘন বাংলাদেশ সফর শুরু করেছিল বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে। স্বাক্ষর করেছিল অনেকগুলো সমঝোতা স্মারক। তবে এখন আর বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না দেশটির উদ্যোক্তারা। এগিয়ে আসছে না দেশটির সরকারও।
সউদী আরবের বিনিয়োগ আগ্রহে উৎফুল্লচিত্তে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ সরকারও। সউদী উদ্যোক্তাদের জন্য দুইটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের প্রস্তাবও দিয়েছিল বাংলাদেশ। এর একটি চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে; অন্যটি গাজীপুরে। তবে এই প্রস্তাবেরও কোন উত্তর এখন পর্যন্ত আসেনি।
বাংলাদেশে সউদী বিনিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে শীর্ষ বণিক সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ইনকিলাবকে বলেন, “তারা আসবেন আসবেন করে আর আসলেন না। ফেব্রুয়ারিতে আসার কথা ছিল। আসেন নি। পরে মে তে আসার কথা ছিল। এখনও কোন খবর নেই।”
“এই মাসে প্রধানমন্ত্রী সউদী যাচ্ছেন। সেখানে তিনি হয়তো সউদী উদ্যোক্তা ও সরকারকে বলবেন, তোমরা আসছো না কেন।”
সউদী বিনিয়োগ না আসার পেছনে নিজেদের ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেন এই শীর্ষ ব্যবসায়ী। বলেন, “তারা আমাদের কাছে ১০ টা সেক্টর চেয়েছিল যেখানে তারা বিনিয়োগ করবে। ফিজিবিলিটি স্টাডি সহ আমরা তাদের ১০টা সেক্টর দিতে পারলে তারা হয়তো ওইসব সেক্টরের ১০ জন বিলিয়নিয়ার পাঠাতো। এখন পর্যন্ত আমরা সেরকম কিছু দিতে পারিনি।”
ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে না পারার পেছনে দেশের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেন, “এই কাজ করার মতো কোন অর্গানাইজেশন আমাদের নেই। সব শীর্ষ ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। তারা কেউ এই কাজে এগিয়ে আসেননি।”
“একেকটা ফিজিবিলিটি রিপোর্ট দিতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা লাগে। আমাদের (এফবিসিসিআই) সেই ক্যাপাসিটি হয়নি যে ফিজিবিলিটি রিপোর্ট দেবো।”
তবে দেশে সউদী বিনিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পেছনে তাদের আগ্রহ কমে যাওয়াকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, “স্বাভাবিকভাবে বিনিয়োগ নিয়ে ওদের আসার কথা। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের আগ্রহ থাকতে হয়। একদিক দিয়ে ধাক্কালে খুব বেশি আগানো যায় না।”
এক্ষেত্রে চীনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “চীনের আগ্রহ বেশি বিধায় তারাই বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসছে। কিন্ত সউদী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। বার বার আসার কথা বলেও এখন পর্যন্ত তারা আসেনি। আবার বিনিয়োগ করবে না- তাও বলেনি। আমরা আশা রাখি, তারা প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসবে।”
তবে মাতলুবের বক্তব্য অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময়ে সউদী উদ্যোক্তাদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ্য করা না গেলেও গত বছরটিতে ঠিকই প্রবল আগ্রহ নিয়ে ঘন ঘন বাংলাদেশ সফর শুরু করেছিলেন দেশটির শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
দেশটির বেসরকারি খাতের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান আল রাজি গ্রæপের ভাইস প্রেসিডেন্ট গত অক্টোবরে ঢাকা সফর করে গেছেন। ওই সময় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে সউদী জিসিসি আইটি বøক স্থাপনের জন্য ১০ একর জমি চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) সই হয়েছিল। বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ ও ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যৌথ বিনিয়োগে এমওইউ স্বাক্ষর করেছিল আল-রাজী।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, আল রাজি ও বিসিআইসি যৌথ উদ্যোগে বিদ্যমান ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি সংলগ্ন নিজস্ব জায়গায় ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র সহ বার্ষিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি আধুনিক প্রযুক্তির সিমেন্ট কারখানা স্থাপন করার কথা। এ ছাড়া কর্ণফুলী পেপার মিলস সংলগ্ন কারখানার নিজস্ব জমিতে ৩৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বছরে ৩ লাখ টন উৎপাদনক্ষমতার একটি কাগজ উৎপাদন কারখানা স্থাপন করার কথা ছিল। তবে গত ছয় মাসে এসব প্রকল্পে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না আল রাজী।
দেশটির আরেক বৃহৎ শিল্প গ্রুপ আল জামিলের প্রতিনিধিদল গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ ঘুরে গিয়েছিল। তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছিল নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগে। আধুনিক প্রযুক্তিতে স্টিল কাঠামোর বাড়ি বানানোর জন্য স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করেছিল গ্রুপটি। সই হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল এমওইউ।
এ ছাড়া গত আগস্টে আল বাওয়ানি গ্রুপের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে গিয়েছিল। সফরকালে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এবং সেনাকল্যাণ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। স্বাক্ষর করেছিলেন এমওইউ। এ গ্রুপটিও এখন আর বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
এছাড়া গত ১৮ জানুয়ারি অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও ক্যাবল তৈরির লক্ষ্যে বিএসইসি’র সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করেছিল সউদী আরবের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আল ফানার।
বাংলাদেশে ব্যাপক বিনিয়োগে এতদূর এগিয়েও কেন সউদী উদ্যোক্তারা পিছিয়ে গেলেন- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি দায়িত্বশীল কেউ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, “দেশের বেসরকারি খাতের সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপ দখলে নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে গেছে সউদী উদ্যোক্তারা। কারণ তাদের মনে হয়েছে, এদেশে বিনিয়োগ করলে তা ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। যেকোন সময় কেউ দখল করে নেবে।”
তিনি বলেন, “ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেকের বেশি শেয়ার মধ্যপ্রাচ্যের সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী গ্রুপ ও সংস্থার হাতে। তাদের অর্থায়নেই ব্যাংকটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকায় ছিল সউদী আরবের সর্ববৃহৎ গ্রুপ আল রাজী। তবে গত জানুয়ারিতে বিদেশি মালিকদের না জানিয়েই ব্যাংকটিতে আমুল পরিবর্তনকে ভালোভাবে নেয়নি মধ্যপ্রাচ্যের উদ্যোক্তারা। তাই তারা বিনিয়োগে থেকে পিছিয়ে গেছে।”
জানা গেছে, এই ঘটনার জেরে তারা বিনিয়োগ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারও ছেড়ে দিচ্ছে। সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ইতোমধ্যে সাড়ে ৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একই পথে হাঁটছেন অন্য বিদেশি মালিকরাও। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।