Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে রেকর্ড

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চলতি অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হবে বলে সরকারের তরফে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলতেন, আমাদের জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ কম হচ্ছে, প্রবৃদ্ধিও ৬ শতাংশের ঘরে আটকে আছে। কিন্তু পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। বলা বাহুল্য, গত ৪৬ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কখনই ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়নি। এদিক দিয়ে এটি একটি রেকর্ড। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ এবং সর্ববৃহৎ ৫০ অর্থনীতির মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সর্ববৃহৎ ৫০টি অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে প্রবৃদ্ধির হারে ইরাক ও ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। আর সারা বিশ্বের প্রবৃদ্ধির হারে ইরাক, মায়ানমার, আইভরিকোস্ট, ভারত, লাউসের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। চলতি বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বছর শেষে এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়ালো, যা নিঃসন্দেহে বিরাট অগ্রগতি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির পেছনে যেসব উপাদান কার্যকর ভূমিকা পালন করে সেসব উপাদানে অগ্রগতি না ঘটলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এই সর্বোচ্চ অবস্থানে উপনীত হতে পারে না। বিনিয়োগ, রফতানি আয়, রেমিটেন্স, রাজস্ব আয় ইত্যাদি এই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। লক্ষ্যণীয়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেজন্য এডিপির আকারও বাড়ানো হয়েছে। আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে রাজস্ব আদায়ে। আমদানি-রফতানি ও রেমিটেন্সসহ সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগও বেড়েছে। তিনি জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য কৃষক-শ্রমিকসহ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। আর এই অর্জনের সন্মুখ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অবদানের কথাও স্মরণ করেছেন। আমরা এই কৃতিত্বের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে আকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে রেকর্ড তার প্রমাণ বহন করে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিভিন্ন সময় বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, আইএমএফ তাদের পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলেছে, প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতে, তা ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। আইএমএফ’ও প্রায় একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছে। কিন্তু বিবিএস’র হিসাব অনুযায়ী ওইসব পূর্বাভাস যথাযথ ও সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়নি। এর আগেও আমরা দেখেছি, কথিত সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসের চেয়ে অর্জন সব সময়ই বেশি হয়েছে। শুধু তাই নয়, পর পর দু’ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রাকেও অতিক্রম করে গেছে। গত অর্থ বছরে ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জন দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা দাঁড়াবে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশে। সম্ভাবনা ও সক্ষমতার নিরিখে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশে উন্নীত হওয়া নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। আমাদের দৃঢ় ধারণা, আরও উদ্যম, উদ্যোগ ও প্রয়াসের মধ্য দিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দুই অংকে নিয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, রফতানি আয়, রেমিটেন্স ও রাজস্ব আয় আরো বাড়াতে হবে। দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, বিনিয়োগে মন্দাভাব যেমন আছে, তেমনি রফতানি আয়, রেমিটেন্স ও রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবণতাও লক্ষযোগ্য হয়ে উঠেছে। এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি না ঘটলে আগামীতি জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এটা অবশ্যই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, আগামী বছর অর্থনীতিতে আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কিছু ঝুঁকি রয়েছে। আভ্যন্তরীণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতা, আর্থিক খাতের সংস্কার এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বাহ্যিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অঞ্চলে বাণিজ্যনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কঠোরতা।
যা বাস্তব ও বিদ্যমান তাকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। আগামীতে যেসব ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে বা আন্দাজ-অনুমান করা হচ্ছে তা বিবেচনায় রেখেই আমাদের কর্মপন্থা ও পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের পথে যেসব অন্তরায় রয়েছে বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করার সুচিন্তিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগ সব সময়ই বান্ধব পরিবেশ প্রত্যাশা করে। এই বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিকে সুষ্ঠু ধারায় আনতে হবে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে। জমির অভাব, দীর্ঘসূত্রতা ও সময়ক্ষেপণ, লালফিতার দৌরাত্ম্য, উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ গ্যাস, পানির সংকট ইত্যাদির সমাধান করা না গেলে বিনিয়োগ উজ্জীবিত হবে না। রফতানি আয়, রেমিটেন্স ও রাজস্ব আদায়ে যে নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে, সেটা উদ্বেগজনক। রফতানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ানোর জন্য সরকার ইতোমধ্যেই কিছু উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রয়োজনবোধে এ ক্ষেত্রে আরও উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজস্ব আয়ও বাড়াতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ভ্যাট আইন কার্যকর হলে রাজস্ব আয় বাড়বে। বিশ্বব্যাংক শ্রম বাজারে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সরকারি বিনিয়োগ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান সম্পদের সদ্ব্যবহার হলে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে উল্লেখ করেছে। দুর্নীতি প্রবৃদ্ধির পথে একটি বড় অন্তরায়। দুর্নীতি নিরোধ করতে পারলে কয়েক শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হতে পারে। দুর্নীতি পুরোপুরি বন্ধ করা হয়তো সম্ভব নয়, তবে সহনশীল পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারলে উল্লেখযোগ্য সুফল পাওয়া যাবে। বাহ্যিক যে ঝুঁকি রয়েছে সেই ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তরিক ও কার্যকর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা আশাবাদী, সরকার সতর্ক ও সচেতন থাকলে, আন্তরিক উদ্যোগী ও তৎপর হলে অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা মোটেই অসম্ভব হবে না। জাতীয় উন্নয়ন আকাক্সক্ষা পূরণ করতে সমগ্র জাতিকে একাট্টা হয়ে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।











 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিডিপি

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন